জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূলের সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। শুক্রবার দুপুর থেকে রাত সেই সংঘাতের সাক্ষী ছিল দিল্লি। শনিবার কমিশনকে ‘পাল্টা চাপে’ ফেলতে নতুন দাবি তুলল তৃণমূল। ডেরেক ও’ব্রায়েন, প্রতিমা মণ্ডল, সাজদা আহমেদ, সাকেত গোখলের মতো সাংসদেরা দাবি করলেন, শুক্রবার কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে তৃণমূলের ১০ সাংসদের ৫৫ মিনিটের বৈঠকের পূর্ণ প্রতিলিপি (ট্রান্সস্ক্রিপ্ট) প্রকাশ করুক নির্বাচন কমিশন!
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া (এসআইআর) সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ তুলে শুক্রবার কমিশনের সদর দফতরে গিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। বৈঠকের শেষে সংবাদমাধ্যমের কাছে ডেরেক, মহুয়া মৈত্র, শতাব্দী রায়েরা দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের তরফে কমিশনের উদ্দেশে যে পাঁচটি প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, তার একটিরও সদুত্তর দিতে পারেনি তারা। রাতে একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়, কমিশন তৃণমূলকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে, আইন মানতেই হবে। এমনকি, তৃণমূল যাতে বিএলও-দের ‘চাপ’ না-দেয়, তা-ও ১০ সাংসদের প্রতিনিধিদলকে বলে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
কমিশনের ওই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরে শুক্রবার রাতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, কমিশনের কিছু লুকোনোর না-থাকলে তারা বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করুক। শনিবার ডেরেকরা দাবি করেছেন বৈঠকের কযোপকথনের প্রতিলিপি প্রকাশের। তৃণমূলের আরও প্রশ্ন, কেন কমিশন আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে বা প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বক্তব্য বলছে না? ডেরেক বলেন, ‘‘আমাদের কিছু লুকোনোর নেই। কমিশনের যদি কিছু আড়াল করার না-থাকে, তা হলে তারা সাত দিন বা দশ দিন সময় নিয়ে বৈঠকে আলোচনার প্রতিলিপি প্রকাশ করুক।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে এক বন্ধনীতে ফেলেও খোঁচা দেন ডেরেক। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীও সাংবাদিক সম্মেলন করেন না। আর নির্বাচন কমিশন তো প্রেস বিজ্ঞপ্তিও জারি করে না।!’
তৃণমূলের অভিযোগ, বিএলও-দের অমানবিক চাপের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণেই অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। পাল্টা কমিশন সূত্রে শুক্রবার বলা হয়েছিল, বিএলও এবং ইআরও-দের অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যকে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওই ভাতার অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। ডেরেক যার পাল্টা বলেন, ‘‘আমরা ওর (নির্বাচন কমিশনের) চাকর নই। রাজ্যের সঙ্গে কোনও কথা না-বলে সরকারি আধিকারিকদের বিভিন্ন জেলার ‘রোল অবজার্ভার’ করে দেওয়া হচ্ছে। এ বার বাড়াবাড়ি হচ্ছে!’’
জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা অভিযোগ করেন, শুক্রবার তৃণমূলের তরফে কমিশনের কর্তাদের সামনে যখন এসআইআর-এর কারণে মৃতদের নামের তালিকা পড়া হচ্ছিল, তখন এক কর্তা মিটিমিটি হাসছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তখন বলি, আপনি হাসি সরিয়ে রেখে পরিস্থিতির ভয়াবহতাটা বুঝুন।’’ তৃণমূলের এ-ও দাবি যে, শুক্রবার কমিশনের কর্তাদের সামনেই ডেরেক বলে এসেছেন, তাঁদের উত্থাপন করা পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। তা বৈঠকের কার্যবিবরণীতেও লিপিবদ্ধ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের কোনও বৈঠকের প্রতিলিপি প্রকাশ করার নজির নেই। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, তৃণমূলও তা জানে। তবে এসআইআর পর্বেই যখন ভোটের মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে তখন ভাষ্যের পাল্টা ভাষ্য তৈরির কৌশল হিসাবেই তৃণমূল এই দাবি তুলল। তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল দেখাতে চাইছে, কমিশন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। যা করছে, তার পুরোটাই চুপিচুপি। বরং তৃণমূল লুকোছাপা না-করে সব খোলাখুলি বলছে।