মারধরে জখমেরা। রাধানগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
হোগলবেড়িয়ার পর এ বার খাস কৃষ্ণনগর শহর। নাতনিদের সভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে শনিবার পাড়ারই দুই যুবকের হাতে খুন হন হোগবেড়িয়ার এক বৃদ্ধ। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার খেল এক স্কুল-ছাত্রীর পরিবারের লোকজন। শনিবার রাতে খাস কৃষ্ণনগর পুর এলাকার ঘটনা। পাড়ারই কয়েকজন মদ্যপ যুবকের লালসার হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন বাবা-মা। বাদ গেল না বাড়ির বছর তিনেকের শিশুও।
রাধানগর এলাকার গলিতে নেশা করে কয়েকজন যুবক নিয়মিত মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন বাবা। আর তাতেই চটে যায় ওই যুবকেরা। তাই ‘উচিৎ শিক্ষা’ দিতে তরুণীর বাবা-মাকে মারধর করল মদ্যপেরা। এ দিন রাতে জনা পনেরো যুবক ওই তরুণীর বাড়িতে ঢোকে। অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে তারা। আধলা ইট ছুড়তে থাকে ওই তরুণীর বাড়িতে। ইটের ঘায়ে বাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্য, বছর তিনেকের এক শিশুর মাথা ফেটে যায়। ইটের ঘায়ে জখম হন তিন মহিলাও। জখমদের তড়িঘরি শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শিশুটির মাথায় দু’টি সেলাই হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মূল অভিযুক্ত মান্টা কুন্ডু নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার শিশ রাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’
রাধানগরের আদি বারোয়ারিপাড়া দীর্ঘদিন ধরে নেশাখোরদের নিরাপদ আশ্রয়। নেশার আসরে জড়ো হয় এলাকার যুবকদের একাংশ। তাদের সঙ্গ দিতে আসে শহরের অন্য পাড়ারও কয়েকজন। এলাকার এক বাসিন্দা জানালেন, স্কুল ছুট ওই যুবকদের দিনভর এলাকায় হরেক হরেক নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। তারা কাউকে পরোয়া করে না। অনেক সময় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরে তারা। সেই ভয়ে এলাকার লোকজন তাদের দেখেও না দেখার ভান করেন। পাছে আক্রান্ত হন। অভিযোগ, ওই যুবকেরা স্কুল-ছাত্রীদের দিনে-দুপুরে নানা কটূ কথা বলে।
দিনকয়েক আগে মান্টা কুন্ডু নামে কলোনিপাড়ার ওই যুবক দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে লাগাতার উত্ত্যক্ত করতে থাকে। রাস্তার বেরোলেই ওই ছাত্রীকে মান্টা উত্ত্যক্ত করত। ওই পড়ুয়া একাধিকবার এ বিষয়ে প্রতিবাদও করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তাতে মান্টা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। শেষমেশ ওই ছাত্রী পুরো বিষয়টি তার বাবাকে বলে। মেয়েটির বাবা মান্টাকে ডেকে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে বারণ করেন। সেই সময় দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখনই মান্টা ও তার দলবল ওই পড়ুয়ার বাড়িতে চ়ড়াও হওয়ার পরিকল্পনা ভাঁজে।
এ দিন রাত ১১টা নাগাদ মান্টা তার এক বন্ধুকে নিয়ে ওই ছাত্রীর বাড়িতে ঢোকে। সে সোজাসুজি ছাত্রীটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তারপরই শুরু হয় তাণ্ডব। বাড়ির সদর দরজায় লাথি মারে ওই দু’জন। ছাত্রীটির বাবা পুলিশ ডাকার কথা বললে মান্টা তখনকার মতো রণে ভঙ্গ দেয়। সে বাড়ি ফিরে যায়। ফেরার আগে হুমকি দেয়, ‘‘বিরতির পর গুছিয়ে ফিরে আসছি। দেখা যাবে পুলিশ কী করতে পারে।’’
হুমকির মিনিট কুড়ি পরেই দলবল জুটিয়ে মান্টা ওই ছাত্রীর বাড়িতে চড়াও হয়। রড ও দা হাতে ওই যুবকদের দেখে ছাত্রীর বাড়ির লোকজন দরজায় খিল তুলে ভিতরে ঢুকে যান। একই উঠোনে ওই ছাত্রীর কাকা-জ্যাঠাদেরও বাড়ি। ওই যুবকের রুদ্রমূর্তি দেখে সকলেই যে যার বাড়িতে সেঁধিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ: নাছোড় ওই যুবকেরা দা দিয়ে বাড়ির দরজা কেটে দেয়। ঘরের চালে ইট ছুড়তে থাকে। এলোপাথারি ইট ছুড়তে থাকে। আর তাতেই ওই ছাত্রীটির ভাইঝি, বছর তিনেকের ওই শিশুর মাথায় ইটের আঘাত লাগে। ইটের ঘায়ে জখম হন ছাত্রীটির দিদিমা, বৌদি ও জেঠিমা। পরিবারের পুরুষেরা প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খান। জখমদের শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সকালে তাঁদের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর থেকে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন বছর পনেরোর ওই ছাত্রীটি। ভয় মিশ্রিত গলায় কোনওরকমে সে বলে, ‘‘ওরা আমাকে ভয় দেখাত। তাই বলে যে এ ভাবে বাড়িতে এসে ভাঙচুর ও মারধর করবে তা ভাবতেই পারিনি। এখন বাড়ির বাইরে বেরোতেই ভয় লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy