Advertisement
E-Paper

অভাবের সঙ্গে লড়ছেন আজিজুলের বাবা-মা

জঙ্গি-হানায় আগেও প্রাণ গিয়েছে এ রাজ্যের জওয়ানদের। কেমন আছে তাঁদের পরিবার?সংসারে নিত্যদিনের খরচ রয়েছে। অসুস্থ স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা-খরচও অনেক। দু’বছর আগে তবু ছেলে ছিল। কিন্তু জঙ্গিদের গুলি তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০০
পুত্রহারা: ছেলে আজিজুলের ছবি হাতে আশরফ। নিজস্ব চিত্র

পুত্রহারা: ছেলে আজিজুলের ছবি হাতে আশরফ। নিজস্ব চিত্র

উপার্জন বলতে গরুর দুধ বিক্রি আর লিজে দেওয়া পাঁচ বিঘা জমির আয়।

সংসারে নিত্যদিনের খরচ রয়েছে। অসুস্থ স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা-খরচও অনেক। দু’বছর আগে তবু ছেলে ছিল। কিন্তু জঙ্গিদের গুলি তাঁকে বাঁচতে দেয়নি। কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দিলেও অভাব মেটেনি। কিন্তু অভাবের সঙ্গে প্রতিদিনের ‘যুদ্ধে’ নেমেও হাজি আশরফ আলি মোল্লা বলছেন, ‘‘আর এক ছেলে থাকলে তাঁকেও জঙ্গিদের ঠেকাতে সেনাবাহিনীতে পাঠাতাম। বন্দুক পেলে আমার নিজেরই এখন সীমান্তে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।’’

বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামে আশরফের বাড়ির সামনের রাস্তাটা তাঁর নিহত ছেলে আজিজুল মোল্লার নামে হয়েছে। হয়েছে ‘শহিদ-বেদি’ও। এ ছাড়া রাজ্য সরকারের থেকে আর কোনও সাহায্য না-মিললেও ক্ষোভ নেই ষাটোর্ধ্ব আশরফের। এক মাত্র ছেলে দেশের কাজ করতে গিয়ে মারা গিয়েছে, এই গর্ব নিয়েই দিন কাটে বৃদ্ধের। কারণ, আজিজুলের জন্মের পর থেকেই আশরফ স্বপ্ন দেখতেন ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশবাসীকে রক্ষা করবে।

টানা ১২ বছর সেই কাজই করেছিলেন আজিজুল। ২০০৪ সালে একসঙ্গে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছিলেন। বেছে নেন দ্বিতীয় চাকরিটাই। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৬ অগস্ট রাতে কাশ্মীরের বারামুলা সীমান্তে পাহারা দেওয়ার সময়ে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তিনি। ছেলের অকালমৃত্যুতে তার পর থেকেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আক্রোশ বুকে চেপে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা। পুলওয়ামা-কাণ্ডে সিআরপি জওয়ানদের মৃত্যুর কথা জানার পর থেকে আর স্থির থাকতে পারছেন না। আশরফ বলেন, ‘‘খবরটা জানার পর থেকেই রক্ত গরম হয়ে উঠছে।’’ অবশ্য একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, ‘‘হিংসা দিয়ে কখনও হিংসা জয় করা যায় না। এ জন্য চাই দেশের মানুষের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে প্রতিবাদে নামা।’’

বিয়ে করেছিলেন আজিজুল। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। আজিজুলের মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী তুহিনা ছেলেমেয়েদের নিয়ে জাফরপুর গ্রামে বাপের বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার স্বামীর মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তার একাংশ শ্বশুর-শাশুড়িকে দিয়েছি। জানি ওঁরা খুবই অভাবের মধ্যে আছেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসেন না। স্বামী তো দেশের জন্যই প্রাণ দিয়েছেন। আমাকে তো ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হবে।’’

আশরফ শক্ত থাকলেও স্ত্রী আফুরা একমাত্র ছেলেকে হারানোর পর থেকে আরও ভেঙে পড়েন। এখনও মাঝেমধ্যে ছেলের ছবি আঁকড়ে কাঁদেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জঙ্গিদের পেলে জিজ্ঞাসা করতাম, কেন তারা কেবল মায়ের কোল খালি করে?’’

Indian Army Family Poverty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy