Advertisement
E-Paper

আর বাড়িই ফেরেননি তিন অভিযুক্ত

তারাতলায় বন্দরের জমি জবরদখলের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় মূলত তিন জনের দিকে আঙুল উঠেছে। সোমবার যাঁদের পরিচয়ও ধরা পড়ল আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে।

সুপ্রিয় তরফদার ও শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
বন্দর-কাণ্ডে তিন অভিযুক্ত। তপন অধিকারী, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, পাপাই অধিকারী।

বন্দর-কাণ্ডে তিন অভিযুক্ত। তপন অধিকারী, বিশ্বজিৎ মণ্ডল, পাপাই অধিকারী।

তারাতলায় বন্দরের জমি জবরদখলের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় মূলত তিন জনের দিকে আঙুল উঠেছে। সোমবার যাঁদের পরিচয়ও ধরা পড়ল আনন্দবাজার পত্রিকার কাছে।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, তিন অভিযুক্তই হাওড়ার সাঁকরাইল থানা-এলাকার মধ্য ঝোড়হাটের বাণীপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। নাম— তপন অধিকারী, বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও পাপাই অধিকারী (তপনের ভাইপো)। এলাকা-সূত্রের খবর, ওঁরা টলিউডের কোনও এক স্টুডিওয় টেকনিশিয়ানের কাজ করেন।

এবং সোমবার ওখানে গিয়ে শোনা যায়, রবিবার সকালের ঘটনার পরে তিন জনের কেউই বাড়ি ফেরেননি। পাড়া-পড়শিরা বলেছেন, ওঁরা বেশ ক’বছর ধরে কলকাতায় কাজ করছেন। এত দিন ট্রেনে যেতেন। ক’মাস আগে বিশ্বজিৎ একটি গাড়ি কেনা ইস্তক তাতে চড়েই রোজ সকাল সাড়ে আটটা-ন’টা নাগাদ তিন জন কলকাতায় রওনা দিচ্ছিলেন। ‘তিন জনই বলত, ওরা বাংলা সিনেমার স্টুডিওয় টেকনিশিয়ান। তবে কলকাতার কোথায় সেই স্টুডিও, সেটা কখনও খোলসা করেনি।’’— মন্তব্য এক পড়শির।

প্রথমে যাওয়া গেল তপনের বাড়িতে। তপনের মেজদাদা হরিপদ অধিকারী তল্লাটের পরিচিত নাম। সেই সুবাদে হদিস পেতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি। একটি ক্লাব পেরিয়ে গলি। গলিতে ঢুকে দু’টো বাড়ি পেরিয়ে তপনদের দোতলা বাড়ি। হরিপদবাবুর নাম ধরে ডাকতে বছর দশের একটি মেয়ে বেরিয়ে এল। সে-ই ডেকে আনল হরিপদবাবুকে। তপন কোথায়?

হরিপদবাবু প্রথমে জানান, তপন বলে কাউকে চেনেন না। পাপাইকেও নয়। তবে কিছুক্ষণ কথাবার্তা চালানোর পরে বেরিয়ে আসে, তপন তাঁর ভাই। তপনের চাকরিস্থল সম্পর্কে অবশ্য দাদা মুখ খুলতে চাননি। বরং বারবার প্রশ্ন শুনে রীতিমতো বিরক্ত হয়ে ছুড়ে দেন পাল্টা প্রশ্ন— ‘‘আপনাদের কে পাঠিয়েছে বলুন তো?’’

অগত্যা বেরিয়ে আসতে হয়। কিছুটা এগিয়ে বাঁ দিকে বিশ্বজিৎ মণ্ডলের বাড়ি। অনেক ডাকাডাকির পরে ভিতর থেকে এক তরুণী বেরিয়ে আসেন। জানান, তিনি বিশ্বজিৎবাবুর মেয়ে। বাবা কোথায়?

তরুণী বলেন, ‘‘বাবা কলকাতা থেকে পুরুলিয়া গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ফিরবেন।’’ ওঁর দাবি, বিশ্বজিৎবাবু টেকনিশিয়ান। কোন স্টুডিওয় কাজ করেন জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়েটি বাড়িতে ঢুকে এক যুবককে পাঠিয়ে দেন। যুবক জানান, তিনি বিশ্বজিৎবাবুর ছেলে। ‘‘বাবা এখন পুরুলিয়া থেকে ফিরছেন।’’ — বলেন তিনি।

বাবা ঠিক কী কাজ করেন? যুবকের জবাব, ‘‘আমার বাবা একটা গানের চ্যানেলের প্রডাকশন ম্যানেজার। তবে উনি শ্রীকান্ত মোহতার সঙ্গে কাজ করেন না।’’ মারধরের ঘটনায় বিশ্বজিৎবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে যুবকটির দাবি, তিনি গোলমালের খবর টিভিতে দেখেছেন। তার বেশি কিছু জানেন না। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগের কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার জানিয়েছেন, বিশ্বজিৎ মণ্ডল বাণীপুর দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিশ্বজিৎবাবু ভেঙ্কটেশের লোগো লাগানো গাড়িতে চেপে ঘোরেন। তিনি ভেঙ্কটেশের লোক বলেই এলাকায় পরিচিত।

এ দিকে বন্দরকর্মীদের উপরে হামলায় সংশ্লিষ্ট স্টুডিওর এক কর্মী ‘রনি’র নামও উঠে এসেছে, সবুজ টি শার্ট পরিহিত যে যুবককে রবিবার দিনভর মোবাইল কানে স্টুডিওর মধ্যে ঘুরতে দেখা যায়। এ দিন রনি বলেছেন, ‘‘আমরা এখানে কাজ করি। সেই সূত্রেই এসেছিলাম।’’ তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল কি না জানতে চাইলে রনির উত্তর, ‘‘স্টুডিওর মালিককে জিজ্ঞাসা করুন। সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

রবিবারের হামলার পিছনে তারাতলার সংশ্লিষ্ট ৮০ নম্বর পুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা আনোয়ার খানের পাশাপাশি স্থানীয় সমাজবিরোধী নেপালি মোহনের ভূমিকার কথাও শোনা যাচ্ছে। এলাকায় আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নেপালি মোহনের যথেষ্ট পরিচিতি। অভিযোগ, রবিবার নেপালি-ই বেহালা-মহেশতলা থেকে বাছাই করা অচেনা মুখের যুবকদের এনে জড়ো করেছিলেন। আনোয়ার বা তাঁর সঙ্গীরা অবশ্য ওখানে ছিলেন না।

বস্তুত এ দিন এই তথ্য দিয়েই আনোয়ার ঘনিষ্ঠ মহলকে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, হামলাবাজিতে তিনি কোনও ভাবেই যুক্ত নন। ‘‘‘আমার সঙ্গে শ্রীকান্ত মোহতার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি কেন যাব? বাইরের ছেলেরা এসেছিল। ওদের চিনিও না।’’— যুক্তি আনোয়ারের আর নেপালির দাবি, ‘‘ওখানে আমরা কেউ ছিলাম না। থাকলে তো ছবিতেই দেখা যেত! তবে শুনেছি, বাইরের ছেলেরা এসেছিল ঝামেলা পাকাতে।’’

supriyo tarafdar shubhashis ghatak journalist attack kolkata port trust land journalist beating journalist assault accused tollyganj technician technician venkatesh films technician journalist attacker technichian
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy