Advertisement
E-Paper

মাস্ক-লজেন্স মেলে, স্বাগতার পাঠশালায় খুদে থেকে স্কুলছুট

বাঘনাপাড়ার মুক্তারপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতার বাড়ি কালনা শহরে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য 

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৪
দিদিমণি: কালনায় গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন স্বাগতা কর্মকার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

দিদিমণি: কালনায় গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছেন স্বাগতা কর্মকার। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

করোনার জন্য স্কুল বন্ধ। বাড়িতে থেকে নিজে যেমন হাঁফিয়ে উঠছিলেন, তেমনই এলাকার দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার বাইরে থাকতে দেখে কষ্ট হত। ভেবে-চিন্তে গাছতলায় পাঠশালা খুলেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার শিক্ষিকা স্বাগতা কর্মকার। বিস্কুট, লজেন্স থেকে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার-পেন্সিল—পড়ুয়াদের মধ্যে বিলি করছেন এ সবও। কচিকাঁচাদের পাশাপাশি, তাঁর ক্লাসে হাজির হচ্ছেন এলাকার কিছু স্কুলছুট থেকে শুরু করে পড়াশোনা না জানা মহিলা।

বাঘনাপাড়ার মুক্তারপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতার বাড়ি কালনা শহরে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে, একাই থাকেন। তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জিউধারা তালতলা এলাকায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাস। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সেখানে গিয়ে স্বাগতা ছোটদের পড়ানোর প্রস্তাব দেন। জানান, ক্লাস করলে মিলবে বিস্কুট-লজেন্স। তার পর থেকে এক বটগাছের তলায় সপ্তাহে দিন চারেক বসছে পড়ার আসর।

ইতিহাসে স্নাতকোত্তর স্বাগতা জানান, পড়াতে যাওয়ার আগে কোনও দিন বিস্কুট, কোনও দিন লজেন্স, পেন্সিল বা মাস্ক কেনেন। সে জন্য নিজের পকেট থেকে দৈনিক পাঁচশো টাকা করে বরাদ্দ রাখছেন। উপহার পেয়ে উৎসাহ বাড়ছে পড়ুয়াদেরও। ক্রমে তাদের সংখ্যা বেড়ে এখন পৌঁছেছে জনা পঞ্চাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রাথমিকের নানা বিষয় পড়ানোর পাশাপাশি, করোনা সম্পর্কে সচেতনতা, নানা মণীষীর কথা আলোচনা করেন স্বাগতা।

কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সুমন্ত রায় বলে, ‘‘অনেক দিন স্কুলে যাইনি। গ্রামের গাছতলায় স্বাগতা দিদিমণি যখন পড়ান, মনে হয় স্কুলেই রয়েছি।’’ প্রাথমিক স্কুলে কিছু দিন যাওয়ার পরে, পড়া ছেড়ে দিয়েছিল বছর তেরোর সুমি দাস। তার কথায়, ‘‘দিদিমণির ক্লাসে এলে লজেন্স, বিস্কুট পাই। এখন পড়তেও পারছি। ভাল লাগছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা বৈশাখি বৈরাগ্য, সাবিত্রী বারুইয়েরা জানান, আগে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। দিদিমণির ‘পাঠাশালা’তেই নাম সই করা শিখেছেন।

বছর পঁয়ত্রিশের স্বাগতাদেবী বলছেন, ‘‘নিজের স্কুল বন্ধ। টানা ছাত্রছাত্রীদের ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়। স্কুল না খোলায় সব পড়ুয়াই কষ্টে রয়েছে বলে মনে করি। তাই এখানে এসে পড়াচ্ছি।’’ তিনি জানান, সবাইকে দূরত্ব-বিধি মেনে বসানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু খুদেরা সব সময় তা মানছে না। তবে তাদের মুখে যাতে মাস্ক থাকে, তা খেয়াল রাখার চেষ্টা করছেন। কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘স্বাগতাদেবীর এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’

School Kalna Coronavirus in West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy