Advertisement
E-Paper

বাংলায় সভার ২৪ ঘণ্টা আগেই তাল ঠোকাঠুকি শুরু! তৃণমূলকে বিঁধলেন মোদী, পাল্টা পরিযায়ী পাখিকে পদ্ম উত্তরীয় তৃণমূলের

বৃহস্পতিবার প্রথমে প্রশাসনিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মোদী। আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য ১০১০ কোটি টাকার ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তার পরে যাবেন রাজনৈতিক সভার মঞ্চে। তার আগের দিনই তাঁর সফরের রাজনৈতিক অভিমুখ স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী। জবাব দিল তৃণমূলও।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৫ ১৮:৩৩
TMC is preparing to counter PM Narendra Modi if he says anything about West Bengal from the Alipurduar meeting

(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

জোড়া কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রী মোদী। ‘সিঁদুর অভিযান’-এর পর এটিই মোদীর প্রথম পশ্চিমবঙ্গ সফর। একইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের এক বছর আগের প্রথম সফরও বটে। সেই কর্মসূচির ২৪ ঘণ্টা আগে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে পোস্ট করে ‘দুর্নীতি এবং প্রশাসন’ নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করলেন মোদী। বৃহস্পতিবার মোদী কী বলেন, তা দেখে পাল্টা দেওয়ার প্রস্তুতি বুধবার দুপুর থেকেই শুরু করেছিল তৃণমূল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পর আর অপেক্ষা করেনি বাংলার শাসকদল। পরিযায়ী পাখির ছবি দিয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূলের ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কেন বাংলার ন্যায্য পাওনা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে?

আলিপুরদুয়ারের জনসভার সুর পশ্চিমবঙ্গের মাটি ছোঁয়ার আগের দিনই বেঁধে দিয়েছেন মোদী। বুধবার বিকেলে নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘আগামী কাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে আমি আলিপুরদুয়ারে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির একটি জনসভায় ভাষণ দেব। গত এক দশক ধরে এনডিএ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গের মানুষের দ্বারা দারুণ ভাবে প্রশংসিত হয়েছে।’ পরের বাক্যেই মোদী লিখেছেন, ‘তাঁরা (পশ্চিমবঙ্গের মানুষ) তৃণমূলের দুর্নীতি এবং অপশাসনে ক্লান্ত।’

কালক্ষেপ না-করে পাল্টা তৃণমূল সেই ‘এক্স’ হ্যান্ডলেই লিখেছে, ‘যেহেতু পরিযায়ী পাখিরা বাংলায় তাদের মরসুমি ভ্রমণ শুরু করছে, তাই কেন এই সহজ প্রশ্নের জবাব দেবে না যে, কেন্দ্রীয় সরকার কেন রাজ্যের ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা ন্যায্য পাওনা আটকে রেখেছে?’ ইংরেজি অক্ষরে ‘হ্যাশট্যাগ’ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘আয়ে হো তো বতাকে যাও’ (এসেছেন যখন, বলে যান)। যে পাখিটির ছবি তৃণমূলের তরফে পোস্ট করা হয়েছে, তার গলায় একটি গেরুয়া উত্তরীয়। তাতে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল আঁকা।

প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পরে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলছেন দেশের প্রশ্নে সবাই এক, আমাদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের হয়ে বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে যখন বক্তৃতায় কাঁপিয়ে দিচ্ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের কথা আসলে কুয়োর ব্যাঙের রাজনীতি।’’ কুণাল এ-ও বলে দিয়েছেন, রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা হলে পাল্টা ফেরত পেতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।

বৃহস্পতিবার প্রথমে প্রশাসনিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মোদী। আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য ১০১০ কোটি টাকার ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তার পরে যাবেন রাজনৈতিক সভার মঞ্চে। যেহেতু ‘সিঁদুর অভিযান’-এর পর সন্ত্রাসবাদ এবং তার বিরুদ্ধে ভারতের আপসহীন অবস্থানের বার্তা নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সভা করতে শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তাই পশ্চিমবঙ্গের সভাও সেই সুরেই বাঁধা থাকবে বলে কেউ কেউ ভেবেছিলেন। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের সামনেও ভারতের ‘রাজনৈতিক ঐক্যের’ ছবিই তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু বুধবার মোদী স্পষ্ট করে দিলেন যে, এই আবহে আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলকে তিনি আক্রমণ করবেন না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।

