Advertisement
E-Paper

বিধানসভা ভোটে আসন বাড়বে তৃণমূলের, ঘোষণা করে দিলেন মমতা! কোন কোন কারণে এই বিশ্বাস দলের সর্বময় নেত্রীর?

কিসের ভিত্তিতে মমতা আসনবৃদ্ধির কথা বলেছেন, তার কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা তৃণমূলের তরফে মেলেনি। তবে মমতার আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কিছু কারণের কথা উঠে আসছে তৃণমূলের আলোচনায়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ১৯:০৮
TMC’s seats will increase in 2026 election, says CM Banerjee

বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

পশ্চিমবঙ্গে নির্ধারিত সময়ে বিধানসভা ভোট হলে তার এখনও সাত মাস বাকি। সেই ভোটের হাওয়া যখন বইতে শুরু করেছে, তখন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ঘোষণাই করে দিলেন যে, বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের আসন বাড়বে। অর্থাৎ, ২০২১ সালে যে সংখ্যক আসন পেয়েছিল তৃণমূল, তার চেয়ে বেশি পাবে তারা।

মমতা এই আসনবৃদ্ধির কথা এর আগে কখনও বলেছেন বলে তৃণমূলের কেউ মনে করতে পারছেন না। সাধারণত তিনি ‘জিততে হবে’ ধরনের মন্তব্য করেন। আসনসংখ্যা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী মমতা সাধারণত করেন না। বরং তা করেন অভিষেক বন্দ্যওপাধ্যায়। যেমন গত লোকসভা ভোটের আগে তিনি বলেছিলেন, ২০১৯ সালের চেয়ে একটি হলেও বেশি আসন পাবে তৃণমূল। বাস্তবে পেয়েছিল তার ঢের বেশি। যেমন বৃহস্পতিবারেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মঞ্চ থেকে অভিষেক বিধানসভা ভোটে আসনবৃদ্ধির কথা বলেছেন। পাশাপাশি দাবি করেছেন, বিজেপি ৫০ টপকাতে পারবে না।

আর ওই কর্মসূচিতে মমতা বলেছেন, ‘‘বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়েনি, ছাড়বেও না। কারও সাহায্য ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেস দল তৈরি হয়েছিল মানুষের আশীর্বাদে, দোয়ায়, জয় জোহারে। মনে রাখবেন, আগামী নির্বাচনে আরও সিট (আসন) আপনাদের বাড়বে। তার কারণ, আমরা মানুষের উন্নয়ন করি, আরও করব।’’

রাজনৈতিক নেতারা এই ধরনের কথা বলেন মূলত তিনটি কারণে। প্রথম, জনমানসে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস তুলে ধরা। দ্বিতীয়, দলের কর্মীবাহিনীর মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস জারিত করা এবং নেতাদের উপর ভাল ফলাফলের জন্য ‘চাপ’ তৈরি করা। তৃতীয়, বিরোধীদের মনোবলে আঘাত করা।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ২১৩টি (২৯২টি আসনে ভোট হয়েছিল। প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে মুর্শিদাবাদের দু’টি আসনে ভোট স্থগিত ছিল) আসন জিতেছিল তৃণমূল। পরে মুর্শিদাবাদের ওই দু’টি আসনও জেতে তৃণমূলই। ২১৩ থেকে আসন বেড়ে হয় ২১৫। বিজেপি ৭৭টি আসন জিতলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা কমে হয় ৭৫। সাংসদপদ রেখে দিয়ে দিনহাটা এবং শান্তিপুরের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন পদ্মশিবিরের নিশীথ প্রামাণিক এবং জগন্নাথ সরকার। দু’টি উপনির্বাচনেই জয় পায় ঘাসফুল। ফলে তৃণমূলের আসন বেড়ে হয় ২১৭। তার পর বিজেপির হাতে থাকা ধূপগুড়ি এবং মাদারিহাট আসনেও উপনির্বাচনে জেতে তৃণমূল। আসন আরও বেড়ে হয় ২১৯। এই পর্বে বিজেপির ৮ জন বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। ফলে সংখ্যা আরও বেড়েছে শাসকদলের। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব ২০২১ সালের ভোটে ২১৫ আসনকেই ‘জেতা’ হিসাবে ধরছে। অভিষেক তেমনই বলেছেন।

কিসের ভিত্তিতে মমতা আসনবৃদ্ধির কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, তার কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা তৃণমূলের তরফে মেলেনি। তবে দলের প্রথম সারির একাধিক নেতার বক্তব্য, মমতার আত্মবিশ্বাস বা আসনবৃদ্ধির ঘোষণার দৃঢ়তার অন্যতম কারণ সরকারি পরিষেবা। তৃণমূলে একটি হিসাব খুব স্পষ্ট। তা হল, রাজ্যে এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে মমতার সরকারের কোনও ‘সুবিধাভোগী’ নেই। মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের যে সমর্থন এত দিন ধরে মমতা পুঁজিতে পরিণত করেছেন, তা আরও সংহত হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গেই সংগঠনের জোরের কথা বলছেন শাসকদলের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ভোট হয় বুথে। সেই বুথস্তরের সংগঠনে তৃণমূল এখনও অপ্রতিরোধ্য। উল্টো দিকে বিজেপি-সহ বিরোধীদের সংগঠনের দৈন্য প্রকট। যা তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে বিজেপি মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছে এটা ঠিক। কিন্তু সেটা এখনও সরকারি পরিষেবা বা তৃণমূলের সংগঠনকে ছাপিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছোয়নি।’’

আসন বৃদ্ধির আগাম ঘোষণাকে অনেকে রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে মমতার ‘বার্তা’ হিসাবেও দেখতে চাইছেন। তাঁদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। কমিশনের চাপে রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে নবান্ন। বৃহস্পতিবার মমতা বলেছেন, ‘‘ললিপপ সরকার বিডিও, এসডিও, ডিএম, এসপিদের ভয় দেখাচ্ছে। বলছে চাকরি খেয়ে নেব নয় জেলে পুরে দেব। নির্বাচন কমিশন আসে আর যায়, তার পরে কিন্তু রাজ্য সরকার থাকে। গায়ের জোরে এ সব হবে না।’’ অনেকের বক্তব্য, আসন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে মমতা প্রশাসনকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, ভোটের পরে নবান্নের ১৪তলায় আরও দাপট নিয়েই তিনি যাবেন।

তবে এই মতের উল্টো অভিমতও রয়েছে। অনেকের বক্তব্য, ২০২৬ সালের ভোটে তৃণমূল ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে নির্বাচনে নামবে। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তীব্র হলে সংগঠন, সরকারের কাজের উপর ভোট নির্ভর করে না। যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে। সেই সময়ে বামেদের সংগঠনের তুলনায় তৃণমূলের বুথস্তরের সাংগঠনিক শক্তি ছিল যৎসামান্য। কিন্তু ভোটে বামেরা পর্যূদস্ত হয়েছিল। তবে বামেদের ক্ষেত্রে ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ‘বোঝা’ ছিল প্রায় সাড়ে তিন দশকের। তৃণমূলের ক্ষেত্রে এখনও অতটা সময় অতিবাহিত হয়নি।

Mamata Banerjee West Bengal Assembly Election Assembly Seats West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy