Advertisement
E-Paper

ঠাকুরবাড়ির ভাঙনে দূরত্ব রাখছে তৃণমূল

চূড়ান্ত পারিবারিক আকচাআকচির মধ্যেই ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে নতুন ‘সঙ্ঘাধিপতি’ হিসেবে ঘোষণা করে দিলেন বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর। যদিও এই ঘোষণার ফল কী, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মঞ্জুল দলের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর গড়া কমিটি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে হাওয়া বোঝার চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি হিসেব কষছে, এই ঘোলাজলে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কত মতুয়া ধর্মাবলম্বী ভোটার তাদের দিকে ঢলে পড়তে পারেন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
সভাস্থল থেকে ঘরে ফিরছেন বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর। সঙ্গে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে শান্তনু ঠাকুর (বাঁ দিকে)। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সভাস্থল থেকে ঘরে ফিরছেন বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর। সঙ্গে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে শান্তনু ঠাকুর (বাঁ দিকে)। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

চূড়ান্ত পারিবারিক আকচাআকচির মধ্যেই ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে নতুন ‘সঙ্ঘাধিপতি’ হিসেবে ঘোষণা করে দিলেন বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর। যদিও এই ঘোষণার ফল কী, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। মঞ্জুল দলের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর গড়া কমিটি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে হাওয়া বোঝার চেষ্টা করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি হিসেব কষছে, এই ঘোলাজলে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কত মতুয়া ধর্মাবলম্বী ভোটার তাদের দিকে ঢলে পড়তে পারেন।

ঠাকুরবাড়িতে এ বারের অস্থিরতার শুরু আগের সঙ্ঘাধিপতি, বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে তথা বনগাঁর সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পর থেকে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার দিন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের নতুন কমিটি গড়া হয়। সেই মতো বৃহস্পতিবার ছোটছেলের হাতে লাল-সাদা নিশান তুলে দিয়ে তাঁকে সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে ঘোষণা করেন বীণাপাণি দেবী। কিন্তু এক দিন আগেই, বুধবার কপিলবাবুর স্ত্রী মমতাবালা আর একটি কমিটি গঠন করেছেন। এবং তাঁর দাবি, বড়মার অনুমোদন ও আশীর্বাদ তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “বুধবারের ওই কমিটি ভক্তরাই তৈরি করেছেন। আমি কেউ নই। কোনটা আসল কমিটি, কোনটা নকল কমিটি তা মতুয়া ভক্তরাই ঠিক করবেন।”

এই পরিস্থিতিতে ঠাকুরবাড়ির কর্তৃত্ব কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে মতুয়া সমাজের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। মতুয়া ধর্মাবলম্বীদের একটা বড় অংশই যে এই অরাজকতা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক দলই বুঝতে চাইছে, ভোটারদের বড় অংশ কার সঙ্গে রয়েছেন। যে পরিবারের আশীর্বাদ নিতে কয়েক বছর আগেও তৃণমূল নেত্রী নিজে এসেছেন, তাদের থেকেই আপাতত কিছুটা হলেও দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে শাসকদল।

রাজ্যের ত্রাণ ও উদ্বাস্তু দফতরের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ এ দিন যে উপদেষ্টা কমিটি গড়েছেন, তাতে মুকুল রায়, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস-সহ তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে। তাঁর বিরোধী শিবিরের দাবি, এর পিছনে আসলে মঞ্জুল ও তাঁর বড় ছেলে সুব্রতর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙক্ষা রয়েছে। ২৫১ জনের ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সুব্রতকেই। তাঁর দাবি, “উপদেষ্টামণ্ডলীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা আগেও ছিলেন। এ বারও তাঁরা রয়েছেন।” তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তৃণমূল নেত্রী কয়েক বছর আগে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদস্যও হয়েছিলেন। জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য বলেন, “মঞ্জুলবাবু আমায় ফোন করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আমায় না রাখলেই ভাল। পারিবারিক দ্বন্দ্বের মধ্যে আমরা ঢুকতে চাই না।” আর এক বিধায়কের দাবি, “আমার নাম যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা হচ্ছে, তা আমায় আগে জানানো হয়নি।”

উপদেষ্টামণ্ডলীতে নাম রয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনে কপিলকৃষ্ণের বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে পরাজিত, মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রাক্তন সম্পাদক কে ডি বিশ্বাসেরও। সুব্রতর ব্যাখ্যা, “উনি সময় দিতে পারেন না। তাই ওঁকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা হয়েছে।” কে ডি বলেন, “একটিই দলকে নিয়ে ঠাকুর পরিবারে দু’টি শিবির হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতা নিয়ে এই বিভাজন ভক্তেরা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তৃণমূলকে এর ফল ভুগতে হবে।” কে ডি-কে দাঁড় করিয়ে গত নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট টেনেছিল বিজেপি। বামেরা পেয়েছিল ৩১ শতাংশ, তৃণমূল ৪৩ শতাংশ। বাম ভোট বিজেপির দিকে সরে যাওয়ার ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তৃণমূলের বিপদ ঘটতে পারে। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূল এখন কাউকে কাছে টানতে পারে বা কাউকে দূরে ঠেলতে পারে। কিন্তু মতুয়া ভক্তেরা কোনও দল বা পরিবারের ক্রীতদাস নন।”

সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের বনগাঁ মহকুমা কমিটি সম্পাদক মনোজ টিকাদারের মতো কেউ-কেউ মঞ্জুলের পাশে দাঁড়ালেও ঠাকুরবাড়িতে আসা ভক্তেরা অনেকেই কিন্তু এ দিন ক্ষোভ উগরে দেন। রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতার দখল নিয়ে ঠাকুর পরিবারের দ্বন্দ্ব যে তাঁরা মানতে পারছেন না, এ দিন অনেকের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভেই তার প্রমাণ মিলেছে। নাটমন্দিরে বসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুকুন্দপুর থেকে আসা সুধানন্দ হালদার, বাঁকুড়া থেকে আসা বিমল বিশ্বাস বা টাকি থেকে আসা হরিপদ মণ্ডলেরা বললেন, “আমরা চাই, ঠাকুরবাড়ির কেউ যেন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখেন। আমরা ধর্ম নিয়েই থাকতে চাই।” দু’টি আলাদা কমিটি প্রসঙ্গে তাঁদের বক্তব্য, “আমরা চাইছি, ভক্তদের মতামত নিয়ে একটি অভিন্ন কমিটি তৈরি করা হোক।” বিজেপির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত বলেন, “তৃণমূল যদি এক পক্ষকে টিকিট দিয়ে ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ কাজিয়ায় ইন্ধন দেয়, সাধারণ মতুয়া ভক্তেরা সেটা ভাল ভাবে নেবেন না। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াব।”

matua thakurnagar manjulkrishna thakur tmc bjp simanta moitra state news online state news binapani devi bongaon loksabha family clash tmc not interfare
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy