Advertisement
E-Paper

এসআইআরের দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রস্তুতি তৃণমূলে, ভোটরক্ষায় তিন দিকে নজর শাসকদলের, নথি তৈরিতে সঙ্গত করবে নবান্ন

প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও তৃণমূল পুরসভা ও পঞ্চায়েতে যে অস্থায়ী কর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের সাংগঠনিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। নিচুতলায় তৃণমূল যে পৃথক অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বাহিনী।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০১
TMC has started preparations for the second phase of SIR

প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি শুরু তৃণমূলের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার প্রথম পর্ব শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ। তার পরে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তবে প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল শাসকদল তৃণমূলের অন্দরে। ভোটরক্ষা অভিযানে দ্বিতীয় পর্বে তিনটি দিকে বিশেষ নজর দিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল।

রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে গত কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করছিল তৃণমূল। তাঁদের ‘উৎসাহিত’ করতে সরকার প্রকল্পও শুরু করেছিল। তাতে ‘বিরাট’ সাড়া না-মিললেও ভোটার তালিকায় নাম রাখতে পরিযায়ী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ প্রথম পর্বে তৃণমূলকে ‘উৎসাহ’ দিয়েছে। তবে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ হিসাব, দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পরিযায়ী শ্রমিক প্রথম পর্বে ফেরেননি। পরিবারের লোকজন ‘এনুমারেশন ফর্ম’ পূরণ করলেও খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম থাকা নিয়ে সংশয় রয়েছে তৃণমূলের। সেই অংশকে দ্বিতীয় পর্বে সশরীরে এনে শুনানি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। এ ক্ষেত্রে বুথ ও ব্লক স্তরের সংগঠনকে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। জেলা সভাপতি এবং বিধায়কেরাও সেই কাজে তদারকি করছেন।

দ্বিতীয় যে বিষয়টিতে তৃণমূল জোর দিচ্ছে, তা হল নথিহীন ভোটার। ভোটারদের মধ্যে এমন একটি অংশ রয়েছে, যাদের কোনও আত্মীয়ের নাম ২০০২ সালের তালিকায় নেই। পাশাপাশিই তাদের কাছে কমিশন নির্ধারিত নথিগুলির একটিও নেই। এই ধরনের ভোটারদের নাম তোলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্বে ঝাঁপাতে চাইছে তৃণমূল। সঙ্গত করতে প্রস্তুত নবান্নও। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, ১২ ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি ব্লকে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প হবে। সেই শিবিরে নথি তৈরির বিষয়ে সহায়তা করবেন সরকারি আধিকারিকেরা। তবে বুথস্তর থেকে নথিহীন ভোটারকে সরকারের শিবির পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে স্থানীয় স্তরের সংগঠনকেই। তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, এই কাজ করতে তাদের অসুবিধা হবে না। কারণ, রাজ্যের রাজ্যের ষোলো আনার মধ্যে বারো আনা এলাকাতেই জনপ্রতিনিধিরা তৃণমূলের। পুরসভায় কাউন্সিলর বা গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত সদস্য শাসকদলেরই। নথিহীন কারা, তার খসড়া তালিকাও তৃণমূল প্রথম পর্বেই তৈরি করে রেখেছে।

তৃতীয় যে বিষয়ে তৃণমূল নজর দিতে চাইছে, তা হল সদ্যবিবাহিত মহিলাদের নাম তোলার প্রশ্ন। অনেকেই আছেন, যাঁরা বিয়ের পরে এক জেলা থেকে অন্য জেলা বা বাইরের রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন। তাঁদের নাম তোলার ক্ষেত্রে পৃথক গুরুত্ব দিতে চাইছে শাসকদল। যদিও এই সংখ্যা বিরাট হবে না বলেই মনে করছে তৃণমূল। তবে অল্প হলেও সেই অংশের কাছে পাশে থাকার বার্তা নিয়ে পৌঁছোতে চাইছে শাসকদল।

প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও তৃণমূল পুরসভা ও পঞ্চায়েতে যে অস্থায়ী কর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের সাংগঠনিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। নিচুতলায় তৃণমূল যে পৃথক অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই বাহিনী। যাদের বেশির ভাগই দলের লোক। প্রথম পর্বে পাড়ায় পাড়ায় তাঁদের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে সেই কাজকে আরও সুসংবদ্ধ ভাবে করতে চাইছে শাসকদল। কারণ, দ্বিতীয় পর্বের পুরোটাই প্রশাসনিক স্তরে হবে। যাঁরা করবেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের কর্মী হলেও আপাতত কমিশনের মনোনীত আধিকারিক হিসাবেই তাঁরা দায়িত্বপালন করবেন।

একই সঙ্গে নতুন নাম যাঁদের উঠবে, সে দিকেও নজর রাখতে চাইছে তৃণমূল। শাসকদলের আশঙ্কা, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ‘ভুয়ো’ ভোটারদের নাম ঢোকানো হতে পারে। সেই সূত্রেই স্থানীয় স্তরের ‘নজরদারি’র উপর জোর দিতে চাইছে তৃণমূল। তবে কমিশনকে চাপে ফেলতে মৃত হিসাবে যাঁদের নাম বাদ যাচ্ছে, তার সপক্ষে নথি দেখতে চেয়ে দ্বিতীয় পর্বে কমিশনের চাপ তৈরি করারও প্রস্তুতি রাখছে তৃণমূল। শাসকদল মনে করছে, এর ফলে নাম হয়তো তালিকায় যুক্ত হবে না, কিন্তু মামলা মোকদ্দমা হলে কমিশনকে ‘প্যাঁচে’ ফেলা যাবে।

‘দিদির দূত’ অ্যাপে তথ্য দাখিলের মাধ্যমে কমিশনের সমান্তরাল হিসাবও রাখছে শাসকদল। যে কাজ তত্ত্বাবধান করছে সরকার এবং দলের পরামর্শদাতা সংস্থা। বিধানসভা ধরে ধরে সেই হিসাব রাখা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের প্রথম সারির সকলেই মানছেন, প্রথম পর্ব এক রকম হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘‘কমিশনের চাপের জন্য কিছু জায়গায় সামান্য হলেও ক্ষত তৈরি হয়েছে প্রথম পর্বে। কিন্তু সুযোগ রয়েছে দ্বিতীয় পর্বে সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার। সেটাই করতে হবে।’’

SIR West Bengal Politics TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy