Advertisement
E-Paper

নতুন ভোটে পুরনো লাইন! বিজেপি হাঁটছে মেরুকরণের রাস্তায়, বাঙালিয়ানায় শান দেওয়া শুরু তৃণমূলের

বড়দিনের আগের দিনই বোধহয় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, আরও একটি নতুন ভোট আসন্ন হলেও বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূল হাঁটতে চলেছে তাদের পুরনো এবং পরীক্ষিত লাইনেই। হিন্দুত্ব বনাম বাঙালি অস্মিতা।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০২
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।

নতুন বছর। নতুন ভোট। সেই ভোটের আগে বাংলার মাটিতে পুরনো লাইনেই হাঁটতে শুরু করে দিল তৃণমূল এবং বিজেপি। তৃণমূলের হাতিয়ার বাঙালি অস্মিতা। গেরুয়া শিবিরের অস্ত্র হিন্দুত্ব এবং মেরুকরণ। যা শুরু হয়ে গেল বছর ফুরোনোর আগে থেকেই।

গত রবিবার ব্রিগেডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচি ছিল। তা ঘোষিত ভাবে বিজেপির দলীয় কর্মসূচি ছিল না। আবার এ-ও বাস্তব যে, সেই কর্মসূচিতে বিজেপির প্রথম সারির নেতারা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিলেন। বড়দিনের আগের দিনই সম্ভবত নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, আরও একটি নতুন ভোট আসন্ন হলেও বাংলায় বিজেপি এবং তৃণমূল হাঁটতে চলেছে তাদের নিজেদের পরীক্ষিত এবং পুরনো লাইনেই। কলকাতার গীতাপাঠ নিয়ে সুদূর কোচবিহার থেকে রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছিলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, গীতা পাঠ করার চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল।’’ উদয়ন এককালে বামপন্থী দল ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন। তাঁর উক্তি নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার ‘বামপন্থী প্রোডাক্ট’ বলেছিলেন। যাকে তৃণমূল বলেছে, স্বামীজির (স্বামী বিবেকানন্দের) অপমান! অমিত শাহ, জেপি নড্ডার কলকাতা সফরের দিনই ‘স্বামীজির অপমানের’ বিরুদ্ধে হাতে ফুটবল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে যুব তৃণমূল। এ হেন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, নতুন মোড়কে পুরনো লাইনেই চলতে চাইছে দুই ফুল। গীতাপাঠকে যেমন ‘সনাতন সংস্কৃতি’ বলে উল্লেখ করেছিল বিজেপি, তেমনই তৃণমূলও নামল বিবেকানন্দ ও ফুটবল নিয়ে। যে মনীষী ও খেলার সঙ্গে বাঙালির নাড়ির টান।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় আশাতীত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। তার পর ২০২১-এর ভোটে অনুপ্রবেশ, নাগরিকত্ব আইন-সহ নানাবিধ শব্দবন্ধ প্রচারে ব্যবহার করে মেরুকরণের অস্ত্রে শান দিয়েছিল তারা। ভোটের আগে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি নেতাজি জয়ন্তীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধানমনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চেই দুই লাইনের লড়াই সপ্তমে উঠেছিল। মমতা পোডিয়ামে দাঁড়ানো মাত্র দর্শকাসন থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। ক্ষোভে বক্তৃতা না করেই নেমে এসেছিলেন মমতা।

ওই ঘটনাকে যেমন তৃণমূল ‘নেতাজির অপমান’ হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল, তেমনই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান হিসেবেও তুলে ধরেছিল প্রকাশ্য প্রচারে। তার পর থেকে বাংলা ও বাঙালির বিপরীতার্থক শব্দ হিসেবে বিজেপিকে দেখাতে চেয়েছিল তৃণমূল। এক দিকে স্লোগান দিয়েছিল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’, অন্য দিকে ভিন্‌রাজ্য থেকে আসা বিজেপি নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে দেগে দিয়েছিলেন মমতা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। হিন্দিভাষী বিজেপি নেতাদের বাংলা উচ্চারণ নিয়ে কটাক্ষ, বিদ্রুপও ঢুকে পড়েছিল রাজনীতির সিলেবাসে। গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্লোগান দিয়েছিল। অমিত শাহদের উচ্চারণ নিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘বলছে সুনার বাংলা বানিয়ে দেবে, সুনার বাংলা। যারা বাংলা ভাল করে বলতে পারে না, তারা আবার করবে বাংলার উন্নতি!’’ ২০০ আসন পাওয়ার হুঙ্কার দেওয়া বিজেপিকে থামতে হয়েছিল ৭৭-এই। তার পর তথাগত রায়ের মতো বিজেপির প্রবীণ নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, প্রচারে হিন্দির ‘আগ্রাসন’ই কাল হয়েছে! অর্থাৎ, সেই ভোটে বিজেপির মেরুকরণকে বাঙালি জাত্যাভিমান দিয়েই প্রতিরোধ করতে পেরেছিল শাসক তৃণমূল। তবে এর মাঝে বিজেপিও কিছুটা বাঙালিয়ানা রপ্ত করার চেষ্টা করেছে। দুর্গাপুজো, পয়ালা বৈশাখে কর্মসূচিও নিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি।

সে কারণেই কি বিজেপি তাদের বহুলচর্চিত লাইন থেকে সরেনি? জল্পনা তা নিয়েই। যেমন তৃণমূলও সরেনি তাদের প্রতিষ্ঠিত লাইন থেকে। এর মধ্যে হিন্দুত্ববাদীরা কল্যাণী ও ত্রিবেণীতে কুম্ভমেলা, ধর্মতলায় ধর্মপুজো করেছেন। সর্বশেষ ব্রিগেডে গীতাপাঠ। সবেরই নেপথ্যে কাজ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আবার মমতার সরকার রাজ্যপালের ঠিক করে দেওয়া ‘বাংলা দিবস’-এর বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন করে রাজ্য দিবস হিসেবে পয়লা বৈশাখকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রবি ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’কে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবেও মান্যতা দিয়েছে।

ওয়াকিবহালরা জানাচ্ছেন, বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে বাঙালি অস্মিতাকে তৃণমূল হাতিয়ার করা শুরু করেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মাঝেই। কলকাতায় শাহের মিছিলের দিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পর থেকেই বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ বলে তোপ দাগা শুরু করেছিল তৃণমূল। বাস্তব বলছে, লোকসভা ভোট চলার সময় ওই ঘটনার পরে যে ক’টি দফায় ভোট হয়েছিল, তা থেকে বাংলায় একটিও আসন জেতেনি বিজেপি। তবে অনেকেরই মতে, সবটাই যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার কারণে হয়েছিল এমন নয়। কিন্তু ওই ঘটনা বাঙালি মনে ‘প্রভাব’ ফেলেছিল। তবু এ সবের পরেও বিজেপি যেমন হিন্দুত্বের লাইনে অনড়, তেমন তৃণমূলও বাংলা লাইনেই থাকতে চাইছে। কারণ, দু’টি লাইনই পরীক্ষিত, পুরনো। এবং এখনও পর্যন্ত নিরাপদ।

Lok Sabha Election 2024 TMC BJP West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy