Advertisement
E-Paper

সংযমের বার্তা উড়িয়ে চলছে হুমকি, মানুষ মরলে জনরোষের দায়িত্ব কার, প্রশ্ন হুমায়ুনের

হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘মানুষ চিকিৎসা না-পেয়ে মারা গেলে জনরোষের দায়িত্ব কে নেবে?’’ তাঁর হুমকি, ‘‘আমরাও রাস্তায় নামব। ডাক্তারদের বাধ্য করব, হয় ডিউটি করতে হবে নয়তো চাকরি ছাড়তে হবে!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫১
তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর।

তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। —ফাইল ছবি।

হাসপাতালে কর্মবিরতি নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে চিকিৎসকদের ‘জনরোষে’র হুমকি দিলেন তৃণমূলের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। চলমান আন্দোলন এবং চিকিৎসকদের প্রতিবাদ নিয়ে মন্ত্রী-সহ দলের নেতাদের মুখ না-খোলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, এই নিয়ে যা বলার, তিনিই বলবেন। কিন্তু বিধানসভার বাইরে বুধবার বিধায়ক হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘মানুষ চিকিৎসা না-পেয়ে মারা গেলে জনরোষের দায়িত্ব কে নেবে?’’ তাঁর হুমকি, ‘‘আমরাও রাস্তায় নামব। ডাক্তারদের বাধ্য করব, হয় ডিউটি করতে হবে নয়তো চাকরি ছাড়তে হবে!’’

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে গোড়া থেকেই সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু তিনিই ‘কুৎসা’র প্রতিবাদে ফোঁস করতে বলার পর থেকে শাসক দলের নানা সমালোচনা, আক্রমণের মুখে পড়েছেন চিকিৎসক ও আন্দোলনকারীরা। এই পরিস্থিতিতে চিকৎসকদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা শুরু হওয়ার পরে মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সতীর্থদের এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে একাধিক বার দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংযমের বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার পরেও এ দিন আন্দোলনরত চিকিৎসকদের হুমকি দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডাক্তারেরা যদি শুধু নিজেদের নিরাপত্তা আর নিজেদের স্বার্থ দেখেন, তা হলে আম জনতার স্বার্থ দেখতে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’’ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে অসন্তুষ্ট শাসক দলের বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘আমরা যদি হাত দিই, তা হলে ডাক্তাররা কোথায় যাবেন?’’ নিজের জেলার পরিস্থিতি জানিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পাবলিক মরছে, তা হলে ডাক্তারেরা সুরক্ষিত থাকবেন কেন? আমরা এটা চুপচাপ মেনে নেব না!’’

এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘ওঁর কথায় প্রতিক্রিয়া দেওয়া মানে ওঁর দর বাড়ানো! ওঁর সব দল করা হয়ে গিয়েছে। খালি বাজে বাজে কথা বলেন। কিছু দিন আগে খুব বিদ্রোহ করছিলেন, ভাইপো ওঁকে আর নিয়ামত শেখকে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে ডেকেছিল। তার পরে সব ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ওঁর কথার জবাব দেওয়ার মানে হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী কাউকে মুখ খুলতে বারণ করার পরেও তৃণমূল বিধায়ক এমন কথা বলছেন? এর পরে মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন না? আসলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানেন, গোলমালটা স্বাস্থ্য দফতরে আছে!’’ সুজনের দাবি, ‘‘যে অনিয়ম, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং দুর্নীতি সামনে চলে এসেছে, তার পরে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও নগরপালকে খারিজ করা।’’

আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। দোষীদের শাস্তির পাশাপাশি সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবিও করেছেন তাঁরা। সরকারি হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবায় যে বিঘ্ন ঘটছে, তা সামনে নিয়ে এসে পাল্টা প্রচারে নেমেছে তৃণমূলও। এই পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেছেন শাসক নেতারা।

সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের বাহিনী যে ভাবে চিকিৎসকদের ‘অমানুষ, খুনি’-সহ নানা বিশেষণে আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতেও প্রশ্ন উঠেছে, মমতা-অভিষেকের বার্তা তা হলে কোথায় গেল! পাশাপাশিই চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ২৪ জনের মৃত্যু যেখানে যেখানে হয়েছে বলে যে সব হাসপাতালের নাম দেওয়া হয়েছে, তার অনেক জায়গাতেই জুনিয়র ডাক্তার নেই। আর কিছু ঘটলেই যদি সেই কলকাতার নির্দিষ্ট মেডিক্যাল হাসপাতালেই রোগী পাঠাতে হয়, জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে ফেলার সরকারি দাবি তা হলে বাস্তবে কোথায় গেল!

Humayun Kabir R G Kar Hospital TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy