ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। কখনও ফোনে কখনও বা পথেঘাটে।
তিনি একা নন, মোবাইলে রাতবিরেতে শাসানো হচ্ছে কলেজের ছাত্র সংসদের অন্য সভ্যদেরও। এমনকী, দিন কয়েক আগে তাঁদেরই এক জন ফোন পেয়েছেন— কলেজে এলে ‘রেপ’ করিয়ে দেওয়া হবে।
অভিযোগ যাঁর, কৃষ্ণনগরে তিনি পরিচিত মুখ, শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র সাবেরা খাতুন।
কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন ওই নেত্রীর অভিযোগের তির যাঁদের দিকে, ঘটনাচক্রে সেই তালিকায় রয়েছেন টিএমসিপি-র দুই নেতাও। তাঁরা, কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজ, এবং কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের দুই প্রাক্তনী, শুভ ঘোষ এবং সম্রাট পাল।
টিএমসিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই ছাত্র নেতাই কলেজের ছাত্র সংসদের পদাধিকারী ছিলেন।
নদিয়ায়, দলের ছাত্র সংগঠনের তাঁরাও পরিচিত মুখ।
বুধবার, এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সাবেরা। যা, দলের ছাত্র সংগঠনই নয়, মুখ পুড়িয়েছে, শাসক দল তৃণমূলেরও। দলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘এক সময়ে দলের এক সাংসদের এমন লাগামছাড়া কথায় কালি লেগেছিল। ফের সে প্রশ্নই উস্কে দিল এই ঘটনা।’’
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি জয়া দত্তের কানেও গিয়েছে ওই খবর। তিনি বলেন, ‘‘খবরটা শুনেছি। অভিযোগ সত্যি হলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ভাবে ব্যবস্থা নেব।’’
যা শুনে, এসএফআইয়ের নদিয়া জেলা সভাপতি রাজীব দাসের কটূক্তি, ‘‘ব্যবস্থা আর কী নেবেন, যে দলে খোদ সাংসদই মহিলাদের রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন, সে দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের মুখে এ ভাষাই তো মানানসই!’’ চিমটি কাটতে ছাড়ছেন না ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নিত্যগোপাল মণ্ডলও।
তিনি বলেন, ‘‘এটাই টিএমসিপি-র চেনা ভাষা।’’
সাবিরার অভিযোগ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে জেলা পুলিশও। নদিয়া পুলিশ সুপার শিশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘রেপ করিয়ে দেওয়ার হুমকি তো এড়িয়ে যাওয়া যা না। অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব নম্বর থেকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ দিন, থানায় অভিযোগ জমা দিয়ে সাবিরা বলছেন, ‘‘শুভ এবং সম্রাট বেশ কিছু দিন ধরেই আমাদের কলেজে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে। তারাই এই নোংরামো করাচ্ছে।’’ শুধু সাবেরা নন, ওই কলেজের টিএমসিপি-র সমর্থক অন্য ছাত্রীরাও জানাচ্ছেন, এ ধরনের শাসানি নতুন নয়, নিজেদের গোষ্ঠীর মেয়েদের কলেজে ঢুকিয়ে ছাত্র সংসদের কর্তৃত্ব নিতে চাইছেন শুভ-সম্রাটরা। এ বার সেই তালিকায় সংযোজন ঘটল, ‘রেপ’ করিয়ে দেওয়ার হুমকি।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, কৃষ্ণনগরের দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজ এবং উইমেন্স কলেজে টিএমসিপি-র রেষারেষি নতুন নয়। ক্ষমতা দখল নিয়ে ওই দুই কলেজের সংগঠনের ছাত্র নেতাদের মধ্যে গণ্ডগোল চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। যার জেরে, বছরখানেক আগে, উইমেন্স কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপি-র পায়েল হালদারের পরিবারের উপরেও হামলা হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে।
দুই গোষ্ঠীর বিরোধ অবশ্য অকপটেই মেনে নিচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত শুভ ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘‘দুর্নীতি ঠেকাতে আমরা সরব হতেই উইমেন্স কলেজের ছাত্র সংসদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ বেধেছিল। তার জেরেই এখন এমন মিথ্যে অভিযোগ করছেন ওঁরা।’’
উইমেন্স কলেজের ছাত্রীরা অবশ্য বলছেন, ‘‘তদন্তটা ধামাচাপা না পড়লে, সহজেই সত্যি-মিথ্যে বোঝা যাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy