এখানেই তৈরি হবে থানা। নিজস্ব চিত্র।
দিন দুপুরে দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করছে। আবার কখনও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দোকানে ঢুকে নগদ টাকা নিয়ে চম্পট দিচ্ছে। তা ছাড়া প্রায়ই ঘটছে তোলাবাজি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা।
এ সব রুখতে ও এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা বাড়াতে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় এ বার থানা তৈরি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় থানা তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হয়েছে। শীঘ্রই ওই থানা চালু করা হবে।’’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ থানা ভেঙে পেট্রাপোল থানা তৈরি করা হচ্ছে। ওসি থানা হবে। পেট্রাপোল বন্দর এলাকা ছাড়াও ওই থানার অধীনে থাকছে হরিদাসপুর, খলিতপুর, কালিয়ানি, ছয়ঘরিয়া, নরহরিপুর, ফিরোজপুর-সহ বেশকিছু এলাকা।
দিনের পর দিন পেট্রাপোল বন্দরে নানা অপরাধমূলক কাজ বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাতে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা এ দেশে ঢুকে ট্রাক থেকে পণ্য চুরি করে পালায়। সম্প্রতি আবার মাদক পাচার ও সোনা রুপো পাচার শুরু হয়েছে। পাচারকারীদেরও স্বর্গ রাজ্য হয়ে উঠেছে পেট্রাপোল সীমান্ত এলাকা বলে স্থানীয়রা জানান। শুক্রবার রাতে একটি কসমেটিক্সের দোকান থেকে কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে। এ দিনই ওই এলাকার একটি হোটেল থেকে মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনগাঁ থানা থেকে বন্দরের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। আইন শৃঙ্খলা জনিত কোনও সমস্যা হলে থানা থেকে পুলিশ আসতে আসতেই দুষ্কৃতীরা পালায়। সীমান্ত পেরিয়ে দুষ্কৃতীদের বাংলাদেশে পালানোর উদাহরণও রয়েছে। বনগাঁর আয়তন ১৫৭.০৬ বর্গ কিলোমিটার। এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য বনগাঁ থানায় রয়েছে মাত্র তিনটি গাড়ি। অফিসারের সংখ্যা ১৪ জন। আর সব মিলিয়ে পুলিশ কর্মীর সংখ্যা ২৮ জন। ফলে ওই পরিকাঠামো নিয়ে আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়।
কিন্তু বন্দর এলাকাতে থানা হলে দুষ্কৃতীদের উপর পুলিশি নজরদারিও বেশি থাকবে। পাশাপাশি বনগাঁ থানা এলাকার আইন শৃঙ্খলারও উন্নতি ঘটবে বলে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের অনুমান।
ওই এলাকার একটি সরকারি ভবনে ইতিমধ্যে পেট্রাপোল পুলিশ স্টেশন হবে বলে সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে।
তবে ওই ভবনে থানা তৈরি হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি আছে বলে জানান ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সন্তোষ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ভবনটি শুল্ক ও অভিবাসন দফতর চত্বরে। সেখানে সন্ধ্যায় যেতে হলে বিএসএফের অনুমতি লাগে। দিনের বেলাতেও অভিবাসন দফতরের কর্মীরা সমস্যা তৈরি করে।’’ ফলে ওই ভবনে থানা হলে মানুষেরই দুর্ভোগ হবে। আমরা চাই অন্যত্র থানা ভবন তৈরি করা হোক। যদিও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বন্দরের কোন এলাকায় থানা ভবন হবে সেটা এখনও ঠিক করা হয়নি।
পেট্রাপোল থানা তৈরিতে খুশি সকলেই। পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় একটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের ম্যানেজার আশিষ দে জানান, থানা হলে এখানে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বাড়বে। প্রকাশ্যে বেআইনি কাজকর্ম বন্ধ হবে।
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেরায় অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বন্দর এলাকায় এখনও ছোট বড় চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এখানে নিরাপত্তা বলে এখন কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। থানা চালু হলে সকলেই উপকৃত হবেন।’’
এখন সবাই নতুন থানা উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy