দিবাকর জানা। —ফাইল চিত্র
বরাবর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। সম্প্রতি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মারধরের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে। দল থেকে সাসপেন্ড হয়ে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতিতে যে তৃণমূল নেতাকে নিয়ে এত শোরগোল, সেই দিবাকর জানা সোমবারও জামিনের আবেদন করলেন না।
এ দিন দিবাকরকে পুলিশ তমলুক আদালতে তোলে। তবে জামিনের আবেদনের জন্য আইনজীবীর সাহায্য নেননি দিবাকর। বিচারক তাঁকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন। এলাকার দাপুটে নেতা হিসাবে পরিচিত দিবাকরের এমন পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দলের হাত সরে যেতেই কি দিবাকরের এই ভোলবদল!
যদিও দিবাকরের আইনজীবী রুদ্রনীল বেরার বক্তব্য, নথিপত্রের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জামিনের আবেদন জানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব নথি সংগ্রহ হয়নি। তাই এ দিন জামিনের আবেদন জানানো হয়নি।’’
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আধিকারিককে মারধরের ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর এবং আরও দুই তৃণমূল নেতার। আইনজীবী মহলের একাংশ দিবাকরের জামিনের আর্জি না জানানোর পিছনে দু’টি তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। প্রথমত, দিবাকর আত্মসমর্পণ করলেও অন্য দুই নেতা সেলিম আলি এবং অসিত চক্রবর্তী এখনও পলাতক। তাই তাঁরা ধরা পড়লে বা আত্মসমর্পণ করলে অভিযুক্তদের আইনজীবী এক সঙ্গে তিনজনের জামিনের আর্জি জানাতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, মারধরের ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের রিপোর্ট জমা দেওয়ার পক্ষে করছেন অভিযুক্তের আইনজীবী। তাতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আক্রান্ত আধিকারিক সিদ্ধার্থ ঘোষের মেডিক্যাল রিপোর্টে কী লেখা রয়েছে, তার হয়তো দেখার অপেক্ষা করছেন আইনজীবী। কারণ, দিবাকরের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। তাতে তারা জানিয়েছে, দিবাকরদের মারধরে গুরুতর আহত হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। বর্তমানে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সিদ্ধার্থ কলকাতার বাড়িতে রয়েছেন বলে খবর। ফলে আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, সিদ্ধার্থের মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখে জামিন চাওয়ার জন্য জোরাল আবেদন করতে পারবেন দিবাকরের আইনজীবী। মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সফিউল আলি খান বলেন, ‘‘দিবাকরের তরফে এ দিন আদালতে জামিনের আবেদন জমা পড়েনি। ওঁর ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজত হয়েছে। ওই দিনই মামলার কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে।’’
এ দিকে, দিবাকরকে দল এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক সংগঠনের পদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ওই কমিটি। এতে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব কার হাতে যাবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দিবাকরকে সাসপেন্ড করার পরই গত শুক্রবার আইএনটিটিইউসি-র সদ্য নিযুক্ত জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু রায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেখানে তৃণমূলের ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন কমিটি গড়ার জন্যও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘দিবাকর ও সেলিমকে শ্রমিক সংগঠন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে এবিষয়ে জানিয়েছি। নতুন কমিটি গড়ার জন্য দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।’’
এতদিন তৃণমূলের ব্লক কমিটিতে দিবাকর ও তাঁর অনুগামীদের প্রাধান্য ছিল বেশি। বর্তমানে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা জয়দেব বর্মণ এবং তাঁর অনুগামীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। দলের জরুরি বৈঠকেও শুধু জয়দেব ও তাঁর অনুগামীদের ডাকা হয়েছে। আগামী বিধানসভার ভোটের আগে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্লক নেতৃত্বের রদবদলেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, এ নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী শীঘ্রই ব্লক নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy