বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের ‘হেনস্থা’র অভিযোগে বীরভূমে গিয়ে ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার ধর্মতলায় গান্ধী-মূর্তির কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা শাখা ধর্না শুরু করেছে। বাঙালি-আবেগকে সামনে রেখে রাজ্য বিজেপির কর্মীদেরও প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা! তবে একই বিষয়ে তাদের ‘রাজভবন অভিযানে’ পুলিশের ‘ধরপাকড়’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুব কংগ্রেস। পথে নেমেছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও। অনুপ্রবেশ এবং রোহিঙ্গা-তত্ত্বেই তৃণমূলকে পাল্টা নিশানা করেছে বিজেপি।
বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাঙালি-বিদ্বেষ’ ছড়ানোর অভিযোগে তুলে তৃণমূলের মহিলা শাখার ধর্নায় এ দিন ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, সাংসদ মালা রায়-সহ অন্যেরা। আজ, রবিবারও ধর্না চলবে। এর পাশাপাশি, মহারাষ্ট্রে আটক বাংলার কয়েক জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে এ দিনই সে রাজ্যে তৃণমূলের তরফে চার জনের প্রতিনিধিদলকে পাঠিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার জানা গিয়েছিল, অভিষেকের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিষ্ণুপুরের এক জন-সহ বাংলার কয়েক জন মহারাষ্ট্রে আটকে রয়েছেন। এই প্রেক্ষিতেই দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, “বিজেপির লাগাতার আক্রমণ বাঙালির শিকড় ধরে টান দিয়েছে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদে সমাজের সব স্তরের মানুষ শামিল হয়েছেন। রক্তদান শিবির, পুজোর আয়োজনে সর্বত্র এই প্রতিবাদ থাকবে। রাজ্যের বিজেপি কর্মী- সমর্থকদেরও প্রতিবাদে পথে নামা উচিত।”
যদিও বিজেপি পাল্টা ফের অনুপ্রবেশ-তত্ত্বকেই সামনে এনেছে। দলের রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “গুরুগ্রাম, নয়ডা, দিল্লিতে যেখানে বাঙালিরা থাকেন, আচমকা দেখা যাচ্ছে সেই সব এলাকায় গৃহ-পরিচারিকারা উধাও। গোপা, শিখা নাম নিয়ে শাঁখা-পলা পরে কাজে ঢুকেছিলেন! এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” শমীকের আরও দাবি, ভিন্-রাজ্যে কাজ করা বাংলার সংখ্যালঘুরাই পুলিশকে ডেকে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গাদের চিনিয়ে দিচ্ছেন।
বিজেপিকে নিশানা করার সঙ্গেই তৃণমূলের প্রতিবাদ আদৌ বাঙালির স্বার্থে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও। ঘটনার সূত্রপাত যুব কংগ্রেসের ‘রাজভবন অভিযান’কে কেন্দ্র করে। সংগঠনের নেতা অর্ঘ্য গণ, কাশিফ রেজার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মিছিল করে রাজভবনের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। কলকাতা পুরসভার সামনে পুলিশ মিছিল আটকায়। যুব কংগ্রেসের প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। এই সূত্র ধরেই যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “মিছিলের স্লোগান একই, বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাঙালি নির্যাতনের প্রতিবাদ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে মিছিল হলে পুলিশের লাল কার্পেট থাকে! আর যুব কংগ্রেস বিজেপি-বিরোধী স্লোগান দিলে ওই পুলিশই লাঠি চালায়। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিকে কী বার্তাই দিতে চাইছেন?”
বিজেপি ও তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু অনুমোদিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-ও। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা গায়েনের দাবি, “বেছে বেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। আমাদের চালু করা ‘হেল্পলাইনে’ দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পুনে, হরিয়ানা থেকে ফোন আসছে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সিটু নেতৃত্ব সহযোগিতা করছেন।” পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাংলার যে-যে এলাকার বাসিন্দা, সংশ্লিষ্ট থানাগুলি থেকে পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন’ করানোর বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এর সঙ্গেই বাঙালি পরিযায়ীদের হেনস্থা বন্ধে তৃণমূল সরকারও তৎপর নয় বলে অভিযোগ করেছে বামেরা।
বাঙালি হেনস্থার অভিযোগ তুলে যাদবপুর থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত মিছিল করেছে ‘বাংলা একতা মঞ্চ’। অন্যতম সংগঠক তন্ময় ঘোষের অভিযোগ, “বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে জাতি-দাঙ্গার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। এটা চললে গোটা ভারত মণিপুর হয়ে যাবে।” বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে মিছিলে যোগ দেওয়া কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিক বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা বললেই হেনস্থার নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)