E-Paper

প্রতিবাদে সব দল, ‘রাস্তায় বাঁদরামো’ নয়, বললেন মন্ত্রী

কুণাল বলেছেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি রাজনীতি করতে নেমে পড়েছে। সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ, বংশগোপাল চৌধুরীরা যা করেছেন, তার দায় কি সিপিএমের অন্য নেতাদেরও? ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিজেপি মালা পরিয়েছে!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৫ ০৭:৩৩
আইন কলেজের ঘটনায় কসবায় ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআইয়ের বিক্ষোভ।

আইন কলেজের ঘটনায় কসবায় ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআইয়ের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হল রাজনীতি। ঘটনায় অভিযুক্ত এবং ধৃতদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে শাসক দলের যোগ নিয়ে সরব হল বিরোধীরা। কসবা থানার সামনে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপির দফায় দফায় বিক্ষোভে ধুন্ধুমার বাধল। অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরির চেষ্টায় সক্রিয় হয়ে শাসক দল আবার পাল্টা নিশানা করল বিরোধীদের।

দিনভর প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা শুক্রবার বলেছেন, ‘‘আমরা ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আছি। যারা এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের হাজতে পাঠানো হয়েছে। ন্যায্য বিচারের দাবি করছি।’’ একই সুরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘আইনেই বিচার হবে। নয়তো এই জানোয়ারদের চামড়া তুলে নেওয়া উচিত!’’ সেই সঙ্গেই ৩০-৪০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দাবিও করেছেন তিনি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফেও দাবি করা হয়েছে, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র এখন সংগঠনের পদাধিকারী ছিলেন না। কলেজের পরিচালন সমিতির সুপারিশে অভিযুক্ত যে চাকরি পেয়েছিলেন, তাতেও অন্যায় কিছু দেখছেন না তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের কলেজে চাকরির সুযোগ পাওয়া তো অন্যায় নয়।’’

দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেও রাজনৈতিক চাপের মুখে পাল্টা আক্রমণের পথ নিয়েছে তৃণমূল। কুণাল বলেছেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি রাজনীতি করতে নেমে পড়েছে। সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ, বংশগোপাল চৌধুরীরা যা করেছেন, তার দায় কি সিপিএমের অন্য নেতাদেরও? ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিজেপি মালা পরিয়েছে!’’ যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ, প্রজ্বল রেভান্নার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকেও আক্রমণ করেন তাঁরা। শশীর কথায়, ‘‘এই ধরনের অপরাধ রুখতে এ রাজ্যেই অপরাজিতা আইন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এখানে যদি ন্যায্য দাবি থাকে, রাস্তায় বাঁদরামো আপনারা করবেন ন! আপনারা এই বিলে সমর্থন করুন। মহিলার শরীর তো আপনাদের রাজনীতি করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র নয়!’’

বিরোধীরা অবশ্য একসুরে অভিযোগ করেছে, পুলিশ-প্রশাসনের গাফিলতিতে শাসক দলের সংগঠনের লোকজন শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এই মুখ্যমন্ত্রী থাকলে এ রকম হবে। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে বলেছিলেন, সাজানো ঘটনা। হাঁসখালির ঘটনার পরে বলেছিলেন, প্রেমের সম্পর্ক। উনি থাকলে বাংলার মা, বোন, শিশু কেউ সুরক্ষিত নয়। কলেজের ভিতর ভাইপো বাহিনী ধর্ষণ করেছে! অনুব্রত মণ্ডল বোলপুরের আইসির মা-স্ত্রীকে ফোনে বলেছিলেন ধর্ষণ করবেন। তার পরে কী শাস্তি হয়েছে? সুব্রত বক্সির বকা! ওই শাস্তি হবে।’’ কৃষ্ণনগরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের তোপ, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আইন-শৃঙ্খলা সামলান। তিনি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার পরে তাঁর এই যে অপদার্থতা, যতই জগন্নাথদেবের রথ টানুন না কেন, কালীগঞ্জের মেয়েকে মারা হচ্ছে বোমা দিয়ে, কোথাও মেয়ের ইজ্জত লুট করা হচ্ছে, আর জি করে ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে— এই পাপের হাত থেকে তিনি বাঁচবেন না!”

আইন কলেজের মধ্যে ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভের জেরে এ দিন উত্তাল হয়ে উঠেছিল কসবা থানা চত্বর। প্রদীপ প্রসাদ, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়দের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টা থানার সামনে ধর্না-অবস্থান চালান দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। মাহেশে রথযাত্রা সেরে পরে সেখানে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। এই ঘটনা প্রসঙ্গে মাহেশে তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনিক কাঠামো নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। আর জি করের ঘটনার পরেও রাজ্য সরকার শিক্ষা নিল না। তার পরিণামেই এই ঘটনা।’’

কসবা থানা চত্বরে বিক্ষোভ-অবস্থানে কংগ্রেস।

কসবা থানা চত্বরে বিক্ষোভ-অবস্থানে কংগ্রেস। —নিজস্ব চিত্র।

সিপিএমের ছাত্র, যুব ও মহিলা কর্মীরা এ দিন মিছিল করে প্রথমে আইন কলেজের ফটকের উপরে উঠে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফটক টপকে কলেজের ভিতরে গিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পতাকা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া পোস্টার ছিঁড়ে দেন তাঁরা। পরে কসবা থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বচসা ও ধাক্কাধাক্কি চলে বেশ কিছু ক্ষণ। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে লাঠি ছিনিয়ে নেন বিক্ষোভকারীরা। বেশ কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে বিক্ষোভকারীদের দাবি। বিক্ষোভে ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সিপিএমের কলকাতা জেলার নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত প্রমুখ। কয়েক জন নেতা-নেত্রীকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। কসবা থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে বিজেপির যুব মোর্চাও। নেতৃত্বে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা কতটা তলানিতে পৌঁছেছে, তা আবার বেআব্রু হল এবং তৃণমূল যে দুর্বৃত্তদের আঁতুড়ঘর, তা-ও ফের প্রমাণিত হল। কলেজ ভবনের মধ্যেও যে পড়ুয়ারা নিরাপদ নয়, আর জি কর-কাণ্ডের পরে এই ঘটনায় তা স্পষ্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন বন্ধ রেখে দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছে তৃণমূল।’’ নারীদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আজ, শনিবার রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস।

আইন কলেজের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিতের সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক নেতার ছবি সামনে এনেছে বিরোধীরা। এক্স হ্যান্ড্‌লে তাঁর সঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি প্রকাশ করে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। কুণাল আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ করেছেন এক মহিলা। তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হবে না? আর তাঁর সঙ্গেও তো শুভেন্দুর ছবি রয়েছে।’’ সমাজমাধ্যমে এই রকম একাধিক ছবিও ছড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘যাঁরা আদর্শের জন্য তৃণমূল করেন, তাঁরা অন্যায় করতে পারেন না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rape case Rape victim Kasba Rape Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy