দত্তাবাদের স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূলের কোচবিহার-২ ব্লকের সভাপতি সজল সরকারকে বৃহস্পতিবার বিধাননগর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন তাঁকে। বুধবার বিধাননগর পুলিশের একটি দল শিলিগুড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বলে জানা গিয়েছে।
সজলের আইনজীবী বৃহস্পতিবার আদালতে দাবি করেন, গ্রেফতারির পরে তৃণমূল নেতাকে ট্রানজিট রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। সরকারি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, ধৃত রাজ্যের মধ্যেই রয়েছেন। গ্রেফতারির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও আইনভঙ্গ হয়নি। সরকারি আইনজীবী আদালতে সওয়াল করে আরও জানান, ব্যবসায়ীকে মারধরের ভিডিয়ো তুলেছিলেন বিডিও-র গাড়ির চালক। খুনের তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে সেই ভিডিয়ো এসেছে। তা নিয়ে সজলকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। ওই ভিডিয়োতে সজলকে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেন আইনজীবী। তিনি এ-ও জানান, এই ঘটনায় ধৃত দু’জনকে জেরা করেই সজলের নাম উঠে এসেছে।
সজলের বৌদি গায়ত্রী সরকার কোচবিহার-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। ধৃত নিজে দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। সজলের গ্রেফতারিতে অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই খুনের ঘটনায় সজলকে নিয়ে মোট তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন। ধৃতদের নাম রাজু ঢালি এবং তুফান থাপা। তাঁদের জেরা করছে পুলিশ। ব্যবসায়ীকে খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মণের। তিনি নিজেও কোচবিহার-২ ব্লকের বাসিন্দা।
মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম স্বপন কামিল্যা। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের নীলদা পোস্টঅফিস এলাকার দিলমাটিয়া গ্রামে। তবে থাকতেন দত্তাবাদে। পরিবারের অভিযোগ, ২৮ অক্টোবর দত্তাবাদের সোনার দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় স্বপনকে। পরে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে গিয়ে পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন, যাত্রাগাছি বাগজোলা খালপাড়ের ঝোপের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তির দেহ মিলেছে। স্বপনের ছবি দেখে সেই দেহ শনাক্ত করা হয়।
পরিবারের দাবি, বিডিও প্রশান্ত অপহরণ করেন স্বপনকে। পরে স্বপনকে খুন করে দেহ খালের ধারে ফেলে দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে পরিবারের দাবি, স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর স্বপনের দোকানের সামনে দু’টি গাড়ি আসে। একটি সাদা, অন্যটি কালো। একটি গাড়ির মাথায় নীলবাতিও লাগানো ছিল। ওই গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি নিজেকে প্রশান্ত বলে পরিচয় দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন। তাঁরাই স্বপন এবং তাঁর দোকানের মালিক গোবিন্দ বাগকে তুলে নিয়ে যান। প্রশান্ত নিজেকে বিডিও বলে পরিচয়ও দেন। এই ঘটনায় বুধবার গ্রেফতার হন কোচবিহারের তৃণমূল নেতা। তাঁকে বৃহস্পতিবার পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে বিধাননগর আদালত।