E-Paper

নোনা জল ঢুকিয়ে দখল চাষের জমি!

মামলাকারীরা জানান, হাই কোর্টের নির্দেশে নদীবাঁধ মেরামত হয়। ভেড়িতে জল ঢোকানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে ফের বাঁধ কেটে জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়।

নির্মল বসু , নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:১১
Shahjahan Sheikh

শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।

গত এক দশকে সন্দেশখালি জুড়ে ধান ও আনাজ চাষ কমেছে। লাফিয়ে বেড়েছে মাছ চাষ। ফসলের জমি রূপান্তরিত হয়েছে মেছোভেড়িতে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই ধামাখালিতে চায়ের দোকানে কাপ-প্লেট ধুয়ে যিনি জীবন শুরু করেছিলেন, সেই শেখ শাহজাহানই বদলে দিয়েছিলেন এলাকার এই চাষ-চিত্র। যিনি ঘনিষ্ঠদের কাছে বলতেন, ‘নোনা জলে সোনা ফলে’। তবে, সোজা পথে শাহজাহানের ‘সোনা’ ফলছে না, অভিযোগ এমন বহু মানুষের, যাঁরা তাঁর বাহিনীর দাপটে চাষের জমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

অভিযোগকারীদের মধ্যে কোরাকাটি পঞ্চায়েতের তুষখালি গ্রামের গোলাম গাজি, দেলোয়ার মোল্লা, নেশার আহমেদ মোল্লারা সাহস করে আদালত পর্যন্ত গিয়েছেন। তবে, ‘হুমকি’র জেরে ঘর ছেড়ে তাঁদের কলকাতায় ঠাঁই নিতে হয়েছে। বদলে গিয়েছে জীবিকাও। চাষ ছেড়ে তাঁরা শ্রমিকের কাজ করছেন। কিন্তু তাঁরা পিছোচ্ছেন না।

কী বলছেন গোলাম, দেলোয়াররা? তুষখালি গ্রামে বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত কয়েকশো বিঘা জমিতে ধান চাষ হত। অভিযোগ, শাহজাহান বাহিনী সেই জমির দখল নেয়। জমিটিকে ভেড়িতে বদলে দেওয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতি কাজে লাগাত শাহজাহান বাহিনী, অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁদের দাবি, দখল নেওয়া চাষের জমিতে পাশের রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ কেটে নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে সেখানে শুরু হয় মাছের চাষ। দেলোয়ারেরা গত বছর কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন শাহজাহানদের বিরুদ্ধে।

মামলাকারীরা জানান, হাই কোর্টের নির্দেশে নদীবাঁধ মেরামত হয়। ভেড়িতে জল ঢোকানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে ফের বাঁধ কেটে জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়। দেলোয়ার বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় আমরা সুপ্রিম কোর্টেও যাই। সেখান থেকে মামলা হাই কোর্টেই ফেরত পাঠানো হয়। আগামী সপ্তাহে মামলার শুনানি আছে। আমাদের জমি আছে ওই ভেড়ির ভিতরে।’’ অধিকাংশ গ্রামবাসীই মুখ বুজে রয়েছেন। তবে, শাহজাহান বেপাত্তা হওয়ার পরে কয়েক দিন কেটে যাওয়ায়, কেউ কেউ মুখ খুলছেন নাম না-প্রকাশের শর্তে। তাঁদের অভিযোগ, অল্প বয়সে ভেড়ির মাছ চুরি ও ধামাখালি বাস স্ট্যান্ডে ছিনতাইয়ের অভিযোগে কয়েক বার হাজতবাস করতে হয়েছে শাহজাহানকে। সন্দেশখালি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দ্বারিকাজঙ্গল মৌজা। বছর খানেক আগে কয়েকশো বিঘার চাষজমিতে হঠাৎ এক রাতে নদীর নোনা জল ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, শাহজাহানের মদতে এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা এখানে ভেড়ি তৈরি করার জন্য এই কাণ্ড ঘটান।

বছরের পর বছর এই ভাবেই কি ‘সোনা’ ফলিয়েছেন শাহজাহান, সরকারের নাকের ডগায়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shahjahan Sheikh TMC sandeshkhali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy