জঙ্গলমহলের সমবায় নির্বাচনে ফের হারতে হল তৃণমূলকে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল যেখানে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত বাঘমুণ্ডিকে পাখির চোখ করছে, রবিবার সেই বাঘমুণ্ডি ইউনাইটেড ফার্মার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যান্ড ল্যাম্পস-এর ভোটেই কংগ্রেসের কাছে হার স্বীকার করতে হল তৃণমূলকে। এবং নেপালবাবু ফের প্রমাণ করলেন, বাঘমুণ্ডি অন্তত এখনও তাঁরই খাসতালুক!
অযোধ্যা পাহাড়-সহ বাঘমুণ্ডি ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই সমবায়টি নিছকই কৃষি উন্নয়ন সমবায় নয়। এর সঙ্গে ল্যাম্পসও যুক্ত। ভোটার সংখ্যা ৬,৮৯৮। সমবায়ের সঙ্গে ল্যাম্পস যুক্ত হওয়ায় ভোটারদের একটি বড় অংশই আদিবাসী। রবিবারের ভোটে সমবায়ের মোট ৩৫টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস একাই দখল করেছে ২৩টি। সেখানে তৃণমূলের প্রাপ্তি ৮টি। বামফ্রন্টের (ফব) ঝুলিতে গিয়েছে বাকি ৪টি আসন। অযোধ্যা, মাঠা, সিন্দরি ও বাঘমুণ্ডি—এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে এই সমবায়ের আওতায়। সম্প্রতি পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বান্দোয়ানেও একটি ল্যাম্পস-এর নির্বাচনে হেরেছে তৃণমূল। বান্দোয়ান সাউথ ল্যাম্পস নামে আদিবাসীদের ওই সমবায়ের একটি আসনেও প্রার্থ়ী দিতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। তার আগে বাঁকুড়ার তালড্যাংরাতেও একটি কৃষি সমবায়ে বামেদের কাছে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল তৃণমূলকে।
এ বার কংগ্রেস হারাল তাদের। অথচ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘমুণ্ডি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি গয়াসুর মাঝি এই সমবায়ের নির্বাচনে স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ফল প্রকাশের পর কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া, ভোটে হারার ভয়েই উনি ভোটটাই আটকাতে চেয়েছিলেন।
গয়াসুরবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি নিজে এই ল্যাম্পসের এক জন সদস্য। স্বচ্ছতার জন্যই কিন্তু আমি এক সদস্য হিসেবে স্থগিতাদেশ চেয়ছিলাম। তৃণমূল নেতা হিসেবে নয়।’’ তাঁর দাবি, ভোটার তালিকার সংশোধন, নিয়মিত সাধারণ সভা, হিসাব পরীক্ষা-সহ নানা দাবিতে তিনি আদালতে এই ভোটের উপরে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন।তিনি সমবায়ে নির্বাচনের বিরুদ্ধে নন। এখন বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখানো হচ্ছে। বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি ভোট আটকাতে আদালতে মামলা করেছিলেন। আদালত সেই মামলা খারিজ করার পাশাপাশি উল্টে তাঁকেই আর্থিক জরিমানা করেছে, আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য!’’ গয়াসুরবাবুর দাবি, আদালত তাঁকে জরিমানা করেনি। পারলে নেপালবাবু সে ব্যাপারে প্রমাণ দিন। শুনে নেপালবাবুর পাল্টা, গয়াসুরবাবু চাইলে রায়ের কপি কাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, অযোধ্যা পঞ্চায়েত এলাকার ৯টি আসনের মধ্যে ৫টি কংগ্রেস, ৩টি ফরওয়ার্ড ব্লক, ১টি তৃণমূল পেয়েছে। মাঠা গ্রাম পঞ্চায়েতে অবশ্য তুলনায় ভাল ফল হয়েছে তৃণমূলের। এখানকার ৪টি আসনের মধ্যে ২টি পেয়েছে তারা। একটি করে আসন পেয়েছে কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে, বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত এলাকার ১৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস একক ভাবে পেয়েছে ৮টি। তৃণমূল ও ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছে যথাক্রমে ৫টি ও ১টি আসন। আর সিন্দরি পঞ্চায়েত এলাকার ৮টি আসনের সবগুলিই দখল করেছে কংগ্রেস। চারটি পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই অধিকাংশ ভোটারের সমর্থন গিয়েছে কংগ্রেসের দিকে। সিন্দরিতে শাসকদল দাঁতই ফোটাতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঘমুণ্ডি ব্লকের এক তৃণমূল নেতার ক্ষোভ, ‘‘দল এমন লোকজনকে এই এলাকায় দায়িত্বে রেখেছে, যাঁদের পক্ষে সমর্থন নেই। পরের পর ভোটে তার প্রমাণ মিলছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মানুষ কংগ্রেসকেই সমর্থন করেছেন।’’
কিছুদিন আগে ধনুডি স্কুল কমিটির ভোটেও দলের ভরাডুবি ঘটেছে। এই তৃণমূল নেতা বলেছেন, ‘‘বাঘমুণ্ডির গোবিন্দপুরে ব্লক সভাপতি থাকেন। সেখানকার তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস, একটি এসেছে আমাদের পক্ষে। আর সিন্দরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক যুব নেতা থাকেন। সেখানে দল খাতাই খুলতে পারেনি।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বক্তব্য, ‘‘এই সমবায়ে আমাদের আটটি আসন এসেছে। আগে তো তা-ও ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy