Advertisement
E-Paper

ফোনের ফাঁদে পা দিয়ে পাকড়াও প্রেমিক-চোর

প্রেমে পড়ে কত শত ভরাডুবির ঘটনা ঘটেছে যুগে যুগে। আর এ তো সামান্য মোবাইল চোর! চোরের মন চুরি, তাও আবার পুলিশের হাতে!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০৩:১৯
অঙ্কন: মণীশ মৈত্র

অঙ্কন: মণীশ মৈত্র

প্রেমে পড়ে কত শত ভরাডুবির ঘটনা ঘটেছে যুগে যুগে। আর এ তো সামান্য মোবাইল চোর! চোরের মন চুরি, তাও আবার পুলিশের হাতে!

এতটা যে ঘটতে চলেছে নৈহাটির প্রদীপ দাস তা আঁচই করেনি। অন্যের মোবাইল হাতানো যার বাঁ হাতের খেল, সেই মোবাইলেই নিজের হৃদয় দিয়ে বসেছে সে! ফল, যা হওয়ার তা-ই। স্বপ্নের ‘প্রেমিকা’কে পেতে গিয়ে পুলিশের জালে পা দিয়েছে দাগি মোবাইল চোর। পাঁচ বছর পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার পরে তাকে পোরা গিয়েছে শ্রীঘরে।

পুলিশ সূত্রের খবর, জগদ্দলে পরপর চুরি হচ্ছিল মোবাইল ফোন। স্টেশনের কাছে, শ্যামনগরের বাড়িতে, কাটাডাঙার দোকানে...। চুরি যাওয়া মোবাইল নম্বরগুলি ঘেঁটে ‘সন্দেহজনক’ একটি নম্বরকে অবশেষে নিশানা করে জগদ্দল থানার পুলিশ। তাতেই প্রেমের ফাঁদ পাতা অপারেশনের শুরু।

থানার এক মহিলা কনস্টেবলকে দেওয়া হয়েছিল দায়িত্বটা। দিন দুয়েক আগে রবিবার দুপুরে, প্রদীপের ফোনের রিংটোন বাজতেই সে শুনতে পায় সেই কণ্ঠস্বর।

নারীকণ্ঠ: হ্যালো। একটু প্রদীপকে দাও তো। ও কিছুতেই আমার নম্বর ধরছে না।

(পুলিশ তখনও জানত না, চোরের নাম কী! কিন্তু চোরের মন্দ কপালে আন্দাজে ঢিল ছুড়ে বলা নামটিই লেগে যায়।)

প্রদীপ: আমিই তো প্রদীপ। তুমি কে?

নারীকণ্ঠ: অ্যাই যা! আমি বুঝি আমার প্রদীপের গলা চিনি না!

প্রদীপ: আমি সত্যিই প্রদীপ বলছি।

নারীকণ্ঠ: তা হলে তুমি আমাকে চিনতে পারছো না কেন? না কি রাগ করে কথা বলছো না?

প্রদীপ: তুমি যে প্রদীপকে খুঁজছ, আমি মনে হচ্ছে সেই প্রদীপ নই। আমি অন্য প্রদীপ।

নারীকণ্ঠ: তাই বুঝি। অদ্ভুত দ্যাখো। আমি এক প্রদীপকে ফোন করতে চাইলাম। অন্য এক প্রদীপের কাছে ফোন চলে গেল। আসলে প্রদীপ নামটার সঙ্গে আমার জীবনটা কেমন জড়িয়ে গেছে। যখনই শুনি কারও নাম প্রদীপ, মনটা কেমন করে ওঠে। ...অ্যাই ছাড়ো, বাবা আসছে!

ব্যস! এই কথোপকথনই কানের ভিতর দিয়া একেবারে মরমে পশিল। পুলিশ গুনে দেখেছে, সে-দিন অন্তত বার কুড়ি ওই তরুণী কনস্টেবলকে ফোন করেছিল প্রদীপ। কনস্টেবল প্রতি বারই পরিকল্পনামাফিক কাজ করে চলেন। কখনও ফোন কেটে দেন! কখনও ফোন বেজে যায়। হঠাৎ একবার ফোন তুলে বলেন, ‘‘এখন না, বাবা কাছেই!’’

৩২ পেরোনো প্রদীপ এক কালে সংসারী ছিল। কিন্তু বৌ তাকে ত্যাগ করে যায় কয়েক বছর আগে। নতুন প্রেমের ইশারায় চোর এ বার ভুলে যায় যে সে চোর। নাছোড় প্রেমিকের মতো ফের ফোন করে, ‘এখনই একবারটি আমার সঙ্গে দেখা করো সোনা!’ উত্তর আসে, ‘উ-উ-ফ তুমি না! বাবা জানলে...!’

শেষমেশ ঠিক হয়, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটেয় জগদ্দল স্টেশনের কাছে দেখা হবে দু’জনের। ‘কিন্তু কী করে আমায় চিনবে সোনা?’ ও-পারের নারীকণ্ঠ বলে, ‘কালো প্যান্ট আর সবুজ টি-শার্ট আমার খুব প্রিয়। তোমায় ওই সাজে দেখতে চাই। আর আমার জন্য গোলাপফুল আনতে ভুলো না।’

‘প্রেমিকা’র আবদার অক্ষরে অক্ষরে মানতে ভুল করেনি প্রদীপ। আর তাতেই কাজটা সহজ হয়ে যায়। স্টেশনের বুকিং কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা চোর-কাম-প্রেমিককে পাকড়াও করে সাদা পোশাকের পুলিশ। গ্রেফতারের পর প্রদীপকে জেরা করে তুলে আনা হয় তার দলের আরও তিন সাকরেদকে। সোমবারই তাদের নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে চুরি যাওয়া ৪২টি মোবাইল, দু’টি টিভি, একটি কম্পিউটার উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশের কাছে প্রদীপ তার প্রেমের কথাও স্বীকার করেছে। কিন্তু কেউ তাকে এখনও বলেনি, তার ‘প্রেমিকা’ই আসলে ধরিয়ে দিয়েছে তাকে। প্রদীপ এখনও বলে চলেছে, তাকে দেখতে না-পেয়ে ‘সোনা’র যে কী হল, সেটা যদি জানা যেত! দেড় দিন ধরে নাগাড়ে জেরার সময়ে ফোনে ফাঁদ পাতা তরুণী কনস্টেবলটিও আশপাশে থেকেছেন। প্রদীপ তাঁকে চিনতে পারেনি।

পুলিশকর্মীরা এখন ‘চোর’কে আদর করে ডাকছেন ‘জামাই’! হাজার হোক, চোর হলেও তার তো হৃদয় আছে! জনপ্রিয় গানের কলিই তো বলে, চোর পুলিশের প্রেমে পড়েছে! বাস্তবে তেমন ঘটলে পুলিশই বা তাকে একেবারে ফেলে দেয় কী করে!

Phone Police Thief Arrested Conversation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy