Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের ধর্না, পাল্টা পথে বিরোধীরা

সিবিআই দফতরের বাইরে ধর্নায় বসে নিজেদের উপরে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলল তৃণমূল! রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, এই অভিযোগে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরের সামনে সল্টলেকে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছে শাসক দলের মহিলা সংগঠন। যার নেতৃত্বে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নিজেই!

সল্টলেকে বাম মহিলা সমিতির বিক্ষোভ।

সল্টলেকে বাম মহিলা সমিতির বিক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

সিবিআই দফতরের বাইরে ধর্নায় বসে নিজেদের উপরে চাপ আরও বাড়িয়ে তুলল তৃণমূল! রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, এই অভিযোগে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরের সামনে সল্টলেকে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছে শাসক দলের মহিলা সংগঠন। যার নেতৃত্বে রাজ্যের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নিজেই! শাসক দল এবং মন্ত্রীদের এমন আচরণের প্রতিবাদে শুক্রবারই সল্টলেকে পাল্টা মিছিল করেছে কংগ্রেস ও বামেরা। পাশাপাশিই, ছাত্র, যুব, মহিলা ও শ্রমিক দলের সব গণসংগঠনকে পথে নামিয়ে প্রতারিত আমানতকারীদের সঙ্গে নিয়ে সোমবার কলকাতায় ‘মহামিছিলে’র ঘোষণা করেছে সিপিএম।

গোটা ঘটনাপ্রবাহের নিট ফল সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে গিয়ে আচমকাই এখন বিরোধীদের চক্রব্যূহে শাসক দল!

মহিলা তৃণমূলের ধর্নার দ্বিতীয় দিনে সকাল ১১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে ত্রিপল খাটানো হয়। ব্যবস্থা করা হয় এক গুচ্ছ চেয়ারেরও। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ চলাকীলান রোদে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তৃণমূল মহিলা সংগঠনের এক মহিলা কর্মী। সে রকম কিছু ঘটনা ঠেকাতেই ছাউনির ব্যবস্থা। সকালেই সমর্থক মহিলাদের নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করেন চন্দ্রিমা। বিক্ষোভ চলাকালীন সিবিআই-কে ‘তোতাপাখি’ বলে কটাক্ষ করে আইন প্রতিমন্ত্রী কীর্তনের সুরে স্লোগান তোলেন, ‘তোতা যায়, ছোলা খায়, মোদী-মোদী গান গায়’! বাকি সমর্থকেরাও সুর মিলিয়ে উলুধ্বনি ও মোদী-বোল দিতে থাকেন! বিকালের ওই অবস্থান-ধর্নায় অংশগ্রহণ করেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। বিকাল ৫টা নাগাদ এ দিনের মতো অবস্থান তুলে নিলেও পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে কিছু জানাননি চন্দ্রিমা।


সল্টলেকে বিজেপির মিছিল। শুক্রবার।

এ ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরের সামনে কী ভাবে রাজ্যের মন্ত্রী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান করছেন, তা-ই নিয়ে প্রশ্ন অব্যাহত। মহম্মদ সহিদুল লস্কর নামে বারুইপুরের পুরী গ্রামের এক বাসিন্দা চন্দ্রিমার বিরুদ্ধে বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। পুুলিশ সূত্রের খবর, পেশায় ট্যাক্সিচালক ওই ব্যক্তি অভিযোগে জানান, রাজ্যের আইনমন্ত্রী কী ভাবে রাস্তা আটকে অবস্থান-বিক্ষোভ করে সংবিধানের অবমাননা করেন? দেশের মানুষ যেখানে চাইছেন তদন্তের মাধ্যমে সত্য উঠে আসুক, সেখানে মন্ত্রীর কেন এমন আচরণ? ওই ট্যাক্সিচালক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছেও একই অভিযোগ করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিনই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরের সামনে এক জন মন্ত্রীর নেতৃত্বে অসাংবিধানিক ধর্না কত দিন মেনে নেওয়া হবে?

চন্দ্রিমাদেবী অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী হিসাবে রাজনৈতিক পরিচয়েই তিনি আন্দোলন করছেন। মন্ত্রী হিসাবে নয়! তবে চন্দ্রিমাদের এ সব ব্যাখ্যা উড়িয়ে সুযোগ পেয়ে আরও বেশি করে পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিএম। বৃহস্পতিবারই শহরে প্রতারিত আমানতকারীদের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। এর পরে সোমবার দুপুরে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভেনিউ পর্যন্ত সিটু, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই একসঙ্গে মিছিল করবে। সারদা-কাণ্ড নিয়ে সিপিএম কেন পথে নামছে না, তা নিয়ে

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছিল। এই কর্মসূচি নিয়ে তারই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, মিনতি ঘোষ এবং সায়নদীপ মিত্রেরা।

তৃণমূলের ধর্না নিয়ে কটাক্ষ করে সুজনবাবু পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে প্রয়োজনে প্রতারিত আমানতকারীরা নবান্ন ঘিরে দাবি তুলতে পারেন, দিদি টাকা ফেরত দিন!” আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা বলেছেন, সিবিআই আসল অপরাধীদের আড়াল করছে। শ্যামলবাবু এ দিন পাল্টা বলেছেন, “ওঁরা বারবার চিট ফান্ড নিয়ে বাম আমলের দিকে আঙুল তুলছেন। সিবিআইয়ের কাছে গিয়ে তা হলে নাম-ধাম দিন না! অপরাধী হলে সিবিআই আমাদের ধরুক। আমরা সিবিআইয়ে ধর্না দিতে তো যাইনি!”


তৃণমূলের ধর্নার প্রতিবাদে পথে নামল কংগ্রেস। বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। শুক্রবার সল্টলেকে।

সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে এ দিনই রাজ্য জুড়ে থানায় থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্রের মধ্যে ভবানীপুর থানায় যেমন বড়সড় জমায়েতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। সল্টলেকে তৃণমূলের অবস্থানের প্রতিবাদে এ দিন যুব কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদারের নেতৃত্বে মিছিলকে অবশ্য পূর্ত ভবনের সামনেই আটকে দেয় পুলিশ। সিপিএমের একটি প্রতিবাদ মিছিলকেও সিবিআই দফতরে পৌঁছনোর আগে লাবণীর কাছে আটকে দেওয়া হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE