E-Paper

স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ১ জন, অবসরের আট বছর পরেও রোজ স্কুলে যান স্বপ্না দিদিমণি

১৯৮৯ সালে ইংরেজবাজারের যদুপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন স্বপ্না। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে কমলাবাড়ি হাইস্কুল থেকেই অবসর নেন।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ০৭:১৩
Kamalabari High School

কমলাবাড়ি হাইস্কুলে এখনও পড়াতে আসেন স্বপ্না ঘোষ রায় দাস। ছবি: সংগৃহীত।

সরকারি ভাবে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। তবে পডুয়াদের টান কাটাতে পারেননি। তাই মালদহের স্বপ্না ঘোষ রায় দাস এখনও ঘড়ির কাঁটা ধরে পৌঁছন জেলার কমলাবাড়ি হাইস্কুলে। পড়ুয়াদের বুঝিয়ে দেন বীজগণিত, পাটিগণিত, জ্যামিতি। অবসরের আট বছর পরেও। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষক কম থাকায় স্বপ্নাকে ‘অতিথি শিক্ষক’ হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছিল। তিনি রাজি হন। কিন্তু পড়াচ্ছেন বিনা পারিশ্রমিকে। তাঁর মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, অভিভাবকেরা, এমনকি, প্রশাসনও। মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) শম্পা হাজরার কথায়, ‘‘ওঁর ভাবনাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’

বালুরঘাট গার্লস হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন স্বপ্না। বালুরঘাট কলেজ থেকে বিজ্ঞানেই স্নাতক হন। ১৯৯৮ সালে ইংরেজবাজারের পীযূষ দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়। স্নাতকোত্তরে পড়ার আগে, ১৯৮৯ সালে ইংরেজবাজারের যদুপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি হাইস্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন স্বপ্না। ২০১৫-র ফেব্রুয়ারিতে কমলাবাড়ি হাইস্কুল থেকেই অবসর নেন।

প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান জানান, স্কুলে এক হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১৩ জন। শিক্ষকের অভাবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুল উন্নীত হয়নি। স্বপ্না অবসরে স্কুলে অঙ্কের শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় এক জনে। তাই স্বপ্নাকে অতিথি শিক্ষক হওয়ার আর্জি জানানো হয়। প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্বপ্নাদেবী এক কথায় রাজি হন। পারিশ্রমিক নেবেন না বলে দেন। শত অনুরোধেও ওঁকে টলানো যায়নি। ওঁকে প্রণাম জানাই।”

এখন সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অঙ্ক শেখান স্বপ্না। ভৌত বিজ্ঞান, পরিবেশ বিদ্যারও ক্লাস নেন। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নাজিমা খাতুনের কথায়, ‘‘দিদিমণি গল্পের ছলে পড়া বোঝান। অঙ্কও সহজ ভাবে করান। ওঁর ক্লাস ভাল লাগে।’’ প্রাক্তন ছাত্র উজ্জ্বল মণ্ডলের শংসাপত্র, “স্বপ্না দিদিমণি ছেলের মতো স্নেহ করতেন।’’

স্বামী-স্ত্রীর সংসার। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্ত্রীর জীবনের ‘অনেকটা জুড়ে আছে’ মানেন স্বপ্নার স্বামী পীযূষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুল ওর কাছে দ্বিতীয় বাড়ি।” এক অভিভাবক অনুরাধা চৌধুরী বলেন, “এখনও স্বপ্না দিদিমণিদের মতো শিক্ষকেরা আছেন বলে সমাজ আছে।” স্বপ্না অবশ্য বলছেন, ‘‘অবসর নিয়েছি সরকারি নিয়মে। তবে সন্তানের মতো স্কুলের ছেলেমেয়েদের ছেড়ে যেতে পারিনি। ওদের জন্যই স্কুলে যাওয়া। ওদের কিছু শেখাতে পারলে, আমারই আনন্দ।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Teacher Malda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy