E-Paper

তামান্নার গ্রামে পলাতক নেতা, বাড়ি তালাবন্ধ

পাশেই সাদা দোতলা বাড়ির মালিক গাওয়াল শেখ তৃণমূলের বুথ সভাপতি এবং অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। আনোয়ারের আত্মীয়ও বটে।

সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ১০:০৬
অভিযুক্ত গাওয়াল ও আনোয়ার সেখের বাড়ি। বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জে।

অভিযুক্ত গাওয়াল ও আনোয়ার সেখের বাড়ি। বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জে। ছবি: সন্দীপ পাল।

একের পরে এক তালাবন্ধ দরজা। নিশ্চুপ পাড়াপড়শি।

কালীগঞ্জে ভোটগণনার দিন উড়ে আসা বোমায় নিহত তামান্না খাতুনের গ্রাম মোলান্দি।

বেলেপাড়ায় তামান্নাদের বাড়ির সামনের পুকুর পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠলেই চোখে পড়ে, দক্ষিণপাড়ায় পর পর দুটো পেল্লায় বাড়ি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারই একটার দোতলার ছাদে উড়ছিল তৃণমূলের পতাকা। বাড়ির মালিক আনোয়ার শ‌েখ আপাতত গ্রেফতার হয়ে জেলে। পরিবারের বাকিরা গ্রামছাড়া, বাড়ি তালাবন্ধ।

পাশেই সাদা দোতলা বাড়ির মালিক গাওয়াল শেখ তৃণমূলের বুথ সভাপতি এবং অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। আনোয়ারের আত্মীয়ও বটে। সে বাড়ির সদর দরজাতেও তালা। গাওয়াল ফেরার, তার পরিবার-পরিজনও এলাকায় নেই।

গত সোমবার নিজের বাড়ির উঠোনে খুন হয় সিপিএম সমর্থক পরিবারের দশ বছরের মেয়েটি। রাতে ২৪ জনের নামে খুনের অভিযোগ জানান তার মা সাবিনা খাতুন। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জন গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে আনোয়ার ছাড়াও রয়েছে তার ছেলে সারিকুল, দুই ভাই মানোয়ার ও আদর, আদরের ছেলে কালু।

রাস্তার সামনের দিকে আনোয়ার আর গাওয়ালের বাড়ি, তার পিছনে মানোয়ার আর আদরের বাড়ি। ভিতর দিয়ে একটি থেকে অন্যটিতে যাওয়ার রাস্তা আছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, গোটা এলাকার ক্ষমতার রাশ ওই চার বাড়ির ‘হাতে ধরা’। এই তৃণমূল নেতাদের রোজগারের একটা বড় রাস্তা হল ‘সালিশি সভা’ বসানো।বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা হোক বা জমিজিরেত নিয়ে কাজিয়া। এ ছাড়া, পঞ্চায়েতের ঠিকাদারি হোক বা জমি কেনাবেচার কারবার, এদের ‘প্রণামী’ দিতেই হয়। এমনকি, পাড়ার পুকুর থেকে মাছ ধরা হলেও বড় মাছটা তাদের বাড়িতেই পৌঁছতে হবে। প্রতিবাদ করলে জুটবে মারধর। মোলান্দির এ-পাড়া ও-পাড়ায় ছড়িয়ে থাকা আরও নানা অভিযুক্তের বাড়িও একই রকম বন্ধ পড়ে। পুলিশের ভয় তো আছেই, অনেকে বদলার ভয়ও পাচ্ছে। এই গ্রামে তৃণমূল-সিপিএম সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। দক্ষিণপাড়া থেকে কিছু দূরে মাঠপাড়ায় আর এক অভিযুক্ত আবুল কাশেমের বাড়িতে গিয়ে অবশ্য দেখা মিলল তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বিবি ও মেয়ে জোৎস্না খাতুনের। বাড়ির সামনে সানশেডে বাঁশের ডগায় তৃণমূলের পতাকা জড়িয়ে রাখা। ঘরের লাগোয়া চকলেট-চিপসের দোকান। স্কুলে যেতে-আসতে সেখানে প্রায়ই চকলেট কিনতে আসত তামান্না।

ঘটনার পর থেকেই কাশেম পলাতক। সুফিয়া বলেন, “যা হয়েছে, খুব খারাপ হয়েছে।” তবে তাঁর দাবি, “আমার স্বামীর বয়স প্রায় ষাট, সুগার-প্রেশারের সমস্যা আছে। যখন ওই ঘটনা ঘটে, উনি ঘরে বসে টিভিতে ভোটের ফল দেখছিলেন। সিপিএমের লোকেরা ওঁর নাম জড়িয়ে দিয়েছে।” তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস আচার্যের দাবি, “ওখানে গাওয়াল আর তার সাঙ্গোপাঙ্গদের কীর্তি সবাই জানে। যাদের নামে অভিযোগ হয়েছে, সকলেই জড়িত ছিল।” তৃণমূলের বড় চাঁদঘর অঞ্চল সভাপতি বরুণ সিংহ রায় পাল্টা বলেন, “একটা বাচ্চা মারা গিয়েছে। সেই সুযোগে ওঁরা যা খুশি অভিযোগ করে, মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন।” নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে ফুঁসে ওঠেন তামান্নার মা সাবিনা, “সব ক’টা শয়তান! গাওয়াল এখনও ধরা পড়ল না কেন?” কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ বলেন, “আমরা সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। খুব শীঘ্রই অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kaliganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy