Advertisement
E-Paper

মহাশ্মশানে বুলেটের খোঁজ! বুলেট-গতিতে তৎপর দুই নেতা! প্রতিযোগিতার তত্ত্ব নস্যাৎ করছেন পদ্ম-নেতৃত্ব

নানা সাংগঠনিক পরিবর্তনের গেরোয় বুলেটের গুরুত্ব কমেছিল। সংগঠনে তলিয়ে যান স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বুলেট কেমন আছেন, কী করছেন, সে খবর প্রায় কারও কাছেই ছিল না।

BJP leadership activated after photos of ailing former state committee member hits social media

(বাঁদিকে) রাজ্য কমিটিতে তখন সক্রিয় বুলেট। তারাপীঠে ভিক্ষাবৃত্তি বুলেটের (ডানদিকে)। ছবি: ফেসবুক।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:২৩
Share
Save

উপলক্ষ্য দলের রাজ্য কমিটির এক প্রাক্তন সদস্যের অসুস্থতা। যাকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় রাজ্য বিজেপির দুই সর্বোচ্চ নেতার ‘প্রতিযোগিতা’। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, কোনও ‘প্রতিযোগিতা’ নয়। বরং ‘পরস্পরের পরিপূরক’ হিসাবেই কাজ করেছেন দুই শীর্ষনেতা।

বঙ্গ বিজেপির স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ইন্দ্রজিৎ সিংহ (বুলেট) নিজেই স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে ধুঁকছিলেন। অসুস্থতা গুরুতর। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। অসুস্থতার জেরে কোনও কাজও করতে পারছিলেন না। ফলে অন্নসংস্থানও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য অবশেষে তারাপীঠ মহাশ্মশানে ভিক্ষা করতে শুরু করেন বুলেট। তারাপীঠে তাঁর ভিক্ষাবৃত্তির ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়াতেই দলের অন্দরে হইচই শুরু হয়। জেলা সভাপতিকে ফোন করে অবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর নির্দেশ দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু জেলা সভাপতিকে পুরো বন্দোবস্ত করতে হয়নি। রাতারাতি বুলেটের জন্য কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফেললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

BJP leadership activated after photos of ailing former state committee member hits social media

বাইপাস সংলগ্ন হাসপাতালে বুলেটকে ভর্তি করার বন্দোবস্ত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: ফেসবুক।

কয়েক বছর আগে পর্যন্তও কলকাতার বুকে বিজেপির যে কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যেত বুলেটকে। রাজনীতিতে হাতেখড়ি অবশ্য কংগ্রেসের পতাকা ধরে। উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় কখনও ভাড়া বাড়ি, কখনও মেসে থাকতেন। বছর দশেক আগে বিজেপিতে যোগদান রাহুল সিংহের হাত ধরে। দিলীপ ঘোষের জমানায় ‘গুরুত্ব’ আরও বাড়ে। একটা সময়ে দলের অসুস্থ কর্মী-সমর্থকদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর কাণ্ডারি ছিলেন এই বুলেটই। ফলে তাঁকে রাজ্য কমিটির ‘আমন্ত্রিত সদস্য’ করে নেওয়া হয়। পরে নানা সাংগঠনিক পরিবর্তনের গেরোয় বুলেটের গুরুত্ব কমে। সংগঠনে প্রায় তলিয়ে যান স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বুলেট কোথায় রয়েছেন, কেমন আছেন, কী করছেন, সে খবর প্রায় কারও কাছেই আর ছিল না। মুর্শিদাবাদ জেলার কিছু বিজেপি কর্মী সম্প্রতি তারাপীঠে গিয়ে তাঁকে দেখতে পান বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বুলেটকে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করতে হচ্ছে, এই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দলের অন্দরে হইচই শুরু হয়।

বুলেটের পরিস্থিতির খবর পেয়ে বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত অবিলম্বে বুলেটের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। রবিবার সে কথা সুকান্ত নিজেই সমাজমাধ্যমে জানান। তবে ধ্রুবকে বা বীরভূম জেলা কমিটিকে বুলেটের চিকিৎসার ভার নিতে হয়নি। কারণ, ততক্ষণে ‘সক্রিয়’ হয়ে গিয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। রবিবার রাতেই কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে এক মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে বুলেটকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে ফেলেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে, তার পরেই শুভেন্দুর এক ‘অনুগামী’ কারও নাম না করে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘ফেসবুকে লেখা আর করার মধ্যে ফারাক রয়েছে বিস্তর।... কোনও বিজ্ঞাপন না করে ওঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গাড়ি পাঠিয়ে বুলেট’দাকে রাত দুটোর সময় তারাপীঠ মহাশ্মশান থেকে তুলে নিয়ে সোজা কলকাতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সব রকম চিকিৎসার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেন।’ বুলেটের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ওই পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘আর বুলেট’দার মতো অসংখ্য মানুষের এই রকম কাজ উনি প্রতিনিয়ত করে চলেছেন সমগ্র রাজ্য জুড়ে। সেই হিন্দু বাঙালির হৃদয়সম্রাটকে শতকোটি প্রণাম।’

বিজেপির অন্দরের খবর, এই ‘সম্রাট’ শুভেন্দু। নইলে তাঁর ‘অনুগামী’ আর কার কথাই বা লিখবেন? যদিও রাজ্য বিজেপির অন্য একাংশের বক্তব্য, শুভেন্দু গাড়ি পাঠাননি। গাড়ি পাঠিয়েছিলেন বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব। তবে সেই অংশের বিজেপি নেতারাও মেনে নিচ্ছেন যে, বুলেটকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন শুভেন্দুই। তবে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘এ রকম কাজ অনেক করে থাকি। তবে প্রচারের আশায় করি না।’’

শুভেন্দু যা-ই বলুন, তাঁর অনুগামীর পোস্টে যে ‘ইঙ্গিত’ রয়েছে, তা সুকান্তকে ঠেস দিয়ে লেখা বলেই অনেকে মনে করছেন। সুকান্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘কোনও প্রতিযোগিতার প্রশ্নই নেই। আমরা প্রত্যেকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দলের এক কর্মীর এই অবস্থা জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে বলেছি। জেলা সভাপতি সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় হয়েছেন। তাঁকে কলকাতায় পাঠানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন। শুভেন্দুদা কলকাতায় ভাল হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সবাই হাত মিলিয়ে কাজ করেছি তো! এতে প্রতিযোগিতার কিছু নেই।’’

West Bengal BJP West Bengal Politics Suvendu Adhikari Sukanta Majumdar Tarapith

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}