E-Paper

দিল্লিতে ধর্নায় তৃণমূল, পথে নামছে সিপিএম

দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে বাঙালি শ্রমিকদের মহল্লায় গিয়ে ২৪ ঘণ্টার অবস্থানে বসেছে তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধিদল। নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর সতীর্থদের পরামর্শ দিয়েছেন, বাঙালিদের হয়রানির ঘটনায় সকলকে আরও সরব হতে হবে, সর্বত্র প্রতিবাদে নামতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩৫
বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনির বাসিন্দাদের নিয়ে ধর্না তৃণমূলের। সোমবার নয়াদিল্লিতে।

বসন্তকুঞ্জের জয় হিন্দ কলোনির বাসিন্দাদের নিয়ে ধর্না তৃণমূলের। সোমবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে সভা করতে আসার আগেই নিজে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন্ রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগে বিজেপির উপরে এ বার আরও চাপ বাড়াচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। একই সঙ্গে পথে নেমে তৎপর হচ্ছে সিপিএম ও কংগ্রেসও।

দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে বাঙালি শ্রমিকদের মহল্লায় গিয়ে ২৪ ঘণ্টার অবস্থানে বসেছে তৃণমূলের সংসদীয় প্রতিনিধিদল। নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁর সতীর্থদের পরামর্শ দিয়েছেন, বাঙালিদের হয়রানির ঘটনায় সকলকে আরও সরব হতে হবে, সর্বত্র প্রতিবাদে নামতে হবে। একই প্রশ্নে মমতার মিছিলের আগের দিন, মঙ্গলবারই রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছে সিপিএম। যাদবপুর এলাকায় ওই মিছিলে থাকার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী-সহ দলীয় নেতৃত্বের। প্রদেশ কংগ্রেস এই বিষয়ে বিধাননগরের অসম ভবনের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে আগামী ১৮ জুলাই, দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভার দিনেই।

রাজ্যে বিধানসভা ভোট যখন অদূরে, সেই সময়ে চাপের মুখে পড়ে পাল্টা দাবি বজায় রাখছে বিজেপি। ভিন‌্ রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য সোমবার বলেছেন, ‘‘এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশে হচ্ছে। তা হলে মুখ্যমন্ত্রী (মমতা) তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আসলে রাজ্যগুলি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে পরিযায়ীদের সঠিক পরিচয় জানা আবশ্যক। তাদের কেউ বাংলাদেশ থেকে আসা। সে রকম মিথ্যে পরিচয়পত্র নিয়ে ধরা পড়েছে বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং শিলিগুড়িতেও। এটা নিয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের কথা বলে উনি (মুখ্যমন্ত্রী) রাজনীতি ছাড়া কিছু করছেন না!’’ মমতা শুধু সংখ্যালঘুদের ভোটের স্বার্থেই এই অবস্থান নিয়েছেন বলে দাবি করে তাঁর দলের ‘হিন্দু-বিরোধী মনোভাবে’র কথা ফের তুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় ও অন্য নেতারা।

নয়াদিল্লির অভিজাত বসন্ত কুঞ্জের পিছনে রয়েছে আর একটি পূতিগন্ধময় কুঞ্জ। বাইরে থেকে ঢোকা কারও পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নেওয়াও যেন কঠিন সেই ‘জয় হিন্দ কলোনি’তে। এখানে এবং বিভিন্ন এলাকায় বাংলাভাষীদের হেনস্থা নিয়ে এ দিন বিকেল থেকে ২৪ ঘন্টার ধর্না-অবস্থান শুরু করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার চার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়, দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ ও সাকেত গোখলে। এলাকার একটি হলঘরে আজ, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চলবে এই ধর্না। তৃণমূল নেত্রীর ছবিতে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে হল, সঙ্গে উচ্ছেদ-বিরোধী পোস্টার। দোলার বক্তব্য, “বিষয়টি বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সংবিধান স্বীকৃত ভাষা বলার জন্য এঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। আসলে বিজেপি-র অশ্বমেধের ঘোড়া বাংলায় মুখ থুবড়ে পড়ছে বলেই এই ভাবে হাওয়া গরম করা হচ্ছে।” সুখেন্দু বলেছেন, “লোকসভা ভোটের আগে এখানে এসে বিজেপি ভোট চেয়েছে। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছে। কাজ মিটে গেলে এঁদের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ এখানে হিন্দু এবং মুসলমানেরা সদ্ভাবের সঙ্গে রয়েছেন দীর্ঘ দিন। মুসলমানেরাই মন্দির বানিয়ে দিয়েছেন এখানে সংখ্যায় কম হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য।”

কাদা আর আবর্জনার স্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে জয় হিন্দ কলোনিতে আমিনা বিবি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘বাংলা ভাষায় কথা বললে কি কেউ বাংলাদেশি হয়ে যায়?’’ কোচবিহার থেকে বিশ বছর আগে চলে এসেছিলেন এখানে। এখন উচ্ছেদের খাঁড়া ঝুলছে। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক জি দেবরাজন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখে জয় হিন্দ কলোনির এই সঙ্কট নিরসনে হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, কোচবিহারের নেতা কমল গুহ বাম জমানায় পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লি এসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁর এলাকার এই মানুষেরা দিল্লিতে এসেছেন তখন। সরকার থেকে এঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, দলের পক্ষ থেকেও এঁদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল। আডবাণী সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, যাতে তাঁদের অসুবিধা না হয়। ফ ব-র তরফে এইকলোনির নাম সুভাষচন্দ্র বসুর স্মরণে ‘জয় হিন্দ কলোনি’ রাখা হয়েছিল। চিঠি লেখার পাশাপাশি ফ ব-র নেতারা ওই এলাকায় ঘুরে এসেছেন এবং বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন, পুলিশি হেনস্থা নিয়ে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন।

‘বাংলাভাষী হলেই বাংলাদেশি, এই ফরমান মানি না’— এই স্লোগান সামনে রেখে আজ যাদবপুরে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিম এ দিন বোলপুরে বলেছেন, ‘‘ছাব্বিশের নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বিজেপি-তৃণমূল মিলে ভয় দেখাচ্ছে। রাজ্যে বাংলার মানুষ নিরাপদ নয়। আবার এখানে কাজের অভাবে বাংলার মানুষ বাইরে গিয়েও নিরাপত্তা পাচ্ছে না। বাংলা ভাষায় কথা বললে, গরিব মানুষ হলে, পরিযায়ী শ্রমিক হলে বুলডোজ়ার দিয়ে তাদের ঝুপড়ি ভাঙা হচ্ছে।’’ এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন।

সপ্তাহ জুড়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। তারই পাশাপাশি দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘বিজেপি-শাসিত রাজ্যে যা হচ্ছে, খুবই অন্যায়। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকেরা এই রাজ্যের অর্থনীতিতে যে অবদান রাখেন, সেটা মাথায় রেখে রাজ্য সরকারের আগে থেকেই সক্রিয় থাকা উচিত ছিল। আলাদা দফতর দরকার ছিল। এখন সমস্যার সময়েও মুখ্যমন্ত্রী কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বা অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন না?’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভোটের গন্ধ এলেই পরিযায়ীদের রাজনীতিতে টেনে আনা হয়, মুখ্যমন্ত্রীরও কুম্ভীরাশ্রু আসে! মোদী ভয় দেখাবেন, দিদি বলবেন আমি তো আছি!’’

ভোপালে এ দিনই ৭ রাজ্যের স্পিকার গোষ্ঠীর সম্মেলনে পরিষদীয় কাজকর্ম নিয়ে নির্ধারিত আলোচনা শেষে এ রাজ্যের বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের নিজেদের রাজ্যে এই রকম ‘অবাঞ্ছিত ঘটনা’ যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার জন্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও ওড়িশা বিধানসভার স্পিকারদের উদ্দেশে আবেদন করেছেন বিমান।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM TMC BJP harassment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy