চুরির অপবাদে কারখানায় নাবালককে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় মুম্বইয়ের উপকণ্ঠ থেকে মূল অভিযুক্ত তিন জনকে ধরল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রবীন্দ্রনগর থানা এবং ডায়মন্ড হারবার পুলিশ-জেলার ‘স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ’ যৌথ ভাবে অভিযান চালায়। মোবাইল টাওয়ারের সূত্র ধরে কল্যাণ স্টেশন থেকে কারখানার মালিক শামসের আলম ওরফে শাহেনশা, ফিরোজ আলম ওরফে ফিরাজ, আমিরুল মহম্মদ ওরফে আশিককে ধরা হয়। তবে এখনও খোঁজ নেই উত্তর দিনাজপুরের নির্যাতিত নাবালকের।
পরিবারের অভাব মেটাতে মাস দেড়েক আগে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের ছঘরিয়া এলাকার ওই নাবালক ও তার নাবালক দাদা ওই কারখানায় কাজ করতে গিয়েছিল। গত সপ্তাহে মোবাইল চুরির অপবাদে বছর চোদ্দোর কিশোরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তদন্তকারীরা জানান, তিন জনের ফোনেই নজর রাখা হয়েছিল। তিন জনই ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। এক জন পাঁচ মিনিটের জন্য মোবাইল ফোন খুলে এক ঘনিষ্ঠের সঙ্গে কথা বলে। তা থেকে জানা যায়, তিন জনে নাগপুর থেকে মুম্বই যাচ্ছে। এর পরে কলকাতা থেকে বিমানে তদন্তকারী দল রওনা দিয়েছিল। ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এক কর্তা জানান, ট্রেন থেকে নামার সময় কল্যাণ স্টেশনে তিন জনকে ধরা হয়। ধৃতদের মুম্বই থেকে ‘ট্রানজ়িট রিমান্ড’-এ কলকাতায় আনা হচ্ছে। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন ধরা পড়ল।
মূল অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখছে নিখোঁজ নাবালকের পরিবার। তবে ছেলের কী হল, সে আশঙ্কাও রয়েছে তাদের। নাবালকের বাবা বলেন, ‘‘তেমন দোষ না করে থাকলে, ওরা মুম্বই পালাতে যাবে কেন?’’ তদন্তকারীদের দাবি, মারধরের পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই নাবালক। এলাকার সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। আশেপাশের সমস্ত পুকুর, খাল, নিকাশি নালাতে খোঁজ করা হয়েছে। ইসলামপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেন্ডুপ শেরপা বলেন, ‘‘ওই নাবালকের খোঁজ মেলেনি। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছি।’’ প্রাথমিক ভাবে তিন অভিযুক্তকে জেরায় কিছু তথ্য মিলেছে বলে জানান ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার কর্তারা। তাঁরা জানান, মারধরের পরে বালকটি পালিয়ে যায় বলে তাদের কাছে দাবি করেছে ধৃতেরা। নিখোঁজ নাবালকের দাদা তাদের কাছে ছিল। পরে তাকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বুধবার রাতে নাবালকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি, ওই নাবালককে উদ্ধার করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)