Advertisement
E-Paper

তৃণমূলের ধমকেই কি উল্টো সুর সুশান্তর

শনিবার বিকেলে কলকাতা পুরভোট মেটার পরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আইডিয়াল পরিবেশে নির্বাচন হয়নি। তা হলে এত অভিযোগ আসত না।’’ আর রবিবার সেই তিনিই বললেন, ‘‘আইডিয়াল পরিবেশ ছিল তা-ও বলছি না, ছিল না, তা-ও বলছি না।’’ শনিবার জানিয়েছিলেন, দুপুর ৩টে পর্যন্ত বিরোধীদের থেকে প্রায় ৭০টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। রবিবার বললেন, ‘‘ভোটের দিন ৪টে পর্যন্ত কোনও বড় অশান্তির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ ভাবেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। যা দেখে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, শাসক দলের ধমক খেয়েই এখন সুর বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৯

শনিবার বিকেলে কলকাতা পুরভোট মেটার পরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আইডিয়াল পরিবেশে নির্বাচন হয়নি। তা হলে এত অভিযোগ আসত না।’’

আর রবিবার সেই তিনিই বললেন, ‘‘আইডিয়াল পরিবেশ ছিল তা-ও বলছি না, ছিল না, তা-ও বলছি না।’’

শনিবার জানিয়েছিলেন, দুপুর ৩টে পর্যন্ত বিরোধীদের থেকে প্রায় ৭০টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

রবিবার বললেন, ‘‘ভোটের দিন ৪টে পর্যন্ত কোনও বড় অশান্তির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’’

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ ভাবেই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। যা দেখে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, শাসক দলের ধমক খেয়েই এখন সুর বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। কারণ, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অথচ সুশান্তবাবু সংবাদমাধ্যমে উল্টো কথা বলায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় শাসক দল। বস্তুত, তৃণমূলের শাসক দলের এই মনোভাব ধরা পড়েছে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘ভোট তো নির্বিঘ্নেই হয়েছে। তা হলে উনি ওই ধরনের মন্তব্য কেন করেছেন? সুশান্তবাবু এর আগে তো ভোট করাননি। তাই, কী বলতে হবে, তা হয়তো গুলিয়ে ফেলেছেন!’’ এক ধাপ উপরে উঠে শাসক দলের এক প্রথম সারির নেতা বলেছেন, ‘‘উনি এক জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক মাত্র। ওঁর কোনও নীতি-নৈতিকতা বা এই ধরনের পদে কাজ করতে যে ব্যক্তিত্ব দরকার, তা নেই।’’

বস্তুত, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে সুশান্তবাবুকে যখন মনোনীত করেছিল রাজ্য সরকার, তখন অনেকটা এই কথাই বলেছিলেন বিরোধীদের অনেকে। সুশান্তবাবুর পূর্বসূরি মীরা পাণ্ডের সঙ্গে রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আইএএস মীরাদেবীকে নিয়ে যথেষ্ট ভুগতে হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। তাই তিনি অবসর নেওয়ার পরে ডব্লিউবিসিএস সুশান্তবাবুকে এনে কমিশনারের পদ মর্যাদা লঘু করতে চেয়েছে সরকার— এই অভিযোগ সব বিরোধীরই। শনিবার মহানগরের ভোটে শাসক দলের সন্ত্রাসের পরে এই অভিযোগ ফিরে এসেছে অনেকের মুখেই।

কালকের ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বুথ থেকে পোলিং এজেন্ট-সহ ভোটারদের বার করে দেওয়া থেকে শুরু করে ছাপ্পা, ইভিএমে বোতাম টিপে ভোট দিয়ে দেওয়ার মতো গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। এর সঙ্গে সারা দিন নিস্ক্রিয় থেকে শেষ বেলায় পুলিশ গুলি খেয়ে যাওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। এর পরেও কি এই ভোটকে শান্তিপূর্ণ বলা হবে? এর উত্তর এড়িয়ে এ দিন সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘চারটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েটি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে। মূলত ভোট দেওয়া না দেওয়া নিয়েই ওই সব অভিযোগ।’’ তিনি আরও জানান, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে এক দিনের মধ্যে রিপোর্টও তলব করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বোঝা যাবে কলকাতার কোথাও পুনর্নির্বাচন হবে কি না।

সুশান্তের এই ভোলবদল নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘ওঁর তো মেরুদণ্ড নেই। উনি বাংলার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’’ মানস ভুঁইয়ারও বক্তব্য, ‘‘সুশান্তবাবু ভুলে গিয়েছেন যে, উনি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ওঁর পদটি যে ভারতের নির্বাচন কমিশনারের সমতুল।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও বলেন, ‘‘উনি তৃণমূলের ধমক খেয়ে মত বদলেছেন।’’ সিপিএমের নতুন পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘আমাদের রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন থেকে নির্বাচন কমিশন, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানই গুরুত্ব হারিয়েছে। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, হয় তাঁরা সরকারের ধমক খেয়েছেন বা নিমক খেয়েছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ওঁরা কি মেরুদণ্ডটা কালীঘাটে জমা দিয়ে এসেছেন?’’

তৃণমূলের অন্দরে অবশ্য আর একটি কথাও শোনা যাচ্ছে। সুশান্তবাবুর সঙ্গে দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এখন মুকুলবাবু পদচ্যুত। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ভাল নয়। এই অবস্থায় সুশান্তবাবুর এমন উল্টো সুরে আরও চটেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এর পরেই তাঁর মত বদল এবং তাই নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ।

বিরোধীরা এ দিন পুলিশকেও নিশানা করেছে। শনিবারের ভোটে পুলিশের যে ভূমিকা দেখা গিয়েছে, তাতে আগামী ২৫ এপ্রিল জেলাগুলিতে সুস্থ ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। জেলার পুলিশকর্তারাই এ ব্যাপারে এখন সন্দিহান। তাঁরাই বলতে শুরু করেছেন, যাই বলুক না কেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী না এলে ভোট অবাধ হবে না এটা স্পষ্ট। তবে সুশান্তবাবু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নতুন করে আর কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে না।

কিন্তু কলকাতা পুরসভার ভোট দেখেই তো তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন বিরোধীরা। সুশান্তবাবুর জবাব, ‘‘আমি কী বলব! আমি তো আর এর তদন্ত করতে পারি না!’’

tmc threats state election commissioner sushanta ranjan upadhyay sushanta u turns kmc election 2015 kmc poll violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy