Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ফুল দিয়ে চেনা যাচ্ছে পাহাড়কে

রডোডেনড্রন আর অর্কিডের বাহারি ফুলের পাশে আরও একটি ফুল চোখে পড়ছে পাহাড়বাসীর। ‘ঘাসফুল’। আর এই চোখে পড়াই কিছুটা হলেও ‘টেনশন’ বাড়িয়ে দিয়েছে বিমল গুরুঙ্গের। একান্তে জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।

কিশোর সাহা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

রডোডেনড্রন আর অর্কিডের বাহারি ফুলের পাশে আরও একটি ফুল চোখে পড়ছে পাহাড়বাসীর। ‘ঘাসফুল’। আর এই চোখে পড়াই কিছুটা হলেও ‘টেনশন’ বাড়িয়ে দিয়েছে বিমল গুরুঙ্গের। একান্তে জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।

মোর্চার পার্টি অফিসে ঢুঁ মারলেই দুশ্চিন্তার নমুনা মিলে যাবে। সেখানে হিসেব কষা হচ্ছে, কোন পুরসভায় তৃণমূল-জিএনএলএফ জোট এবং জাপ (হরকা বাহাদুরের জন আন্দোলন পার্টি) ক’টা আসন পেতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, মোর্চা-তৃণমূল-জাপের টানাটানিতে কালিম্পং পুরসভা ত্রিশঙ্কু না হয়ে যায়! মিরিকে তৃণমূলের মিছিলে ভিড় দেখে ঠিক ক’টা আসন হাতছাড়া হতে পারে, তা নিয়েও মোর্চার দফতরে তর্কাতর্কি হচ্ছে।

এমন ছিল না। এক সময়ে পাহাড় ছিল কংগ্রেসের। তার পরে হয়ে যায় লালে লাল। সুবাস ঘিসিঙ্গের জমানা থেকে মোর্চার আমল, পাহাড়ে ভোট মানেই বিরোধী ঘরে শুধুই শূন্যতা। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, মিরিক— চার পুরসভায় গত বারের ফলে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ছবিটা। ৮৪টি আসনের সবই ছিল মোর্চার দখলে।

মিরিকে পাঁচ পুরুষ ধরে গরম পোশাক, মহিলাদের জামাকাপড়ের ব্যবসা রয়েছে এক মাড়োয়ারি পরিবারের। দোকানে বসে প্রবীণ ব্যবসায়ীর যুবক ছেলে বললেন, ‘‘ঘাসফুলের নেতারা ডাকায় ৮০ জন ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছিলাম। পাহাড়ে এতটা সাহস দেখানোর কথা আমার বাপ-ঠাকুর্দার আমলে ভাবা যেত না।’’

পাহাড়বাসীর একটা অংশ যে মন বদলাচ্ছে, সেই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন মোর্চার অনেক নেতাই। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা মেনেও নিচ্ছেন, না হলে বিজনবাড়ি, কার্শিয়াং, কালিম্পঙের কলেজ ভোটে সাফল্য পেত না অন্য দল। উপরন্তু, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পাহাড় চষে বেড়িয়েছেন তৃণমূল নেতারা। মিরিকে সৌরভ চক্রবর্তী, কার্শিয়াঙে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, দার্জিলিঙে গৌতম দেব। আর পাহাড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস তো এখন ‘অরূপ দাজু’ (নেপালি ভাষায় দাদাকে দাজু বলা হয়) বলেই পরিচিত। তিনি পাড়ায় পাড়ায় একটাই স্লোগান শোনাচ্ছেন সবাইকে: ‘চুপচাপ ফুল মা ছাপ’ (বাংলায় যা চুপচাপ ফুলে ছাপ)। তাই মোর্চার শীর্ষ নেতা তথা জিটিএ সদস্য অরুণ সাকচি বললেন, ‘‘ভোটটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি হবে। তবে বোর্ড গড়ব আমরাই।’’

যা শুনে তৃণমূলের পাহাড়ের মুখপাত্র বিন্নি শর্মার মন্তব্য, ‘‘আগে ভোটের নামে যা হয়েছে, তা হবে না।’’ হরকাবাহাদুর ছেত্রীও এখন ‘একলা চলো’ ডাক দিয়ে আসরে। আলোচনা চলছে, তাতে গুরুঙ্গের সুবিধা হবে, নাকি ভোটের পরে কালিম্পং ত্রিশঙ্কু হলে লাভ তুলবে ঘাসফুল?

ঘুরেফিরে পাহাড়ে সেই ‘ফুল দিয়ে যায় চেনা’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc North Bengal Bimal Gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE