হাঁসখালিতে বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস খুন হওয়ার পরে এক মাসও ঘুরল না। চাকদহে খুন হলেন ওয়ার্ড স্তরের এক যুবনেতা। তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুললেও তারা তা উড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, তার নাম সুধীন সোম ওরফে টলা (৪৫)। বৃহস্পতিবার বিকালে চাকদহ শহরের ৫২ নম্বর রেলগেটের কাছে ঘটনাটি ঘটে। সুধীন ছিলেন চাকদহ ১২ নম্বর যুব তৃণমূলের সভাপতি। তাঁকে খুনে অভিযুক্ত প্রতিবেশী শুভঙ্কর মজুমদার এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে। ঘটনার পরেই উত্তেজিত জনতা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। পুলিশের দাবি, খুনের কারণ রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিন পাঁচেক সুধীন বাড়িতে ছিলেন না। তারাপীঠে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ দিন সাড়ে ৩টে নাগাদ বাড়ি ফেরেন। পরে কমবেশি দেড়শো মিটার দূরে শুভঙ্করের বাড়িতে যান। কোনও বিষয় নিয়ে ঘরের মধ্যে দু’জনের গন্ডগোল হচ্ছিল। তখনই শুভঙ্কর হেঁসো দিয়ে সুধীনকে কোপায় বলে অভিযোগ। সুধীন কোনও রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পিছু নেয় শুভঙ্কর। কয়েক পা যাওয়ার পর ঘরের সামনেই সুধীন পড়ে যান। শুভঙ্কর তাঁকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
চাকদহ শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের চাকদহ-পায়রাডাঙা রেল স্টেশনের মাঝে ঘুঘিয়ায় ৫২ নম্বর রেলগেটের কাছে বাড়ি সুধীনের। স্ত্রী ছাড়া বাড়িতে রয়েছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে সৌমিক চাকদহ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, মেয়ে কোয়েল চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সৌমিকের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। শুভঙ্কর বিজেপি করে। কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির সামনে পতাকা লাগানো নিয়ে বাবার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছিল। বাবা তারাপীঠে বেড়াতে গেলে কয়েক বার বাড়িতে এসে খোঁজ করে গিয়েছে। এ দিন বাবা ফিরতেই বাড়িতে ডেকে খুন করেছে।’’
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
সৌমিক জানান, তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। কোয়েল ফোন করে জানায়, বাবাকে মারছে। তিনি এসে দেখেন, বাবাকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তাঁর সন্দেহ, ‘‘শুভঙ্কর একা নয়, ওরা কয়েক জন ছিল। কারও একার পক্ষে আমার বাবাকে খুন করা সম্ভব নয়।’’
বিকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সুধীনের বাড়িতে ভিড়। পড়শিরা তো বটেই, দলের নেতারাও এসেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক রত্না ঘোষ, চাকদহ শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি সাধন বিশ্বাসেরা এসেছেন। খানিক দূরে শুভঙ্করের বাড়িতে কেউ নেই। দুই ঘরে আগুন জ্বলছে। সাইকেল আরা নানা জিনিস পুড়ে গিয়েছে। বাড়ি আর উঠোনের সামনে রক্তের দাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, “আমরা তখন ঘরে খাচ্ছিলাম। এমন সময়ে টলাদা স্কুটি নিয়ে আসে। স্কুটিটা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে শুভঙ্করের বাড়িতে ঢোকে। এর পর তর্কাতর্কি শুরু হয়। বাইরে থেকে শুনে মনে হচ্ছিল, শুভঙ্কর কয়েক বার তেড়ে যায়। এক সময়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কী করতে পারি জানিস?’ পাল্টা শাসায় টলাদা। তার পরেই দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় টলাদা বেরিয়ে আসছে। বাইরে এসে সে পড়ে যেতেই শুভঙ্কর এসে কোপাতে থাকে। তার পর টলাদা মারা গিয়েছে বুঝে সে পালিয়ে যায়।”
আর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক হল, শুভঙ্কর এখানে বাড়ি করেছে। সে রাজস্থানের হাতুড়ে ডাক্তার বলে প্রচার করে। বদমেজাজি। স্ত্রী সঙ্গেও সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়।’’ বাড়িতে অবশ্য শুভঙ্করের স্ত্রী বা আর কাউকে পাওয়া যায়নি। সত্যজিৎ খুনে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল রায়ের নামে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হয়েছিল। এ দিন কারও নাম না করেও মন্ত্রী রত্না ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘‘দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে এক গদ্দার এ সব করাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, সুধীন একটি ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকলেও চারটি ওয়ার্ড দেখভাল করতেন। খুবই দক্ষ সংগঠক ছিলেন। শহরে ঠাঁই পেতে বিজেপি তাঁকে সরিয়ে দিয়েছে।
বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার অবশ্য দাবি করেন, “ওই যুবকের সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমরা খুনের রাজনীতি করি না। এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কও নেই।”