Advertisement
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Madan Mitra on IPAC

‘পদ দেওয়ার নামে টাকা তুলেছে আইপ্যাক’, মদনের নিশানায় পেশাদার সংস্থা, মিত্র নিয়ে কী বলছে দল?

আইপ্যাক যখন কাজ শুরু করেছিল, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উঠেছিল। প্রাক্‌ ২০২১ পর্বে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামে স্থানীয় তৃণমূলের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছিল ওই সংস্থার কর্মীদের।

TMC Leader Madan Mitra’s Comments on IPAC Creates new controversy in the Party

কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২৯
Share: Save:

গত কয়েক মাস ধরে একাধিক পদক্ষেপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বার্তা’ দিচ্ছেন, তিনিই সরকার এবং দলে শেষ কথা! সম্প্রতি মমতা বিধানসভার পরিষদীয় দলের বৈঠকেও বলেছেন, ‘‘কোনও প্যাক-ফ্যাকের কথা শুনবেন না!’’ তৃণমূলের সর্বময় নেত্রীর ওই বক্তব্য থেকে দলের নেতারা যা বুঝেছিলেন, তা হল মমতা নিশানা করেছেন তৃণমূলের ‘পরামর্শদাতা সংস্থা’ আইপ্যাককে। সোমবার ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আরও জোরালো অভিযোগ এনেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি আইপ্যাকের বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ তুলেছেন! যা নিয়ে সরস্বতী পুজোর দিন তৃণমূলের বীণায় নতুন করে ‘দ্বন্দ্বের সুর’ বাজতে শুরু করেছে।

সোমবার এবিপি আনন্দকে মদন বলেছেন, ‘‘আমাদের পার্টিতে টাকায়পয়ার লেনদেন ছিল না। এই একটা এজেন্সি আমাদের পার্টিতে ঢুকল। তারা এ সব শুরু করল।’’ উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ‘ধাক্কা’ খাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই আইপ্যাককে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। তখন সংস্থার মাথায় ছিলেন প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। ২০১৯ সালের ‘ধাক্কা’ সামলে ২০২১ সালে তৃণমূল যে ভাবে জিতেছিল, তার নেপথ্যে অনেকেই আইপ্যাকের ভূমিকার কথা বলেন। কিন্তু মদনের দাবি, সেই ভোটেই টাকাপয়সা নিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূলের প্রবীণ বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘২০২১ সালের আগে এ সব শুরু হয়েছিল। টাকা নিয়েও নমিনেশন (মনোনয়ন) দেওয়া হয়নি। লোককে কাঁদতে দেখেছি!’’

আইপ্যাকের সমালোচনা করতে গিয়ে মদন এ-ও বলেছেন যে, ‘‘কামারহাটিতে আমাকে শেখানো হচ্ছে, সকালে উঠে কী ভাবে ব্রাশ করব! তার পর ডান দিকে তাকাব না বাঁ দিকে তাকাব। এরা শুরু করল!’’ মদন জানাচ্ছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নামী-দামি ছেলের কাছে শুনেছেন, তাঁরা কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ দিয়েছেন। মদনের কথায়, ‘‘এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছেন। তাঁরা কেউ নমিনেশন পাননি। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না। এত বড় বড় নাম তাঁদের।’’ মদনের দাবি, সেই সব লেনদেন পুরোটাই হয়েছিল নগদে। ফলে ‘প্রমাণ’ নেই।

তৃণমূলে এ কথা সর্বজনবিদিত যে, আইপ্যাকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর। গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে যে সমীকরণ দেখা যাচ্ছে, মদনের মন্তব্যকে অনেকেই সেই আলোয় দেখতে চাইছেন। তিনি কি অভিষেকের দিকে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন? মদনের জবাব, ‘‘অভিষেকের বিষয়ে আমার হাতে কোনও তথ্য নেই। তাই সরাসরি ওঁর নাম আমি বলতে পারি না।’’ তবে মদন বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও দুর্নাম ছিল না। যেটুকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গায়ে কালি লেগেছে, তা প্যাকওয়ালাদের জন্য।”

আইপ্যাক অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তাদের এক্স হ্যান্ডলেও এ বিষয়ে কোনও পোস্ট নেই। তবে আইপ্যাকের ‘ছোঁয়ায়’ থাকা তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘পুরোটা সাজানো।’’ ওই নেতারা মূলত দু’টি প্রশ্ন তুলছেন। এক, কেন একটি নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন মদন? দ্বিতীয়ত, কোনও পরিস্থিতি ছাড়াই কেন মদন হঠাৎ করে আইপ্যাককে আক্রমণ করতে গেলেন? কেউ কি তাঁকে এমন আক্রমণ করতে বলেছেন?

উল্লেখ্য, আইপ্যাক যখন কাজ শুরু করেছিল, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উঠেছিল। প্রাক্‌ ২০২১ পর্বে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামে স্থানীয় তৃণমূলের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছিল ওই পেশাদার সংস্থার কর্মীদের। তখন অনেক প্রবীণ নেতাও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাদের ‘নাক গলানো’ নিয়ে। তৃণমূলের অনেকেই আইপ্যাকের ভূমিকাকে ‘সমান্তরাল সংগঠন’ বা ‘পার্টির মধ্যে পার্টি’ তৈরি করা বলে অভিযোগ করেন। সে দিক থেকে মদনের অভিযোগ নতুন নয়। ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ এত সরাসরি কোনও নেতা এর আগে এতটা জোরগলায় এবং প্রকাশ্যে করেননি। কেন আচমকা এই প্রবীণ নেতা এমন মন্তব্য করলেন, তা কৌতূহল তৈরি করেছে শাসকদলের মধ্যে।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও আইপ্যাক তৃণমূলের জন্য পুরোদস্তুর কাজ করেছিল। প্রার্থী চয়নের ক্ষেত্রে তাদের সমীক্ষাকে গুরুত্বও দিয়েছিল দল। ভোটের ফলপ্রকাশের দিন দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছে তৃণমূল। মমতা আইপ্যাকের কর্তা প্রতীক জৈন এবং তাঁর টিমকেও ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে নানা ঘটনায় স্পষ্ট সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের (আইপ্যাকের দফতর) সঙ্গে কালীঘাটের ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। যেমন দলের মধ্যে ক্যামাক স্ট্রিট-কালীঘাটের দূরত্ব নিয়েও আলোচনা রয়েছে। বস্তুত, সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের মতো জেলার নেতাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মমতা বলেছেন, কোনও রাস্তার নামে লবিবাজি (গোষ্ঠী রাজনীতি) চলবে না। তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, মমতা রাস্তার নাম না করলেও ক্যামাক স্ট্রিটকেই নিশানা করতে চেয়েছেন।

মদনের বক্তব্য নিয়ে দলের তরফেও দু’রকম মত মিলেছে। দলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ মনে করছেন, মদনের বক্তব্য দলের সিনিয়র নেতাদের ‘বিবেচনা’ করা উচিত। তাঁর কথায়, “মদন মিত্র সিনিয়র নেতা। তিনি যেটা বলেছেন, সেটা আরও সিনিয়র নেতাদের বিবেচ্য বিষয়। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তবে কুণাল বলেননি যে, দলের ‘অভ্যন্তরীণ’ কথা এ ভাবে প্রকাশ্যে বলা যায় কি না। যা বলেছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব কথা দলের মধ্যেই বলা উচিত। এগুলো বাইরে বলা ঠিক নয়। আমি এ নিয়ে কিছু বলব না।’’

তবে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই বলছেন, মদনের রাজনৈতিক জীবন নেহাত কম দিনের নয়। তিনি একেবারে না ভেবেচিন্তে কথাটা বলেছেন, তা নয়। এখন দেখার, মদনের এই কথার জল কত দূর গড়ায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Madan Mitra TMC MLA Tmc Leader IPAC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy