Advertisement
E-Paper

মোগলসরাইয়ে ট্রেনের চাপ, দেরির ফাঁসে বাংলার যাত্রীরাও

মোগলসরাই থেকে রাতে কালকা মেল ধরে কলকাতায় আসার টিকিট ছিল আমেরিকা-প্রবাসী এক চিকিৎসকের। পরের দিন বিকেলে দমদম থেকে বিমান ধরে তাঁর আমেরিকা ফেরার কথা। রাতে মোগলসরাইয়ে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, কালকা মেল প্রায় ১২ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। শেষ পর্যন্ত অনেক টাকা গচ্চা দিয়ে রাতেই একটি গাড়ি ভাড়া করে পরের দিন দুপুরে কলকাতায় আসতে হয়েছিল তাঁকে।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭
Share
Save

• মোগলসরাই থেকে রাতে কালকা মেল ধরে কলকাতায় আসার টিকিট ছিল আমেরিকা-প্রবাসী এক চিকিৎসকের। পরের দিন বিকেলে দমদম থেকে বিমান ধরে তাঁর আমেরিকা ফেরার কথা। রাতে মোগলসরাইয়ে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, কালকা মেল প্রায় ১২ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। শেষ পর্যন্ত অনেক টাকা গচ্চা দিয়ে রাতেই একটি গাড়ি ভাড়া করে পরের দিন দুপুরে কলকাতায় আসতে হয়েছিল তাঁকে।

• পরিবার নিয়ে বারাণসী বেড়িয়ে ফেরার পথে বিভূতি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটেন ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে মোগলসরাইয়ে এসে জানতে পারেন, ট্রেন আসবে ১০ ঘণ্টা দেরিতে। বৃদ্ধা মা আর শিশুকন্যাকে নিয়ে সারা রাত প্ল্যাটফর্মে বসে থেকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা দেরিতে কলকাতায় পৌঁছন তিনি।

শুধু ওই প্রবাসী চিকিৎসক বা ব্যারাকপুরের বাসিন্দা প্রশান্তবাবুই নন। মোগলসরাইয়ে হয়রানির এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। এবং শুধু কালকা মেল বা বিভূতি এক্সপ্রেসও নয়। মোগলসরাই দিয়ে কলকাতামুখী পূর্বা, দুন, হিমগিরি এক্সপ্রেস বা পঞ্জাব মেলের মতো সব ট্রেনেই দেরির যন্ত্রণা যাত্রীদের নিত্যসঙ্গী। রেলকর্তারাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, মোগলসরাই-ইলাহাবাদ ডিভিশনে ট্রেন চলাচলের সময়সারণি ভেঙে পড়েছে। এর ফলে এক দিকে সব ট্রেন এই ডিভিশনে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টার আটকে থাকছে। আবার অনেক দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছনোর ফলে ফিরতি পথে সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলো প্রান্তিক স্টেশন থেকে সময়মতো ছাড়তেও পারছে না। ফলে দেরির এই চক্র ক্রমশ বাড়তেই থাকছে প্রায় চক্রবৃদ্ধি হারে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, ওই ডিভিশনের ট্রেনগুলি গড়ে ছ’ঘণ্টা দেরিতে চলছে। দুর্ভোগে পড়ছেন বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসমের যাত্রীরা। রেহাই পাচ্ছে না দুরন্ত বা রাজধানী এক্সপ্রেসও। মাঝেমধ্যে তাদেরও দেরি হচ্ছে এক-দেড় ঘণ্টা।

রোজ রোজ এত দেরি কেন?

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসম এই পাঁচ রাজ্য এবং উত্তর ভারতের মধ্যে চলা সব ট্রেনকেই মোগলসরাই-ইলাহাবাদ ডিভিশন দিয়ে যেতে হয়। রেল সূত্রের খবর, এখন ওই ডিভিশন দিয়ে রোজ প্রায় ১০০টি মেল ও এক্সপ্রেস, ৫০টির বেশি লোকাল এবং কমবেশি ৫০টি মালগাড়ি চলাচল করে। এর উপরে চালানো হচ্ছে স্পেশ্যাল ট্রেন এবং অতিরিক্ত মালগাড়িও। সব মিলিয়ে ওই ডিভিশনের ১৫৫ কিলোমিটার রেলপথকে তার ক্ষমতা ছাপিয়ে ট্রেনের ভার নিতে হচ্ছে। কোনও ট্রেন কোনও কারণে সামান্য বিলম্ব করলেই সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে অন্য অনেক ট্রেন।

ওই ডিভিশনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হল কী ভাবে?

রেলকর্তারা দায়ী করছেন রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের জনমোহিনী নীতিকেই। তাঁদের অভিযোগ, লাইনের ক্ষমতার কথা না-ভেবেই আগের রেলমন্ত্রীরা একের পর এক ট্রেন বাড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁদের চাপে পড়ে ফি-বছর নিত্যনতুন ট্রেন চালাতে বাধ্য হয়েছে রেল। রেলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “সাম্প্রতিক কালে যাঁরা রেলমন্ত্রী ছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই বিহার বা পশ্চিমবঙ্গের। নিজেদের রাজ্যের ভোটারদের মন পেতে তাঁরা নিজেদের রাজ্যে যথেচ্ছ ট্রেন বাড়িয়ে গিয়েছেন।” ট্রেন বাড়লেও ওই ডিভিশনের পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা কার্যত কেউই ভাবেননি বলে রেলকর্তাদের অভিযোগ। আর তারই ফল ভুগতে হচ্ছে ওই ডিভিশনের যাত্রীদের। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, ভাবা হয়েছিল, দু’-এক বছরের মধ্যেই পণ্য পরিবহণের জন্য লুধিয়ানা থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’ তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু বিভিন্ন গেরোয় আটকে থাকা সেই বিশেষ লাইন এখন বিশ বাঁও জলে।

মোগলসরাই-ইলাহাবাদ শাখায় মুশকিল আসানের উপায় কী?

রেলকর্তাদের বক্তব্য, এর কোনও চটজলদি সমাধান নেই। রেলের নিয়ম বলছে, যে-লাইনে ৮৫ শতাংশের বেশি চাপ তৈরি হয়, সেখানে সিগন্যালিং-সহ পরিকাঠামোর উন্নয়ন করতেই হবে। আর ওই চাপ যদি ১০০ শতাংশ পেরিয়ে যায়, সে-ক্ষেত্রে নতুন লাইন বসানো দরকার। মোগলসরাই ডিভিশনে সিগন্যালিং পরিকাঠামো বাড়িয়েও বিশেষ লাভ হয়নি। এখন নতুন লাইন তৈরি করা ছাড়া উপায় নেই। আর সেই কাজ শুরু করলে সময় লাগবে অন্তত চার বছর।

আপাতত সুরাহা হবে কী ভাবে?

সমস্যার চটজলদি সমাধানের কোনও রাস্তাই আপাতত দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রেলকর্তাদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, আপাতত এই অনিশ্চিত ট্রেন-সফরই মেনে নিতে হবে যাত্রীদের।

এই অবস্থায় দেরিতে চলা ট্রেনগুলির জন্য রেল কেন সুপারফাস্ট চার্জ নেবে, প্রশ্ন তুলছেন যাত্রীরা।

mughalsarai kalka mail train america Dumdum airport doctor West Bengal Bihar Jharkhand Odisha Assam Amitabha Bandopadhyay

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}