ভারত-পাক সংঘাত, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা বা ‘সিঁদুর অভিযান’ সংক্রান্ত বিষয়ে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মোদী সরকারকে বা বিজেপি-কে আক্রমণ করছেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রতি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র অভিযোগ এ সবের মধ্যেও মমতা তুলেছেন। এমনকি, নীতি আয়োগের বৈঠকেও তিনি যাননি। রাজ্য বিজেপির একাংশের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক মহলের সামনে ‘ঐক্য’ তুলে ধরলেও ঘরোয়া রাজনীতিতে মোদীকে আক্রমণ করা তৃণমূল বহাল রেখেছে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে এসে তৃণমূলকে বা মমতাকে আক্রমণ না-করার কোনও ‘বাধ্যবাধকতা’ মোদীর নেই।

মোদী কী বলতে পারেন, তা আগাম আন্দাজ করে বুধবার দুপুরে সর্বভারতীয় তৃণমূলের কংগ্রেসের ‘এক্স’ হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার একটি বক্তৃতার অংশ তুলে ধরা হয়। যেখানে মমতাকে ঘোষণা করতে শোনা যাচ্ছে আলিপুরদুয়ারে হাসপাতাল, রাস্তা সংস্কার, জয়ন্তী-বক্সার উন্নয়ন-সহ একাধিক খাতে জেলার জন্য রাজ্য সরকার কত টাকা খরচ করেছে। সেই সুরেই আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বুধবার বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারের মানুষের জন্য সত্যিই কিছু ইতিবাচক ঘোষণা করবেন। এর আগে বলেছিলেন, ডানকানের সব চা-বাগান খুলে দেবেন। কিন্তু খোলেননি। বলেছিলেন, চাশ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য এক হাজার কোটি টাকা দেবেন। দেননি।’’ প্রকাশ এ-ও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কী বলেন, তা দেখে নিয়েই জেলা তৃণমূল পরবর্তী কর্মসূচির পরিকল্পনা করবে।

ইতিমধ্যেই তৃণমূলের অন্দরে নির্দেশিকা জারি করে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘সিঁদুর অভিযান’ বা এসএসসি নিয়ে কোনও স্তরের কোনও নেতা যেন সংবাদমাধ্যমে মুখ না খোলেন। সন্ত্রাসবাদের নেপথ্যে পাকিস্তানের ভূমিকা এবং ‘সিঁদুর অভিযান’-এর কথা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে দেশ থেকে সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধিদল বিভিন্ন দেশে পৌঁছোচ্ছে। একটি দলে রয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেকও। বুধবার সেই দলটি রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। অভিষেক জাপান, মালয়েশিয়া সর্বত্রই একটি কথা বলছেন, ‘‘আমি বিরোধী দলের প্রতিনিধি। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং সন্ত্রাসবাদকে ঠেকানোর প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’’ অভিষেকের সেই বক্তব্য তুলে ধরে তৃণমূল ভিন্ন একটি ভাষ্য তৈরি করতে চাইছে। তৃণমূল দেখাতে চাইছে, দেশের স্বার্থে তৃণমূল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারলেও সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার ন্যায্য অর্থ আটকে রেখেছে। যা কুণালের কথা এবং তৃণমূলের পোস্টে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয়তাবাদের হাওয়া যাতে বিজেপি একক ভাবে কাড়তে না-পারে, সেই চেষ্টা তৃণমূল ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের অবস্থান এবং পহেলগাঁও হামলার পরে বাংলার শাসকদলের মধ্যে অবস্থানের মধ্যে মৌলিক ফারাক স্পষ্ট।

১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা এবং গ্রাম সড়ক যোজনা— এই তিনটি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ হওয়ায় রাজ্য সরকার নিজেদের কোষাগার থেকে সেই অর্থ দিচ্ছে। চলতি মাসেই ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ (প্রত্যেককে ৬০ হাজার টাকা করে) দিয়েছে নবান্ন। প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পরে সেই বকেয়ার প্রসঙ্গ আবার তুলে ধরা শুরু করল তৃণমূল।

PM Narendra Modi West Bengal Politics BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy