Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পাগলু ডান্স না থাকলেও মঞ্চ চাঁদের হাট

ব্রিগেডে ‘পাগলু ডান্স’ দেখেছিল ২১ জুলাইয়ের জনতা। সেটা তিন বছর আগের ঘটনা। তার পর থেকেই সংস্কৃতি, ক্রীড়া জগতের তারকাদের অনেকেই তৃণমূলমুখী। সদ্য লোকসভা ভোটে এক ঝাঁক তারকা দলের সাংসদও হয়েছেন। ফলে ‘তারকা খচিত’ দলের নানা কর্মসূচিতে তাঁদের অনেককেই দেখা যায়। কিন্তু সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূলের মঞ্চে যে ‘গ্ল্যামারে’র ছটা দেখা গেল তা অতীতের সব রেকর্ড ম্লান করে দিয়েছে

ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে...। সভামঞ্চে দলনেত্রী ও দেব।  নিজস্ব চিত্র

ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে...। সভামঞ্চে দলনেত্রী ও দেব। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

ব্রিগেডে ‘পাগলু ডান্স’ দেখেছিল ২১ জুলাইয়ের জনতা। সেটা তিন বছর আগের ঘটনা। তার পর থেকেই সংস্কৃতি, ক্রীড়া জগতের তারকাদের অনেকেই তৃণমূলমুখী। সদ্য লোকসভা ভোটে এক ঝাঁক তারকা দলের সাংসদও হয়েছেন। ফলে ‘তারকা খচিত’ দলের নানা কর্মসূচিতে তাঁদের অনেককেই দেখা যায়। কিন্তু সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূলের মঞ্চে যে ‘গ্ল্যামারে’র ছটা দেখা গেল তা অতীতের সব রেকর্ড ম্লান করে দিয়েছে।

অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়, শতাব্দী রায়, মুনমুন সেনের মতো দলীয় সাংসদরা তো ছিলেনই, ছিলেন টলিউডের এক ঝাঁক তারকা। এ বার রুপোলি জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে হাজির ছিলেন ক্রীড়াজগতের নক্ষত্রেরাও। কে নেই সেই তারকামণ্ডলীতে? কন্যা কোয়েল, জামাই নিশপাল সিংহ রানেকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসেন কলকাতার শেরিফ অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। তাঁদের সঙ্গেই মঞ্চে ওঠেন দীপঙ্কর দে। মঞ্চে ছিলেন তৃণমূলের যুব সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অভিনেতা হিরণ। রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্যা অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন গায়ক দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। বেলা ১টা নাগাদ অভিনেতা-সাংসদ দেবকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগেই রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মঞ্চে নিয়ে আসেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া, অভিনেতা সোহম, অরিন্দম শীল, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা-সহ বেশ কয়েক জন টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রীকে। তাঁদের মঞ্চের সামনের সারিতেই বসানো হয়।

টলিউডের পাশাপাশি ক্রীড়া জগতের তারকাদের বিপুল উপস্থিতি এ দিনের সমাবেশকে বর্ণময় করেছে। হাওড়ার সাংসদ ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দার্জিলিঙে দলের পরাজিত প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া তো ছিলেনই, তৃণমূলনেত্রী আসার কিছুক্ষণ আগেই ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে প্রায় লাইন করে মঞ্চে ওঠেন গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, কম্পটন দত্ত, মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে এ কালের মেহতাব হোসেন, লক্ষ্মীরতন শুক্ল প্রমুখ। এমনকী, এ দিন প্রদীপ (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীণ ফুটবলার-প্রশিক্ষকও মঞ্চে এসেছেন। ক্রীড়া-তারকাদের মধ্যে একমাত্র সুব্রতই বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ দেখে তিনি আপ্লুত। তৃণমূল নেত্রীর উপস্থিতিতে সুব্রত বলেন, “তৃণমূলের সরকার সাফল্যের সঙ্গে রাজ্য চালাচ্ছে। দলের আরও সাফল্য আসুক। রাজ্য ভাল ভাবে চলুক। আমরা নিশ্চিন্তে থাকি।”

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

তিন বছর আগে দেব ‘পাগলু’র গান গেয়েছিলেন। এ দিন কোনও নাচ-গান তিনি করেননি। ঝির ঝিরে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে জনতাকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। তাঁর পরে বক্তব্য রেখেছেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং দলের সাংসদ চিত্রকর যোগেন চৌধুরী। তাঁদের পরে বলতে উঠে রঞ্জিতবাবু জনতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “কেমন আছেন? ভাল তো? সব সময়ে ভাল থাকবেন। বারবার আসবেন।” তৃণমূল-জনতা তাঁর ছোট্ট বক্তব্যে উদ্বেলিত হয়েছে। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, “কলকাতার শেরিফ কী ভাবে একটি রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখলেন?” তাঁরা এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলে শমীকবাবু জানিয়েছেন।

তৃণমূলের সভায় এর আগে গায়ক নচিকেতা বা গত লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেনকে গান গাইতে দেখা গিয়েছে। এ দিন তাঁরা দু’জনেই ধর্মতলার সভায় গান গেয়েছেন। এ বার তাঁদের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছেন আরও এক গায়ক সৌমিত্র রায়। এ বার লোকসভা ভোটে ইন্দ্রনীলের মতো তিনিও প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এ বারে তৃণমূলের সমাবেশে তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য শোনা যায় একদা বামপন্থী শিবিরে থাকা কবি সুবোধ সরকার ও অভিনেতা অরিন্দম শীলের বক্তৃতায়। সুবোধ বলেন, “আমি জীবনে এরকম মানুষের ভিড় দেখিনি। ভারতের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে এত মানুষ জড়ো হয় না।’’ আর রাজ্যে গ্রাম-শহরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলে আবেদন জানান অরিন্দম।

সভার একেবারে অন্তিম পর্বে হুইলচেয়ার সমেত মঞ্চে তোলা হয় মহাশ্বেতা দেবীকে। মমতা তখন বক্তৃতা করছিলেন। বক্তৃতা শেষ করে মমতা সহকর্মীদের নির্দেশ দেন মহাশ্বেতা দেবীকে পোডিয়ামে তোলার জন্য। হুইলচেয়ারে বসে অশীতিপর সাহিত্যিক বলেন, “এত বড় জনসমুদ্র দেখে আমি স্তম্ভিত। আমার হৃদয় আলোড়িত। আজকের দিনটি সকলের মনে রাখার মতো। শ্রদ্ধা করার মতো।”

অবশ্য এই তারকার বৃত্তে তৃণমূলের দুই অভিনেতা সাংসদকে দেখা যায়নি। একজন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি শু্যটিংয়ে বিদেশে। আর অন্য জন তাপস পাল। বির্তকিত বক্তৃতার পর থেকেই যিনি অন্তরালে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc 21 july tmc rally tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE