Advertisement
E-Paper

প্রতিষ্ঠা দিবসে কামাই কেন? টিএমসিপি-র ধমকে অসুস্থ কলেজ শিক্ষিকা

নেতৃত্বের কোনও হুঁশিয়ারিই যেন কাজে আসছে না! আজ, শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। তার আগে বুধবার কেশপুর কলেজে এক শিক্ষিকাকে শাসানি এবং হেনস্থার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৬

নেতৃত্বের কোনও হুঁশিয়ারিই যেন কাজে আসছে না!

আজ, শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান। তার আগে বুধবার কেশপুর কলেজে এক শিক্ষিকাকে শাসানি এবং হেনস্থার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। সুপর্ণা সাধু নামে রসায়নের ওই শিক্ষিকার ‘অপরাধ’, অসুস্থতার জন্য সোমবার ছুটি নিয়েছিলেন। হেনস্থার জেরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সুপর্ণাদেবী। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। বৃহস্পতিবারও তিনি আতঙ্কে আছেন। গোটা ঘটনা তিনি ই-মেলে জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীকে। উপাচার্য জানান, কলেজের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং টিএমসিপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব কলেজে কলেজে নৈরাজ্য রুখতে একাধিক বার কড়া বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু সে সব হুঁশিয়ারিই যে সার, তার প্রমাণ বারেবারে সামনে আসছে।

কেশপুর কলেজের ঘটনার সঙ্গে অনেকে মিল পাচ্ছেন কিছু দিন আগে এই পশ্চিম মেদিনীপুরেরই নাড়াজোল রাজ কলেজে টিএমসিপি-র ‘মাতব্বরি’র সঙ্গে। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ঘড়ি ধরে আসার লিখিত নির্দেশিকা ধরানো হয়েছিল। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এমন মাতব্বরি ছাত্রদের কাজ নয়।’’ বৃহস্পতিবার কেশপুর কলেজের ঘটনা জেনে পার্থবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। কড়া পদক্ষেপই করা হবে।’’ টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘সংগঠনের নিয়মকানুন যারা মানবে না, সংগঠনে তাদের ঠাঁই নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দলনেত্রীকে জানাব। উনি যেমন বলবেন, তেমনই পদক্ষেপ করা হবে।’’

শিক্ষিকা সুপর্ণাদেবীর অভিযোগ, টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (পদাধিকার বলে পরিচালন সমিতির সদস্যও) মানস ঘোষ সোমবার তাঁকে ফোন করে গরহাজিরার কারণ জানতে চান। সুপর্ণাদেবী তখন বলেছিলেন, “আমি কবে কলেজে আসব না, কাকে বলে ছুটি নেব, সেটা কেন অন্যকে বলতে যাব? কলেজ জানতে চাইলে জানাব।”

মঙ্গলবার সুপর্ণাদেবীর সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। বুধবার তিনি কলেজে ঢুকতেই গরহাজিরার সূত্র ধরে মানস ও তাঁর সঙ্গীরা সুপর্ণাদেবীকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। কেমন সে হেনস্থা? সুপর্ণাদেবীর অভিযোগ, মানসের নেতৃত্বে জনা দশ-বারো ছেলে তাঁকে ঘিরে রীতিমতো ধমক দিয়ে বলে, ‘আপনি তিন দিন আসেননি কেন’? উত্তরে সুপর্ণাদেবী জানান, তিন দিন নয়। তিনি শুধু সোমবার অসুস্থতার জন্য আসেননি। রবিবার কলেজ ছুটি ছিল। আর মঙ্গলবার তাঁর ‘অফ ডে’।

এই উত্তর শুনে মানসের দলবল মেজাজ সপ্তমে তোলে বলে অভিযোগ। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘আমরা অফ ডে বুঝি না। আপনি কাকে বলে ছুটি নিয়েছিলেন’? মানস নিজেও গলা চড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি পরিচালন সমিতির সদস্য। আপনি আমাকে জবাব দিতে বাধ্য।’’ সুপর্ণাদেবীর অভিযোগ, কথা কাটাকাটি চলাকালীন একটি ছেলে তাঁর হাত চেপে ধরে মোবাইল কেড়ে ছুড়ে ফেলে দেয়। কয়েক জন ধাক্কাধাক্কিও করে। তিনি উত্তেজনায় জ্ঞান হারান। তাঁকে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

অধ্যক্ষের মদতেই এমন ঘটনার অভিযোগ তুলে সুপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘আমি এখনও আতঙ্কে রয়েছি।’’ অধ্যক্ষ দীপক ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘উনি ক্লাস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই। আমিও তখন ক্লাসে ছিলাম। হেনস্থায় মদতের অভিযোগ মিথ্যে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানসও। তাঁর দাবি, “ছাত্ররা কি শিক্ষিকার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে? অসুস্থ হওয়ার পরে আমরাই তো ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।” সোমবার সুপর্ণাদেবীকে ফোন করার কথাও বেমালুম অস্বীকার করেছেন মানস।

TMCP college teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy