মনে হচ্ছে মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে... এ বার একটু ঘুমোতে চাই— মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে তাইহোকুর নানমোন মিলিটারি হাসপাতালে শুয়ে চিকিৎসককে এই কথাটাই বার বার বলছিলেন তিনি। তৈরিই ছিল ইঞ্জেকশন। মুহূর্তের মধ্যেই ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। তবে সেই রাতটা আর পেরোয়নি। ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট রাত ১১টা নাগাদ সেখানেই মারা যান তিনি। ঘুম আর ভাঙেনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। নেতাজি-অন্তর্ধান রহস্য আরও এক বার উস্কে দিয়ে আজ এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ একটি ওয়েবসাইট। তাদের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী এবং ঘনিষ্ঠদের বয়ানে পাওয়া তথ্যে অন্তর্ধান রহস্যের জট খুলেছে।
ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ. নেতাজিফাইলস.ইনফো নামে ওই ওয়েবসাইট জানিয়েছে, লন্ডনের এক সাংবাদিকের হাতে আসা এই তথ্য প্রকাশ করেছে তারা। সেখানে উদ্ধৃত পাঁচ সাক্ষীর মধ্যে রয়েছেন দুই চিকিৎসক, এক দোভাষী এবং এক নার্স। চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন তানেওয়েসি যোশিমি। যিনি ১৯৪৫ সালে নেতাজির চিকিৎসা করেছিলেন বলে আগেও দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নোনোমিয়া নামে এক সেনাকর্তা আমাকে বলেছিলেন ইনিই মিস্টার বোস। যে কোনও মূল্যে ওঁর প্রাণ বাঁচাতে হবে।’’ কিন্তু ক্রমশ নেতাজির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
যোশিমি জানিয়েছেন, বসুর জন্য আনা হয়েছিল এক দোভাষীকে। সুরুতা নামে হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক জানান, নেতাজি জিজ্ঞেস করেছিলেন, সারা রাত সুরুতা তাঁর পাশে বসে থাকবেন কি না। কিন্তু সন্ধের পর বসুর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। ওই সাইটে উদ্ধৃত হয়েছেন সান পি সা নামে এক নার্সও। তাঁর কথায়, ‘‘প্রমাণ করতে পারি, উনি এখানেই মারা গিয়েছেন।’’ এই তথ্য সামনে আসায় ফের শুরু হয়েছে বিশ্বাস আর ইতিহাসের দ্বন্দ্ব। গত কালই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাইহোকুতে নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্ব মানেন না তিনি।
ইতিহাসবিদ থেকে নেতাজির পরিবার— মৃত্যুরহস্য নিয়ে মতভেদ রয়েছে সব মহলেই। নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্র ইতিহাসবিদ সুগত বসু যদিও মনে করেন, তাইহোকুতেই মারা গিয়েছিলেন নেতাজি। যদিও কয়েক জন ইতিহাসবিদ মনে করেন, তাইহোকুতে নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্ব সত্যি হলে অধরা থেকে যায় বেশ কিছু প্রশ্ন। আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশ করার কথা মোদী সরকারের। তার আগেই ব্রিটিশ সাইটের এই দাবি ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। সুগতবাবু আগেই বলেছেন, ইতিহাস শুধু প্রমাণ নিয়ে কথা বলে। এ বার সেই প্রমাণই পেশ করল ব্রিটিশ সাইট।
তবে কী যবনিকা পড়ল? সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy