Advertisement
E-Paper

মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে আঙুল উঁচিয়ে ‘শাসানি’, ভিডিয়ো ফুটেজ ঘিরে বিতর্কে জয়া দত্ত

কী দেখা গিয়েছে ফুটেজে? দেখা গিয়েছে দু’টি গাড়ি পাশাপাশি এগোতে এগোতে হঠাৎ থামছে। একটু পরে একটি গাড়ির চালকের আসন থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভানেত্রী জয়া দত্ত নেমে আসছেন এবং উত্তেজিত ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছেন পাশের গাড়িটির দিকে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৭
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।

ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।

ছিলেন শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষনেত্রী। পদ গিয়েছে মাস দুয়েক আগে। তার পরেও জল্পনা ছিল যে, জয়াকে পুনর্বহাল করা হতে পারে। সে জল্পনাকে ঘিরে তৃণমূলের অন্দরে বিতর্কও ছিল বিস্তর। এ বার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানা এলাকার একটি ‘সিসিটিভি’ ফুটেজ ঘিরে আরও এক বিতর্কে জড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেত্রীর নাম। মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাশের গাড়ির চালককে আঙুল উঁচিয়ে শাসাচ্ছেন জয়া, দেখা গিয়েছে ফুটেজে। তবে জয়ার দাবি, দীর্ঘ ক্ষণ ধরে আপত্তিকর আচরণ সহ্য করার পরে গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

যে ফুটেজটি ছড়িয়েছে, সেটি সিসিটিভি ফুটেজ, নাকি মোবাইল ক্যামেরার, তা নিয়েও কারও কারও সংশয় রয়েছে। তবে যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, হাবড়ার সেই প্রফুল্লনগর (যেখানে জয়ার বাড়ি) এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন যে, সেখানে রাস্তায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ওই এলাকায় একটি সুইমিং পুল রয়েছে এবং সন্ধ্যার পর থেকে পুলটিকে ঘিরে অসামাজিক কার্যকলাপ বাড়ছিল বলেই রাস্তায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।

কী দেখা গিয়েছে ফুটেজে? দেখা গিয়েছে দু’টি গাড়ি পাশাপাশি এগোতে এগোতে হঠাৎ থামছে। একটু পরে একটি গাড়ির চালকের আসন থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভানেত্রী জয়া দত্ত নেমে আসছেন এবং উত্তেজিত ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছেন পাশের গাড়িটির দিকে। তার পরে আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলছেন ওই গাড়িটির চালকের আসনে বসে থাকা ব্যক্তিকে।

আরও পডু়ন: খাঁটি তৃণমূল তো? ‘আতসকাচে’ যাচাইয়ের পরে দেওয়া হচ্ছে ডিজিটাল শিবিরের প্রবেশপত্র

বেশ কয়েক মিনিট ধরেই ওই ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখা গিয়েছে জয়াকে। কথা বলা এবং হাত নাড়ার ভঙ্গি দেখে আঁচ করা যাচ্ছে, জয়া দত্ত যথেষ্ট উত্তেজিত ছিলেন। ফুটেজে আরও দেখা গিয়েছে যে, গাড়ি দু’টির পিছনে দু’টি বাইকও থেমেছে। বাইকের দুই আরোহী শুরুতে গাড়ির পিছনে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু পরে তাঁদের এক জনও তর্কাতর্কিতে সামিল হচ্ছেন। তাতে জয়া আরও উত্তেজিত হয়ে তেড়ে যাচ্ছেন।

হাবড়া থানায় জয়ার অভিযোগপত্র।

এই ফুটেজ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ছাত্র সংগঠনের অনেকেই জয়ার পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। ঠিক কী ঘটেছিল, কেন জয়া ওই রকম উত্তেজিত হয়ে গেলেন, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে টিএমসিপি-র রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মত। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই জয়ার উপরে অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে খবর। রাজ্যের মন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক নেতা জয়া দত্তর উপর বেজায় রুষ্ট বলে শোনা যাচ্ছে।

টিএমসিপি-তে যাঁরা জয়া দত্তের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, তাঁরা জানাচ্ছেন, যে দিন ঘটনাটি ঘটেছে, সে দিন জয়ার এক বোন হাবড়ারই একটি এলাকায় নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় তিনি একা বাড়ি না ফেরার সিদ্ধান্ত নেন এবং জয়াকে ফোন করে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। জয়া গাড়ি নিয়ে বোনকে আনতে যান। সঙ্গে এক ভাইকেও নিয়ে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে অন্য একটি গাড়ি ও দু’টি বাইক জয়াদের গাড়িটির পিছু নেয় এবং জয়ার বোনের উদ্দেশে নানা রকম কটূক্তি করা শুরু হয়। বেশ কিছু ক্ষণ কটূক্তি এবং অভব্য আচরণ সহ্য করার পরে জয়া দত্ত রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নীচে নামেন এবং অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করেন বলে জয়া-ঘনিষ্ঠদের দাবি।

আরও পড়ুন: শহরে ১৫ই ছাত্র-যুবদের জোড়া সভা

কিন্তু বিতর্ক তাতে থামছে না। জয়া শিবিরের অভিযোগ কতটা সত্য, তা নিয়ে তৃণমূলের একাংশই সন্দেহ প্রকাশ করছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের অন্যতম শীর্ষনেত্রী বলে জয়া রাস্তাঘাটে ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করছেন বলে তাঁদের দাবি।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাংশও জয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে। তাঁদের দাবি, টিএমসিপি-র সভানেত্রী পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পরেও জয়া খুব চেষ্টা চালিয়েছিলেন পদ ফিরে পাওয়ার। কিন্তু ২৮ অগস্ট সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মেয়ো রোডে হওয়া সমাবেশে জয়াকে বক্তৃতাই দিতে দেওয়া হয়নি। সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, জয়া পদ ফিরে পাবেন না। তার পর থেকেই তিনি আরও বেশি করে মেজাজ হারাচ্ছেন, সংগঠনেরই অনেককে শাসাচ্ছেন, অভিযোগ টিএমসিপির ‘জয়া-বিরোধী’ ব্রিগেডের। ‘হতাশা থেকে জয়া দত্ত রাস্তাঘাটে এই রকম আচরণ করছেন’, দাবি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতার।

জয়া অবশ্য সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আমি কোনও ক্ষমতা জাহির করছি না, আমি হতাশও নই। সে দিন রাতে যে জঘন্য আচরণের মুখে আমাদের পড়তে হয়েছিল, তার প্রতিবাদ না করাটাই অন্যায় হত।’’ টিএমসিপি-র প্রাক্তন সভানেত্রীর কথায়, ‘‘আমার বোনকে একনাগাড়ে কটূক্তি করে চলেছে, অসভ্যের মতো আচরণ করছে, তার প্রতিবাদ করব না!’’

সে দিন রাতের ঘটনা নিয়ে হাবড়া থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন জয়া দত্ত। অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারির দাবি তুলতে শুরু করেছে জয়া শিবির। জয়া দত্তকে ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তা নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘ছাত্র সংগঠন আমি দেখভাল করি না। ছাত্র সংগঠনের কারও ব্যাপারে আমি মন্তব্য করব না।’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

Jaya Dutta Video Threat Controversy TMCP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy