Advertisement
E-Paper

TMC: পার্থের কৃতকর্মে লজ্জিত, কিন্তু তৃণমূল মানেই চোর নয়! পাল্টা নাম দিলেন ফিরহাদ, ব্রাত্য

তৃণমূলের ১৯ নেতা-মন্ত্রীর সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ছে তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার দু’দিন পর ‘পূর্ণ সত্য’ নিয়ে সামনে এল তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ১৫:৫৫
সাংবাদিক বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) অরূপ রায়, মলয় ঘটক, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিউলি সাহা।

সাংবাদিক বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) অরূপ রায়, মলয় ঘটক, ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শিউলি সাহা। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের ১৯ নেতা-মন্ত্রীর সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ছে তা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার দু’দিন পর ‘পূর্ণ সত্য’ নিয়ে সামনে এল তৃণমূল। তাদের দাবি, বিষয়টি নিয়ে বিজেপি, বাম ও কংগ্রেস অর্ধসত্য প্রচার চালাচ্ছে। যে ১৯ জনের নাম গত সোমবার প্রকাশ্যে এসেছিল, তাঁদের মধ্যে ছ’জন— ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, অরূপ রায়, শিউলি সাহা, মলয় ঘটক এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই ‘সম্পূর্ণ’ তালিকা তুলে ধরেন ব্রাত্য। তিনি অধীর চোধুরী, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বিরোধী দলের একাধিক নেতার নাম ওই তালিকায় রয়েছে বলে দাবি করেন।

বুধবারের বৈঠকে হাজির তৃণমূলের ছয় মন্ত্রীকেই ‘আক্রমণাত্মক’ ভঙ্গিমায় দেখা গিয়েছে। ফিরহাদের বক্তব্য, ‘‘সুযোগ পেয়েছেন, সকলেই অপমান করছেন। এটা জনস্বার্থ মামলা নয়। রাজনৈতিক স্বার্থে করা মামলা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রোজগার বাড়ানো কোনও অন্যায় নয়। সম্পত্তি কেনাও কোনও অন্যায় নয়।’’

২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা করেন জনৈক বিপ্লব চৌধুরী। গত সোমবার তাঁর আইনজীবী শামিম আহমেদ হাই কোর্টে বাংলার ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর একটি তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছিলেন। সেখানে দেখান, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ১৯ জনের সম্পত্তি ‘বিপুল ভাবে’ বেড়েছে। বুধবার সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ের কপি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীরা। সেখানে ‘আক্রমণাত্মক’ মেজাজে দেখা গেল ফিরহাদদের। বৈঠকে ফিরহাদ বলেন, ‘‘মানুষের কাজ করার জন্য আমরা ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিয়েছি। মানুষের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আমাদের অপমান করা হচ্ছে।’’ তাঁর এ-ও দাবি, নির্বাচনী হলফনামায় যাবতীয় সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন। তার পর কর দিচ্ছেন। বেনিয়মের অভিযোগ থাকলে আগে কেন কোনও তদন্ত হয়নি।

এসএসসি নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র মামলায় গ্রেফতার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ যা করেছেন, তাতে আমরা সবাই লজ্জিত। এই পার্থকে আমি চিনতাম না। তার মানে এই নয় যে, তৃণমূলের সবাই চোর।’’ যা শুনে বিরোধী শিবিরের একাংশ জীবনানন্দ দাশের ধাঁচে কটাক্ষ শুরু করেছেন, ‘‘সকলেই চোর নয়, কেউ কেউ চোর।’’

এর পর কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে নিশানা করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘সুযোগ পেয়েছেন, সবাই অপমান করছেন। কিন্তু রোজগার বাড়ানো কোনও অন্যায় নয়। সম্পত্তি কেনাও কোনও অন্যায় নয়।’’ এর পর তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের সম্পত্তি নিয়ে কটাক্ষ করেন। ফিরহাদের মন্তব্য, ‘‘আমি সুজন চক্রবর্তীকে বলতে চাই, আপনাদের ছেলেদের বলতে বলুন, চেতলা এলাকায় কোনও দিন কোনও অন্যায় ফিরহাদকে করতে দেখেছেন কি না।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলের সবাই স্বচ্ছ ভাবে রাজনীতি করছেন। তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন। মানুষের কাজ করছেন। কিন্তু বাম এবং কংগ্রেস উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই আক্রমণ করছে।

এর পরেই ব্রাত্য একটি তালিকা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু জনস্বার্থ মামলার রায়ের পুরো অংশ কেন তুলে ধরা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। এর পর রায়ের কপি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক, ১৯ তৃণমূল নেতামন্ত্রী এবং বিধায়কের নাম রয়েছে। এটা সত্যি। কিন্তু ওই একই রায়ে রয়েছে অধীররঞ্জন চৌধুরীর (প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি) নাম। তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার পর রয়েছে সূর্যকান্ত মিশ্র (সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক এবং প্রাক্তন মন্ত্রী), অশোক ভট্টাচার্য (বামফ্রন্ট আমলের মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র), কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় (প্রাক্তন মন্ত্রী, সিপিএম নেতা), আবু হেনা (রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা), সিপিএম নেতা ধীরেন বাগদি, চন্দন সাহা, নেপাল মাহাতোর মতো অজস্র নাম।’’ ব্রাত্যের সংযুক্তি, ‘‘তৃণমূল নেতার নাম যেমন আছে, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামও রয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা একপেশে আক্রমণ করছেন। কেবল মাত্র একটি রাজনৈতিক দলকে খাপ পঞ্চায়েত বসিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে।’’

তৃণমূলের এই সাংবাদিক বৈঠকের পর বিজেপি নেতৃত্ব জানান, আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না।

সিপিএমের তরফে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিধানসভায় এক বার তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি নিয়ে কথা বলেছিলাম। সেখানে খোদ স্পিকারই বলেছিলেন, তিনিও চিন্তিত যে কী ভাবে বড় বড় গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ান কিছু নেতা।’’

কান্তি যদিও তৃণমূলের এই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দেন। বলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা! কে ফিরহাদ, কে ব্রাত্য—তাঁদের কথার জবাব দেব? আদালত কী বলেছে সেটা দেখুন।’’

TMC Asset CPIM Congress PIL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy