সমবায় ভোটে বিজেপিকে রুখতে এক ছাতার তলায় এল বাম-তৃণমূল! এমনই দৃশ্য ধরা পড়ল পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরে। রবিবার চণ্ডীপুরের গোবর্ধনপুর সমবায় সমিতির ভোট ছিল। গণনা পর্ব শেষে দেখা গেল, খাতাই খুলতে পারল না বিজেপি শিবির।
গোবর্ধনপুর সমবায় সমিতিতে মোট ৯টি আসন রয়েছে। ভোটার আছেন প্রায় ৯৫০ জন। সমবায় নির্বাচনগুলিতে কোনও রাজনৈতিক দল সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না। দলীয় প্রতীকেও ভোট হয় না। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থীরা ভোটে লড়েন।
এত দিন পর্যন্ত তৃণমূল সমর্থিত প্যানেলের হাতেই ছিল এই সমবায়টি। এ বারের নির্বাচনে একক ভাবে ৯ আসনেই প্রার্থী দেয় বিজেপি সমর্থিত প্যানেল। অন্য দিকে তৃণমূল সমর্থিত প্যানেল থেকে সাতটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়। বাম সমর্থিত প্যানেল প্রার্থী দেয় দু’টি আসনে। গণনা শেষে দেখা যায়, সব আসনেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল এবং বাম প্রার্থীরা। ধরাশায়ী হয়েছেন বিজেপির প্রার্থীরা।
বস্তুত, সমবায় ভোটের জন্য বাম এবং তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা এক ছাতার তলায় এলেও, এটিকে কোনও ‘জোট’ বলে মানতে নারাজ তারা। সমবায় ভোটে বাম এবং তৃণমূল উভয় পক্ষের প্রার্থীরাই ‘সমবায়ী সমন্বয় কমিটি’-র ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তাই এটিকে সরাসরি কোনও ‘জোট’ বলে স্বীকার করছে না বাম-তৃণমূল কোনও পক্ষই।
তৃণমূলের চণ্ডীপুর ব্লক সভাপতি স্নেহাংশুশেখর পণ্ডিতের কথায়, “এখানে সমবায়ী সমন্বয় কমিটির ব্যানারে লড়াই হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৭ জন কট্টর তৃণমূল। বাকিরাও সমবায়ের উন্নয়নে শামিল। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের লক্ষ্যেই ভোট হয়েছে।” প্রকাশ্যে কোনও ‘জোটে’র কথা স্বীকার করতে চায়নি সিপিএমও। সিপিএমের চণ্ডীপুর অঞ্চলের সংগঠনের আহ্বায়ক আশিস গুছাইতের বক্তব্য, “আমরা ৫টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। পরে তিন জন নাম প্রত্যাহার করে নেন। সেই সময়ে তৃণমূলের তরফে সমবায়ী সমন্বয় কমিটির জোট ঘোষণা হয়। কিন্তু আমরা দলীয় ভাবে দুই প্রার্থীকে নিয়ে জোট করিনি। সেটা আমরা হ্যান্ডবিল প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছি।”
আরও পড়ুন:
তবে সমবায়ে হারের পরে বাম-তৃণমূলের ‘আঁতাত’ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিজেপি শিবির। চণ্ডীপুরের সমবায় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের দাবি, “বিজেপি-কে হারানোর জন্য রাজনৈতিক আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অশুভ আঁতাত গড়েছে তৃণমূল ও সিপিএম। মানুষ সব দেখছে।” বস্তুত, চণ্ডীপুর বিধানসভা বর্তমানে তৃণমূলের হাতেই রয়েছে। নিজেদের বিধানসভা এলাকার সমবায় ভোটেই রাজ্যের শাসকদল অকারণেই দু’টি আসনে প্রার্থী দেয়নি— এই তত্ত্বও মানতে নারাজ বিজেপি শিবির। স্থানীয় বিজেপি নেতা বিপ্লব মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূলের বিধানসভা এলাকা, অথচ সেখানেই সব আসনে প্রার্থী পায়নি শাসকদল? তারা বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছে। বিজেপি একক শক্তিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে এবং খুব অল্প ব্যবধানে হেরেছে৷ এটা বিজেপির নৈতিক জয় হিসাবেই দেখছি আমরা।”