এ বছর মরসুমের গোড়াতেই বারবার হোঁচট খেয়েছে উত্তুরে হাওয়া। ভরা ডিসেম্বরেও শীত-শীত ভাবটা উধাও হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। এমনকী, এ বছরের বড়দিনও ছিল গত এক দশকের মধ্যে উষ্ণতম। শেষমেশ ডিসেম্বরের শেষে এসে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে থিতু হয়েছে সে। গত কয়েক দিন ধরে হাড় না কাঁপলেও শীতটা মালুম হচ্ছে মহানগরে। বুধবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। যদিও স্বাভাবিক তাপমাত্রার থেকে এই সামান্য ওঠা-পড়ায় শীত ঝিমিয়ে পড়েনি। বীরভূম, বাঁকুড়ায় কড়া শীত রয়েছে। শৈত্যপ্রবাহ চলেছে কৃষ্ণনগরেও।
এ দিন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘বছরের শেষে এসে শীতের পক্ষে প্রতিকূল পরিস্থিতি নেই। তাই বৃহস্পতিবারও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকবে।’’
আবহবিদদের অনেকে অবশ্য বলছেন, শীত এ বার বড়ই খামখেয়ালি আচরণ করছে। তার জন্য দায়ী করা হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা এল নিনো পরিস্থিতিকে। কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়ায় প্রভাব ফেলেছে। তার ফলে বিগড়ে গিয়েছে ফিরতি পথের মৌসুমি বায়ুর চরিত্র। শীতেও সাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। এবং তা উত্তুরে হাওয়ার সামনে পাঁচিল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে।
আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ঠান্ডা হাওয়া বা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে আছড়ে পড়ে। তার জেরে সেখানে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়। সেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে আসে এ রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব ভারতের দিকেও। এই পর্যায়ে যদি সাগরে কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি হয়, তা হলে তা উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা তৈরি করে। শুধু তা-ই নয়, সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকার ফলে আকাশে মেঘ তৈরি হয়, দিনের তাপমাত্রা কমলেও রাতের তাপমাত্রা নামতে পারে না। অথচ, রাতে কনকনে শীত পড়তে গেলে মেঘমুক্ত আকাশ থাকতে হবে।
চড়া রোদে দিনেরবেলা মাটি গরম হওয়াও জরুরি।
হাওয়া অফিসের একটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণাবর্ত থাকার ফলে বছরের শেষ দু’দিনেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। ফলে বুধবারের মতো বছরের শেষ দিনটিতেও আকাশে অল্পবিস্তর
মেঘ জমতে পারে। নতুন বছরের প্রথম ভোরে চারদিক ঢেকে যেতে পারে কুয়াশাতেও।
প্রশ্ন উঠেছে, নতুন বছরে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে শীত?
উপগ্রহ-চিত্রে চোখ রেখে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে হাওয়া অফিসও।