এই ট্যাক্সিই ছিনিয়ে নিয়েছিল কামারহাটির দুই যুবক। —নিজস্ব চিত্র।
চালকের কাছ থেকে ট্যাক্সি ছিনিয়ে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চালাতে শুরু করল মত্ত আরোহী। আর সেই বেপরোয়া ট্যাক্সির চাকায় পিষে গেলেন মহিলা। জখম হলেন আরও পাঁচ জন। সোমবার রাতে আগরপাড়ায় এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। কামারহাটির বাসিন্দা ওই দুই যুককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ঠিক কী ঘটেছিল সোমবার রাতে?
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বিকে পাল অ্যাভিনিউ থেকে ডানলপ যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করে ওই দুই যুবক। পরে তারা আরও বেশি ভাড়া দেওয়ার কথা বলে ট্যাক্সিচালক রামকুমার সাউকে কামারহাটি মোড়ে পৌঁছে দিতে বলে। রামকুমারের অভিযোগ, রথতলা মোড়ে গিয়ে বেলঘরিয়ার দিকে ট্যাক্সি ঢোকাতে বলে ওই দুই যুবক। এর পর তারা বিভিন্ন গলিতে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে শুরু করে। রামকুমারের কথায়, ‘‘এ দিক-ও দিক ঘোরাচ্ছে দেখে আমি আপত্তি জানাই। ওঁদের বলি ট্যাক্সি থেকে নেমে যান। আর যাব না। তাতেই ওঁরা ক্ষেপে উঠে আমাকে মারধর শুরু করেন।’’
ট্যাক্সিচালক পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর পাশেই সামনের আসনে বসে ছিল যে যুবক, সে তাঁর গলা টিপে ধরে মারধর শুরু করে। এর পর পিছনের আসনে বসা যুবকও গলা টেনে ধরে মারধর করতে থাকে। মারধরের পর রামকুমারকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চাবি কেড়ে নিয়ে চালকের আসনে বসে পড়ে এক যুবক। পিছনের আসন থেকে রামকুমারের গলা চেপে ধরে রাখে অন্য জন। এ ভাবে রথতলার ভিতরে বিভিন্ন গলি ঘোরার পরে ফের তারা ট্যাক্সি নিয়ে বিটি রোডে উঠে পড়ে। সেখানে দুই বাইক আরোহীকে হালকা ধাক্কা মারে ট্যাক্সিটি। ফলে বাইক দু’টি ট্যাক্সিটির পিছনে ধাওয়া করে। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে আগরপাড়া ইলিয়াস রোডে ঢুকে পড়ে ট্যাক্সিটি। ট্যাক্সিচালক রামকুমার আর্তচিৎকার করলেও রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শুনশান রাস্তায় কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি।
মৃতা শীলা দাস। —নিজস্ব চিত্র।
এর পর আগরপাড়ার হরিমোহন চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটে ঢুকে পড়ে ট্যাক্সিটি। সেই রাস্তা ধরে তখন কালী প্রতিমা বিসর্জন সেরে ফিরছিলেন স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্য এবং তাঁদের সঙ্গীরা। আচমকাই সেই মিছিলের মধ্যে পিছন থেকে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ট্যাক্সিটি। তার ধাক্কায় রাস্তার এ দিকে-ও দিকে ছিটকে পড়েন অনেকে। তার পর ট্যাক্সি আটকে ওই দুই যুবক এবং ট্যাক্সিচালককে নামিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় খড়দহ থানার টহলদারি গাড়ি। পুলিশ ওই তিন জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেপরোয়া ট্যাক্সির বলি হওয়া শীলা দাসের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ট্যাক্সির ধাক্কায় অরূপ সাধু, নীলা সাধু, রাধাদেবী অগ্রবাল, সুচিত্রা দাস এবং অমর সাধু নামে আরও পাঁচ জন আহত হয়েছিলেন। তাঁদের সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং বলরাম বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যেকেই কোমরে, পায়ে, হাতে চোট নিয়ে চিকিৎসাধীন।
আরও পড়ুন: শহরের কাছেই ডাইনি অপবাদে মার, ধৃত ওঝা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy