Advertisement
১০ মে ২০২৪
Road Accident

Road Accident: ‘কথা ছিল সবাই কেক খাব, কিন্তু সব শেষ!’

ক্রমশ আঁধার হয়ে আসা সেই গলি ধরে আরও খানিক এগোলে এক ফালি ঘরের সামনে থমথমে ভিড়।

 সরানো হচ্ছে দেহ।

সরানো হচ্ছে দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

সরু গলির মুখে সদ্য লাগানো হ্যালোজেনের আলোয় ঝলসে যাচ্ছে ছবিটা—কালো কার্ড-বোর্ডের উপরে তাড়াহুড়ো করে লাগানো রঙিন ছবি, বাবা-মায়ের মাঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বছর আটেকের একটি ছেলে। শুক্রবার বিকেলে, যে ছবির তিন জনই ‘শেষ’ হয়ে গিয়েছে সম্প্রীতি সেতুর বাঁকে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে সেই ছোট্ট ফারদিনের কাকা শেখ শাহিল হিন্দিতে বিড়বিড় করছিলেন, ‘‘বড়দিন, কেক খাওয়ার কত শখ ছিল, হঠাৎ সব কিছুই শেষ হয়ে গেল।’’

ক্রমশ আঁধার হয়ে আসা সেই গলি ধরে আরও খানিক এগোলে এক ফালি ঘরের সামনে থমথমে ভিড়। ভিতর থেকে মাঝে মাঝেই উপচে আসছে চাপা কান্না— মহম্মদ ফিরোজের এক টুকরো আবাস। শুক্রবার বিকেলে, সেই ঘরের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন এক বৃদ্ধ, ফিরোজের দূর সম্পর্কের কাকা শামিম আলি, স্বগতোক্তির স্বরে হিন্দিতে বলছেন, ‘‘এর কি কোনও দরকার ছিল!’’ হঠাৎ সেই অপ্রয়োজনীয় সত্যটাই এখন মাথা কুটছে একবালপুর রোডের এইচ/৫ গলিতে।

যে গলির প্রান্তে, এক পড়শির বাড়িতে চুপ করে বসে আছে ফিরোজের সদ্য কিশোর বড় ছেলে। এক বিকেলেই অনাথ হয়ে যে সন্ধেতক একটিও কথা বলেনি বলে জানাচ্ছেন আত্মীয়েরা। পাড়া পড়শি থেকে স্বজন, শুক্রবার বিকেলে, এই অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার পরে কোনও যুতসই যুক্তি খুঁজে না পেয়ে ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন হারানো মানুষগুলোর। ফিরোজের আত্মীয় আমজাদ আলি জানাচ্ছেন, ছোটখাটো ব্যবসা করতেন ফিরোজ। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে আটপৌরে দিনযাপনের সংসারে কোনও অপূর্ণতা ছিল না তার পরিবারে। বছর খানেক আগে শখ করেই কিনেছিলেন মোটরবাইক। সেই বাইকের গতিই বুঝি তাঁর আস্ত পরিবারটিকে আচম্বিতে টেনে নিয়ে গেল সরু গলির চেনা অন্ধকার থেকে অনেক দূরের আঁধারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident bike accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE