Advertisement
E-Paper

দলের ছাতা সরেছে বুঝে ভেঙে পড়েছেন পবিত্র

দু’জনকে গুলি করে খুন করার পরেই দল থেকে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায়। রবিবার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পরে দলের কেউই আর তাঁর কোনও খোঁজ নেননি। বরং জেলার যে মন্ত্রীর তিনি ঘনিষ্ঠ সেই কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী পর্যন্ত বলেছেন, ‘‘গুলি চালানোর ঘটনায় কেউ ছাড়া পাবে না।’’ তারপরেই ক্রমশ ভেঙে পড়েন পবিত্রবাবু।

বাপি মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৫
অসীম মণ্ডলের দেহ ঘিরে পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

অসীম মণ্ডলের দেহ ঘিরে পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

দু’জনকে গুলি করে খুন করার পরেই দল থেকে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পবিত্র রায়। রবিবার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পরে দলের কেউই আর তাঁর কোনও খোঁজ নেননি। বরং জেলার যে মন্ত্রীর তিনি ঘনিষ্ঠ সেই কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী পর্যন্ত বলেছেন, ‘‘গুলি চালানোর ঘটনায় কেউ ছাড়া পাবে না।’’ তারপরেই ক্রমশ ভেঙে পড়েন পবিত্রবাবু।

তাই রাতে পুলিশের লক-আপে যে খাবার দেওয়া হয়েছিল তা-ও তাঁর মুখে রোচেনি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তিনি যা করেছেন, তার পরে নেতাদের অন্তত প্রকাশ্য সমর্থন মিলবে না আঁচ করে পুলিশকর্মীদের কাছে এক সময় ভেঙেও পড়েন। তবে ধরা পড়ার পরেও দীর্ঘ ক্ষণ সপ্রতিভই ছিলেন ওই নেতা।

ঘটনার পর রাতেই সাহাপুর থেকে ওই নেতাকে গ্রেফতার করে ইংরেজবাজার থানা। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি বিক্ষোভের আশঙ্কায় ধৃতকে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ লক-আপে রাখা হয়নি। তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, তা যাতে ফাঁস না হয়ে যায়, সে জন্যও চূড়ান্ত সতর্কতা ছিল জেলা পুলিশের। তাঁকে রাখা হয়েছিল ৭ কিলোমিটার দূরে মালদহ থানায়। কিন্তু থানায় কোনও নেতার দেখা না পেয়ে ক্রমশ পবিত্রবাবু ভেঙে পড়েন বলে পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে।

কৃষ্ণেন্দুবাবু এ দিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। পবিত্রবাবু তার ঘনিষ্ঠ কি না, সেই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকার চোর থেকে শুরু করে চিকিত্সক, শিক্ষক, যাঁরা আমার বিধানসভা এলাকার মানুষ, তাঁরা সবাই আমার ঘনিষ্ঠ।’’ পাশাপাশি মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার এলাকার দু’টো ছেলে গুলিতে মারা গিয়েছে। ওরা গরিব। আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাই ওদের ময়নাতদন্তে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখতেই হাসপাতালে এসেছি।

কেন পবিত্রবাবুকে ইংরেজবাজার থানায় রাখা হল না? জেলা পুলিশ সুপারও পরিষ্কার উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘‘দু’টোই তো থানা। আমরা ধৃতকে যে কোনও থানাতেই রাখতে পারি।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পুলিশের নির্দেশেই তাকে মালদহ থানায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সভাপতির সঙ্গে পুলিশের আচরণেই ধৃত নেতা বুঝে যান যে, তাঁর মাথা থেকে নেতাদের হাত সরে গিয়েছে। কেননা তাকে পুলিশ লক-আপে সাধারণ অভিযুক্তদের সঙ্গেই রাখা হয়েছিল। একই খাবারও খেতে দেওয়া হয়। রুটি আর ডাল। লক-আপে সেই খাবার মুখেও তোলেননি পবিত্রবাবু। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলা পুলিশকর্তাদের নির্দেশ মতোই সাধারণ অভিযুক্তদের মতোই আচরণ করা হয়েছে পবিত্রবাবুর সঙ্গে।

দলের নেতাদের হাত মাথা থেকে সরে যাওয়াতেই যে পুলিশ তার সঙ্গে ওই আচরণ করছে, তা বুঝে যান পবিত্রবাবু। এক সময় নিজের বয়সের প্রসঙ্গ তুলে এমন একটা ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছারখার হয়ে গেল বলেও মন্তব্য করেন বছর বত্রিশের ওই নেতা। কেন এমন করলেন, তা নিয়ে একাধিক পুলিশকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে পবিত্রবাবু নিজের হয়ে সাফাইও দেন। কাউকে মারার উদ্দেশ্য ছিল না বলে দাবি করে ধৃত নেতা পুলিশের কাছে দাবি করেন যে, গুলি চালিয়ে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। তা না হলে ওখানে জনতা ওঁকে মেরে ফেলতে পারত বলে পবিত্রবাবু দাবি করেছেন।

বাগবাড়ির বাসিন্দারা অবশ্য পবিত্রবাবুর দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছোটু তাঁতি, বাঘু মন্ডলরা বলেন, প্রথমে একটি গরুকে চাপা দিয়ে মারার পর একটি বাইকে ধাক্কা মারে সভাপতির গাড়ি। পালাতে গিয়ে এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দিতেই চিত্কারে কিছু কিশোর ও যুবক ছুটে আসে। তারা বাইরে আসতে বলতেই তার জবাব মেলে গুলিতে।

সাংসদ তথা উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই তো তৃণমূল দাদাগিরি করে চলেছে। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়।’’ বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায়ের কথায়, ‘‘তাঁকে আক্রমণের কথা বলে ওই নেতা নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘শাসকদলের লোক বলেই এই ঔদ্ধত্য দেখাতে পেরেছেন ওই নেতা। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা হলে মানুষ ছেড়ে কথা বলবেন না।’’

তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের বক্তব্য, ‘‘যা ঘটেছে তা মর্মান্তিক। আমরা পুলিশের কাজে নাক গলাই না।’’

Pabitra Roy English Bazaar TMC suspend
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy