Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মোয়া-মাদকে রক্ষীদের ঘুম পাড়িয়ে উধাও ৩ বাংলাদেশি

মোয়া তো পলায়নী প্রস্তুতির মাত্র একটি অঙ্গ। গরাদ কাটা, পাঁচিল টপকানোর জন্য চাদর— সব কিছুর আয়োজন করেই কষা হয়েছিল পালানোর ছক।

তিনমূর্তি: (বাঁ দিক থেকে) ফিরদৌস, ইমন ও ফারুক।

তিনমূর্তি: (বাঁ দিক থেকে) ফিরদৌস, ইমন ও ফারুক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

ছেলের হাতের মোয়া বেশ সহজ জিনিস হতে পারে। কিন্তু কয়েদির হাতের মোয়া? সে যে কী বস্তু, টের পাচ্ছেন আলিপুর জেলের রক্ষীরা।

বাড়ি থেকে আসা মোয়া সহবন্দি আর কারারক্ষীদের খাইয়েছিল ফারুক, রানারা। মজা করেই সেগুলো খেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু সেই মোয়ার ভিতরে ফারুকেরা যে এমন ফাঁদ লুকিয়ে রেখেছে, সহবন্দি এবং কারারক্ষীরা সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। কারা দফতরের প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, মোয়ায় মাদক মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মাদকের প্রভাবে রাতে গভীর ঘুমে ডুবে যান সহবন্দি ও রক্ষীরা। ফারুক, ইমনেরা চম্পট দেয় সেই সুযোগেই।

মোয়া তো পলায়নী প্রস্তুতির মাত্র একটি অঙ্গ। গরাদ কাটা, পাঁচিল টপকানোর জন্য চাদর— সব কিছুর আয়োজন করেই কষা হয়েছিল পালানোর ছক। সর্বোপরি বেশ কিছু দিন ধরে হ্যাক্সো-ব্লেড দিয়ে অল্প অল্প করে কাটা হচ্ছিল গরাদ! আদৌ টের পাননি রক্ষীরা। ছক অনুযায়ী রবিবার কাকভোরে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের প্রায় ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালায় তিন বিচারাধীন বাংলাদেশি।

পুলিশ জানায়, পলাতকদের নাম মহম্মদ ফারুক হাওলাদার ওরফে ফারুক, ইমন চৌধুরী ওরফে রণয় রায় এবং ফিরদৌস শেখ ওরফে রানা। ফারুক ২০১৩ সালে অস্ত্র আইন ও ডাকাতির মামলা ধরা পড়েছিল। ইমন ২০১৪ সালে অপহরণের মামলা এবং ফিরদৌস বিদেশি অনুপ্রবেশ আইন ও ডাকাতির মামলার আসামি। পুরো ঘটনার সবিস্তার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি (কারা) অরুণকুমার গুপ্ত। রামনারায়ণ সিংহ, তরুণ চক্রবর্তী ও বিপ্লব মণ্ডল নামে তিন রক্ষীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন জেলের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন। অন্য দু’জন ছিলেন পাঁচিল ও গরাদে নজর রাখার দায়িত্বে।

আলিপুর জেল সূত্রের খবর, ভোরে লক-আপ খোলার সময়ে গুনতিতেই তিন আসামির গরহাজিরা ধরা পড়ে। খোঁজ করতে গিয়ে জেলের আদিগঙ্গার দিকের পাঁচিল টপকে পালানোর চিহ্ন দেখা যায়। ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে খবর আসে, তিন বন্দি গরাদ ভেঙে পালিয়েছে। কারাকর্তাদের সন্দেহ, শনিবার রাতে গরাদ কাটা শেষ হতেই চম্পট দেয় বন্দিরা। সঙ্গে ছিল ছোট মই, বিছানার চাদর, জেলে সদ্য বিতরণ করা শাল।

পুলিশ ও কারাকর্তাদের একাংশ জানান, ভোরে ওয়ার্ড সংলগ্ন ফাঁকা এলাকা কুয়াশায় ঢাকা থাকে। প্রবল শীতে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন রক্ষীরা। সেই সুযোগে মই দিয়ে খানিকটা উঠে গাছের ডাল ধরে পাঁচিলের মাথায় পৌঁছে যায় ফারুকেরা। বিছানার চাদর ও শাল দড়ির মতো বেঁধে তা বেয়ে নেমে পালায় তিন বন্দি। তার আগে কয়েক বার তারা ওখানে ‘রেইকি’ করেছে বলেই তদন্তকারীদের অনুমান। এই পুরো পলায়ন পর্ব কী ভাবে কারারক্ষী এবং পুলিশের চোখ এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে কর্তারা ধন্দে।

বন্দি পলায়নের খবর পেয়ে পুলিশ ও কারা অফিসারেরা চলে আসেন। পুলিশ-কুকুর নিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে ছ’নম্বর ওয়াচ টাওয়ারের কাছাকাছি যে-সব পুলিশকর্মী কর্তব্যরত ছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সকালে গিয়ে দেখা যায়, জেলের ডান দিকের পাঁচিলের বাইরের অংশে লম্বা দাগ। চাদর-দড়ি বেয়ে ওখান দিয়েই চম্পট দেয় তিন বন্দি। পাশেই আদিগঙ্গা। পাঁচিলের বাইরে পেয়ারা গাছের ভাঙা ডাল, লোহার রড, বাঁশ, ছেঁড়া কাপড় পাওয়া গিয়েছে। পালানোর সময়ে বন্দিরা এগুলোই ব্যবহার করেছিল বলে জানায় পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE