Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আজ বাইরে বিকল্প বাজেট বিরোধীদের

বিধানসভার মধ্যে তুলকালামে বিরোধী দলনেতা-সহ বিধায়করা আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে এ বার শুধু বাজেট বয়কট করেই থামছে না বিরোধীরা। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভার মধ্যে আজ, শুক্রবার যখন বাজেট পেশ করবেন, ওই একই সময়ে বিধানসভা চত্বরে নকল অধিবেশন বসিয়ে প্রতীকী বিকল্প বাজেট পেশ করবে বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

বিধানসভার মধ্যে তুলকালামে বিরোধী দলনেতা-সহ বিধায়করা আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে এ বার শুধু বাজেট বয়কট করেই থামছে না বিরোধীরা। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভার মধ্যে আজ, শুক্রবার যখন বাজেট পেশ করবেন, ওই একই সময়ে বিধানসভা চত্বরে নকল অধিবেশন বসিয়ে প্রতীকী বিকল্প বাজেট পেশ করবে বিরোধীরা।

সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে আলাদা মাত্রা দিতে বৃহস্পতিবার প্রতীকী হলেও রীতিমতো মহড়া দিয়ে বিকল্প বাজেটের নথি তৈরি করা হয়েছে। প্রাক্তন আইএএস, অধুনা কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী আলোচনা করে বিকল্প বাজেটের খসড়া তৈরি করেছেন। রাতে এ ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর। প্রতীকী অর্থে হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতির সঙ্গে তাঁদের যে ফারাক আছে, তা আজ নকল বাজেট অধিবেশনে বোঝাতে চাইছে বাম এবং কংগ্রেস। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য কটাক্ষ, ‘‘নকল ছেড়ে আসল বিধানসভায় আসুন। বামেরা ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ রেখে গিয়েছে। তাই তাঁদের মুখ দেখানোর জায়গা নেই। জনগণের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজেদের মুখ প্রচারমাধ্যমে দেখানোর জন্যই তাঁরা এ সব করছেন।’’

বিধানসভায় বুধবার সম্পত্তি ভাঙচুর রোধ বিল ঘিরে ধুন্ধুমারের পর থেকেই অধিবেশন বয়কট করছে কংগ্রেস এবং বাম। এ দিনও তারা অধিবেশন চলাকালীন সভার বাইরে বারে বারেই স্লোগান দিয়ে মিছিল করে এবং বিক্ষোভ দেখায়। শিক্ষা সংক্রান্ত যে বিল এ দিন বিধানসভায় আনা হয়েছে, তাকেও ‘কালা বিল’ আখ্যা দিয়েছে কংগ্রেস এবং বাম। বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়ে ওই বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেন কংগ্রেস এবং বাম বিধায়করা। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের উপর আক্রমণ হল কেন, এই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দিকের বিধানসভার ফটকের সামনে স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক ও যুব কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে যুব কংগ্রেস কর্মীদের ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশ তাঁদের ১০৩ জনকে গ্রেফতার করে বলে দলীয় নেতৃত্বের দাবি। পরে অবশ্য পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়।

বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ চলাকালীন সুজনবাবু বলেন, ‘‘গত কাল বিধানসভায় যা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন ঘটনা। শাসক দলের নির্দেশে বিধানসভা চলছে। বিরোধীদের উপর জবরদস্তি হচ্ছে। প্রতিমা রজক এবং জাহানারা খান— দু’জন মহিলা বিধায়ক। তাঁদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা কহতব্য নয়। বিধায়কদেরই ইজ্জত থাকছে না, তা হলে বাইরে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা, বোঝাই যাচ্ছে!’’ বুধবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমাদেবী এ দিন হেয়ার স্ট্রিট থানায় বিধানসভার মার্শাল দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এসসি এসটি (প্রিভেনশান অফ অ্যাট্রোসিটিজ) অ্যাক্ট, ১৯৮৯-সহ কয়েকটি আইনি ধারায় এফআইআর করেছেন।

বিধানসভায় বিরোধীদের উপর জবরদস্তির নিন্দা করেছে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতারাও। তা ছাড়া ফোন করে আব্দুল মান্নানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধীও। তবে মুখ্যমন্ত্রী কেন বিরোধী দলনেতাকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন না সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু এবং উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায় অবশ্য এ দিন হাসপাতালে মান্নানকে দেখতে যান। পার্থবাবু যদিও এ দিন দাবি করেছেন, মান্নানের আগে থেকেই হৃদরোগ ছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নভেম্বর মাসে আব্দুল মান্নানের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখন তো হৃদরোগ পাওয়া যায়নি! ডাক্তার বলেছেন, বিধানসভায় উত্তেজনা থেকেই ওঁর শরীর খারাপ হয়েছে।’’ বিধানসভার ওই তাণ্ডবের প্রতিবাদে ধর্মতলা থেকে রামলীলা উদ্যান পর্যন্ত বামফ্রন্টের মিছিল হয়। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বামফ্রন্টের প্রথম সারির সব নেতাই সেখানে ছিলেন। মিছিল শেষে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘এই সরকার বরাবরই বিরোধীদের অধিকার কেড়ে নিতে সচেষ্ট। কিন্তু এ ভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Budget Alternative Congress CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE