বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এ বার নতুন স্লোগান বাঁধল তৃণমূল শিবির। ‘যতই করো হামলা, আবার জিতবে বাংলা’— শনিবার এই স্লোগান প্রকাশ করেছে তারা। প্রকাশ করা হয়েছে নতুন লোগো-ও।
তৃণমূল কংগ্রেসের সমাজমাধ্যম পাতা থেকে শনিবার এই নতুন স্লোগান এবং লোগো প্রকাশিত হয়েছে। লোগোর সঙ্গে রয়েছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। নতুন স্লোগান এবং লোগো প্রকাশ করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্যের সাধারণ জনতাকে এককাট্টা করার বার্তা দিয়েছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে রাজ্যের শাসকদল লিখেছে, এই লোগো বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর মিলিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা বিস্তার শুরু হয়েছিল বিজেপির। তার পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট ছিল তৃণমূলের কাছে শক্তি প্রদর্শনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। ওই বছরের বিধানসভা ভোটের আগে ‘বহিরাগত তত্ত্বে’ শান দিয়ে তৃণমূল স্লোগান বেঁধেছিল ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। ২০২১ সালের ভোটে রাজ্যের বিধানসভায় বিজেপি আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করেছিল ঠিকই, তবে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়েন মমতাই।
তার পরে গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের সময়েও বিজেপিকে আক্রমণ করে স্লোগান বাঁধে তৃণমূল। রাজ্যবাসীর ‘অধিকাররক্ষা’র বার্তা দিয়ে লোকসভা ভোটের মুখে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ‘জনগণের গর্জন, বাংলা-বিরোধীদের বিসর্জন’ স্লোগান। এ বার ফের বিধানসভা ভোটের মুখে নতুন স্লোগান বেঁধে দিল রাজ্যের শাসকদল।
তৃণমূলের বক্তব্য, এটি এমন একটি লোগো, যা সাধারণ মানুষকে শোষণ, অপমান, ভয় দেখানো এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির সম্মিলিত ক্ষোভকে প্রকাশ করে। বিজেপিকে ‘বাংলা-বিরোধী জমিদার’ বলে নিশানা করেছে তারা। ওই সমাজমাধ্যম পোস্টে তৃণমূল লিখেছে, ‘কোনও একটি ছবি হয়তো হাজার হাজার কথা বলে। কিন্তু এই ছবিটি একটিই বার্তা গর্জন করে যাচ্ছে— পশ্চিমবঙ্গ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠবে। বিজেপিকে বিদায় জানাবে।’
আরও পড়ুন:
ভোটের নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে ইতিমধ্যে। তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই নিজের মতো করে নির্বাচনী রণকৌশল তৈরি করে নিচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে শনিবার আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে নতুন স্লোগান এবং লোগো প্রকাশ্যে আনল তৃণমূল।
বিজেপিকে বিঁধে ওই সমাজমাধ্যম পোস্টে তৃণমূলের দাবি, এক গণতান্ত্রিক উপায়ে ২০২৬ সালে তারা বিজেপিকে বিদায় জানাবে। পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, যেমনটা প্রাপ্য, ঠিক তেমন ভাবেই বিজেপিকে বিদায় জানানো হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও দয়াময়া দেখানো হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর প্রক্রিয়া নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। ইচ্ছামতো নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা স্বয়ং। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাঁতের অভিযোগেও বার বার সরব হয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালিদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠে এসেছে। বাংলাদেশি সন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। এই দুই প্রসঙ্গই সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বার বার আবর্তিত হয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূলের ‘যতই করো হামলা, আবার জিতবে বাংলা’ স্লোগান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন স্লোগান এবং তার সঙ্গে সমাজমাধ্যমের পোস্টে বাঙালি ভাবাবেগকেও স্পর্শ করতে চাইছে তৃণমূল।