Advertisement
E-Paper

দিলীপের মঞ্চে দুধকুমার, শুরু জল্পনা

দলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির কাছে তিনি ‘শক্তিশালী’ কর্মকর্তা। সেই তিনি-ই আবার ‘শের-দিল’ (সিংহহৃদয়) কর্মকর্তা দলের পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষকের চোখে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৩৯
হাতে হাত। শুক্রবার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সিউড়ির মঞ্চে দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

হাতে হাত। শুক্রবার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সিউড়ির মঞ্চে দুধকুমার মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

দলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির কাছে তিনি ‘শক্তিশালী’ কর্মকর্তা। সেই তিনি-ই আবার ‘শের-দিল’ (সিংহহৃদয়) কর্মকর্তা দলের পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষকের চোখে।

শুক্রবার সিউড়িতে বিজেপি-র প্রতীকী আইন অমান্য কর্মসূচিতে সেই ‘শের-দিল’ নেতাকেই পুরোভাগে দেখে জেলায় শুরু হল নয়া জল্পনা। তিনি, জেলার প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। জল্পনা আরও বাড়াল এত বড় কর্মসূচিতে খোদ জেলা সভাপতি অর্জুন সাহারই অনুপস্থিতি! স্বাভাবিক ভাবেই নিচুতলায় কর্মী-সমর্থকদের মনে প্রশ্ন, তা হলে কি ফের স্বমহিমায় ফিরতে চলেছেন দুধকুমার?

সেই প্রশ্নের জবাব এখনই না মিললেও এ দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে জেলায় ফের ‘চাঙ্গা’ হওয়ার চেষ্টা শুরু করল ‘মিইয়ে’ থাকা বিজেপি। ছিলেন দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, জয়প্রকাশ মজুমদার ও জয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা মতো নেতারা। জড়ো হয়েছিলেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকেরাও। তবে, রাজ্যের অন্যত্রের মতো এখানে তেমন কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি।

“দুধকুমারদা দলেই ছিলেন। হয়তো পদে ছিলেন না। কিন্তু, তাঁর যোগ্যতা,
অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে। সেই জন্যই ওঁকে মঞ্চে ডাকা হয়েছে।
দল দুধকুমারের মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে। পরে কোনও পদও দেওয়া হবে।”
দিলীপ ঘোষ, বিজেপি রাজ্য সভাপতি

বস্তুত, কর্মসূচি সফল করতে নদিয়া থেকে এ দিন বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ সিউড়িতে পৌঁছে যান বিজয়বর্গীয়রা। সিউড়ি সার্কিট হাউসের কাছে একটি বড় মিছিল করে তাঁরা প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন সভামঞ্চে জড়ো হন। শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে প্রথমে শুরু হয় সভা। বিজয়বর্গীরা নিজেদের বক্তব্যে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল সরকারকে। সেখানে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ থেকে সারদা-কাণ্ড, নারী নির্যাতন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ— ছিল সমস্ত প্রসঙ্গই। সভায় বক্তব্য রাখার পরে বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে বিশাল মিছিল জেলা প্রশাসনিক কর্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ব্যারিকেড ভেঙে নেতৃত্ব-সহ কয়েক জন প্রশাসনিক ভবনের চত্বরে ঢুকেও পড়েন। তবে, বাকিদের আটকে দিতে সফল হয় চূড়ান্ত সতর্ক পুলিশ।

দলের সংগঠনের দিক থেকে এ রকম এক গুরুত্বপূর্ণ আবহেই উল্লেখযোগ্য ‘প্রত্যাবর্তন’ দেখা গেল দুধকুমারের। মাঝে বেশ কিছু কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা না গেলেও এ দিন শুধু যোগ দেওয়াই নয়, রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেই হাতে হাত মিলিয়ে একমঞ্চে দেখা গেল এই মুহূর্তে দলে কোনও পদেই না থাকা ওই দাপুটে নেতাকে। তাঁর কর্মদক্ষতার প্রশংসা শোনা গেল খোদ বিজয়বর্গীয় এবং দিলীপ ঘোষের গলায়। মঞ্চে দাঁড়িয়েই বিজয়বর্গীয় দুধকুমারকে বলেন, ‘‘শের-দিল কার্যকর্তা’’। অন্য দিকে, শুধু প্রশংসা করাই নয়, ভবিষ্যতে দুধকুমারকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে, তার একটা ইঙ্গিত দিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুধকুমারদা বিজেপি-তেই ছিলেন। দলের কাজ করছিলেন। হয়তো কোনও পদে ছিলেন না। কিন্তু, তাঁর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে। সেই জন্যই ওঁকে মঞ্চে ডাকা হয়েছে।’’ এমনকী, নয়া বিজেপি রাজ্য সভাপতির আশ্বাস, স্থায়ী ভাবে দল দুধকুমারের মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে। পরে কোনও পদও দেওয়া হবে।

এ দিনের কর্মসূচিতে দুধকুমার ফের স্বমহিমায় দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁর অনুগামীরাও। অথচ মাসখানেক আগেও দলীয় কর্মসূচিতে তাঁকে খুব একটা দেখা যেত না। দলীয় কোনও নেতা দুধকুমারকে দলের কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ করেছেন, এমনটাও শোনা যেত না। এমনকী, গত অগস্টে সিউড়ির যে ধর্না মঞ্চে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ তাঁর সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘দুধকুমার দলের শক্তিশালী কার্যকর্তা’, সেখান থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে জেলা পরিষদে থাকলেও ওই কর্মসূচিতে দেখা যায়নি দুধকুমারকে। রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ তো করেননি, উল্টে রাহুলেরই পদ ছাড়া নিয়ে সওয়াল করেছিলেন দুধকুমার। সেই রাহুলের রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরে গিয়ে সঙ্ঘ নেতা দিলীপ নেতৃত্বে আসায় সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দুধকুমারের রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

এ কথা কার্যত মেনেও নিচ্ছেন দুধকুমার। তাঁর দাবি, ‘‘বীরভূমের মানুষ বিজেপি করতে চেয়েছেন। এখনও চান। কিন্তু, কিছু ভুল নেতৃত্বের জন্য তাঁরা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখন দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি হতেই নতুন উদ্যমে সবাই বিজেপি-তে আসছেন। সেখানে সঙ্ঘ পরিবারের থেকে উঠে আসা কর্মীদের সুবিধাই হয়েছে।’’ দুধকুমার এমন আকস্মিক ‘সুসময়ে’ দলের বর্তমান জেলা সভাপতি কোথায় গেলেন? এ দিনের কর্মসূচিতে কোথায় দেখা মেলেনি অর্জুনবাবুর। কারও বক্তব্য, তাঁর আত্মীয় বিয়োগ হয়েছে। তাই আসতে পারেননি। আবার কারও কারও দাবি, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় অর্জুনবাবুর বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় অভিযোগ থাকায় সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন এই কর্মসূচি। অর্জুনবাবু ফোনে এ দিন অবশ্য আত্মীয় বিয়োগের জন্যই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেননি বলে দাবি করলেন।

তবে, কারণ যাই হোক বিজেপি-র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মুখে কিন্তু বর্তমান সভাপতির নাম এ দিন একবারও উচ্চারিত হতে দেখা যায়নি। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন জেলায় দুধকুমার ঘনিষ্ঠেরা। নতুন পরিস্থিতিতে দুধকুমারের সুবিধা হল বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে জেলায় ওই দাপুটে নেতার নেতৃত্বে বিজেপি-র প্রতি যে জনসমর্থন তৈরি হয়েছিল, তা কি আর ফিরবে? বিজয়বর্গীয়র দাবি, ‘‘অপেক্ষা করুন!’’

dudh kumar mondal BJP loksava election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy