Advertisement
E-Paper

জলদাপাড়ার এমন হাল আগে কখনও দেখিনি, আমার রিসর্টে জনা চল্লিশেক পর্যটক আটকে, যথাসম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করছি

পর্যটকদের অনেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। তাঁদের কারও কারও গাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। কোনওটি আবার ভাসতে ভাসতে গাছের মধ্যে গিয়ে আটকেছে।

মিঠুন সরকার

মিঠুন সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৫৯
জলদাপাড়ার সীসামারায় দুর্যোগে পর্যটক এবং রিসর্ট মালিকেরা।

জলদাপাড়ার সীসামারায় দুর্যোগে পর্যটক এবং রিসর্ট মালিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

এত বছর ধরে এখানে আছি, এমন দুর্ভোগে কোনওদিন পড়িনি। নয় নয় করে প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল কটেজ চালাচ্ছি জলদাপাড়ার সীসামারায়। কিন্তু এখানে এমন বন্যা কোনওদিন দেখিনি।

খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। পর্যটকেরা তো দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেনই, আমাদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। কী ভাবে পর্যটকদের নিরাপদে বার করব, তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছি না। পর্যটকদের অনেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন। তাঁদের কারও গাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। আবার কোনও গাড়ি ভাসতে ভাসতে গাছের মধ্যে গিয়ে আটকেছে।

শুনেছি ভুটানের ওদিকে নাকি প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে। এখানেও শনিবার সন্ধ্যা থেকে সমানে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা-৮টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয়। রাতের দিকে বৃষ্টি আরও বাড়ে। সীসামারা নদীর জল বাড়তে বাড়তে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। হু হু করে জল ঢুকছে সেখান দিয়ে। কোথাও এক গলা, কোথাও বুকসমান, তো কোথাও কোমর বা হাঁটুসমান জল হয়ে গিয়েছে। আমাদের কটেজ থেকে বেরোনোর রাস্তাতেও তো প্রায় এক মানুষসমান জল জমে আছে।

এখানে প্রতিটি কটেজ এবং হোমস্টের একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। জেনারেটারও জলের তলায়। পর্যটকেরা সকলেই আটকে পড়েছেন এখানে। কেউই বেরোতে পারছেন না। গোটা সীসামারাতে প্রায় ১০০-১৫০ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন বলে আমাদের ধারণা। শুধু আমাদের কটেজেই তো ৩৫-৪০ জন আটকে আছেন। অন্য কটেজগুলিতেও কোথাও দু’জন, কোথাও সাত জন, কোথাও ১৮ জন, কোথাও ১৫ জন, কোথাও আবার ২৩ জন আটকে রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিটি কটেজের নিজস্ব কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরাও আটকে গিয়েছেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রবিবার দুপুর পর্যন্তও উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছোয়নি। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। ওরা বলল, দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। যত ক্ষণ না উদ্ধারকারী দল এসে পৌঁছোচ্ছে, পর্যটকদের কেউ-ই বেরোতে পারছেন না। একটু আতঙ্কেই রয়েছেন তাঁরা। সত্যি বলতে, একটু নয়, প্রবল আতঙ্কে আছেন সকলে। বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটার কাজ করছে না। সকাল থেকে অনেকের মোবাইলের চার্জও শেষ হয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। খুবই বাজে অবস্থার মধ্যে আছি আমরা।

এখানে বেশির ভাগ কটেজেই হোমস্টের মতো ব্যবস্থা। অনেক কটেজে নিজস্ব গরু রয়েছে। এই দুর্যোগের মধ্যে ওই গবাদি পশুদেরও অবস্থা দুর্বিষহ। মনে হচ্ছে যে কোনও মুহূর্তে জঙ্গল থেকেও গন্ডার রাস্তায় বেরিয়ে চলে আসতে পারে। যদিও কোনও গন্ডার রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার কথা এখনও শুনিনি।

পর্যটকেরা এমনিতেই এখন চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। এখন আমরা আর তাঁদের কাছে ভাড়ার কথা তুলছি না। আজকের জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে কোনও ভাড়াও নিচ্ছি না। এই দুর্যোগের মধ্যে তাঁদের থেকে ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এতগুলি লোক বিপদে পড়েছেন, তাঁদের নিরাপদে বার করাই আমাদের উদ্দেশ্য। তবে আমাদেরও তো সামর্থ্য সীমিত। তার মধ্যেও যতদূর সম্ভব আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাইরে একটি নিরাপদ জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে দিয়েছি। পর্যটকদের এখান থেকে বার করতে পারলে, সেই গাড়িতে করে আমরা তাঁদের একটি ভাল গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে চাই।

আপাতত নতুন বুকিংয়ের কথাও ভাবছি না। রবিবার এবং সোমবারের সব বুকিংও বাতিল করে দিয়েছি। পরে কটেজ এবং হোমস্টে অ্যাসোসিয়েশনের সকলে মিলে বসে ঠিক করব ৭ অক্টোবরের জন্য কোনও বুকিং রাখব কি না। আমাদের এখানে কটেজ ব্যবস্থা। ঘরগুলি একটি সঙ্গে অন্যটির কোনও যোগ নেই। এখন এই দুর্যোগের মধ্যে একটা ঘর থেকে অন্য ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়াও কঠিন হয়ে উঠেছে। আমাদের কাছে যত ক্ষণ খাবার মজুত আছে, তত ক্ষণ আমরা চালিয়ে যাব। পর্যটকদের থেকে এক পয়সাও নেব না। কিন্তু আমরা চাই যাতে আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি না হয়। যাতে দ্রুত পর্যটকদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়।

আমাদের রান্নাঘর, জেনারেটার জলের নীচে। জেনারেটার চালানো যাচ্ছে না। চালালেই শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে। কিছুই করা যাচ্ছে না। পর্যটকেরা চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে আছেন। আমরা খিচুড়ি রান্না করে পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকে তা মুখেও দিতে চাইছেন না। তাঁরা বলছেন, আমাদের এখান থেকে বার করুন। তাঁরা অধৈর্য্য হয়ে পড়ছেন। অনেকেই একটু পরে পরে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছেন। সেটাই স্বাভাবিক। একটা লোক বিপদে পড়লে যা হয় আর কী! কিন্তু আমরাও তো নিরুপায়। আমরা কিছুই করতে পারছি না।

(লেখক জলদাপাড়ার একটি রিসর্টের মালিক)

Jaldapara Heavy Rain Waterlogged Situation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy