Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Titagarh

প্রতিবাদী গুলিতে খুন, গ্রেফতার দুই

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৌফিক ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।

মহম্মদ তৌফিক

মহম্মদ তৌফিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৫:৫১
Share: Save:

বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে মদের আসর বসত। প্রতিবাদ করেছিলেন টিটাগড় উড়নপাড়ার কলেজ ছাত্র মহম্মদ তৌফিক (২১)। তার জেরে মারধর করা হয়েছিল তাঁকে। জুটেছিল প্রাণনাশের হুমকিও। শুক্রবার রাতে সেই তৌফিককে তাঁর বাড়ির সামনে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, যারা খুনের হুমকি দিয়েছিল, তারাই গুলি করে তৌফিককে। পুলিশ দুই অভিযুক্তকে রাতেই গ্রেফতার করে। এক অভিযুক্ত পলাতক। এ ভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৌফিক ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে, টিটাগড় থানার উল্টো দিকের উড়নপাড়ায় বাড়ি তাঁর। এ দিন সন্ধ্যায় মোটরবাইকে করে বাড়ি থেকে বের হন তৌফিক। রাস্তার মোড়ে দু’টি বাইক দাঁড় করিয়ে তাঁর পথ আটকায় স্থানীয় দুষ্কৃতী আরিফ ইকবাল, সুরজ আলি এবং তাদের এক সঙ্গী।

পথ ছাড়তে বলায় তাদের সঙ্গে বচসা হয় তৌফিকের। অভিযোগ, তখনই তৌফিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় আরিফেরা। এর আগেও ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে গোলমাল হয়েছিল আরিফদের। রাত ১০ নাগাদ ফিরে বাড়ির সামনে বাইকটি রেখে দাঁড়িয়েছিলেন তৌফিক। সেই সময় দু’টি বাইকে আরিফ, সুরজ এবং আরও এক জন এসে খুব কাছ থেকে তৌফিককে লক্ষ করে গুলি করে।

তৌফিকের পেটের ঠিক উপরে একটি গুলি লাগে। সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পালিয়ে যায় সুরজরা। জখম তৌফিককে ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ে। দুষ্কৃতীরা কী ভাবে এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। রাতেই অবশ্য পুলিশ আরিফ এবং সুরজকে একটি গোপন ডেরা থেকে পাকড়াও করে।

ভাল ছেলে হিসেবে এলাকায় সুনাম রয়েছে তৌফিকের। তাঁর কাকা সমশেদ আলম জানান, তাঁদের বাড়ির কাছেই পাড়ার মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে মদের আসর বসাতো কয়েক জন দুষ্কৃতী। আরিফ ছিল তাদের পাণ্ডা। সেখানে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজকর্ম চলত। বছরখানেক আগে তার প্রতিবাদ করেছিলেন তৌফিক। তখনই তাঁকে খুনের হুমকি দিয়েছিল আরিফেরা। রাতে রাস্তায় একবার মারধরও করা হয়েছিল তৌফিককে। তৌফিক টিটাগড় থানায় অভিযোগ করার পরে আরিফ-সহ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে তারা ফের তৌফিককে শাসাতে শুরু করেছিল বলে অভিযোগ বাবা হায়দর আলির। তিনি বলেন, “আমার ছেলে কখনও খারাপ কাজ করত না। ও খারাপ কাজের প্রতিবাদ করত। সেই জন্যই তৌফিককে শেষ করে দিল ওরা। আমার ছেলেটাকে যারা দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিল, তাদের যেন শাস্তি হয়।”

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আরিফ এবং সুরজের বয়স কুড়ি বছরের মধ্যে। এত কম বয়সি ছেলেদের হাতে কী করে আগ্নেয়াস্ত্র এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, টিটাগড়ে কি ফের অশান্ত সময় ফিরে এল? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) আমনদীপ বলেন, “নিহতের সঙ্গে অভিযুক্তদের আগের গোলমালের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। অভিযোগপত্রে তার উল্লেখ নেই। পুলিশ যদিও ঘটনার তদন্ত করছে। অভিযুক্তেরা কোথা থেকে অস্ত্র পেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Titagarh Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE