ডুবে গিয়েছে রেললাইন। বুধবার বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশনে। ছবি: অঞ্জন সাহা।
সওয়া ঘণ্টার বৃষ্টিতে মহানগর তো বেসামাল হয়ে গেলই। শিয়ালদহ স্টেশনের পাঁচটি প্ল্যাটফর্মে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে গেল ট্রেন চলাচলও। দফায় দফায় বিগড়ে গেল সিগন্যাল। সব মিলিয়ে মেনলাইন, বনগাঁ, ডানকুনি ও হাসনাবাদ শাখায় ২৯টি লোকাল ট্রেন এবং চারটি এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করে পূর্ব রেল। নিত্যদিনের ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয় আর এক প্রস্ত দুর্গতি।
ট্রেন বাতিলের ধাক্কায় যাত্রীরা অবরোধ শুরু করেন বারাসতে। একাধিক ট্রেন, কেবিন, ম্যানেজারের ঘর ভাঙচুর হয়। স্থানীয় লোকজন ও হকারদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায় যাত্রীদের। ইটবৃষ্টির মুখে প্রথমে পিছু হটে যায় পুলিশ। পরে বাড়তি বাহিনী এসে লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে রাত গড়িয়ে যায়।
বর্ষণে বারবার ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় রেল দফতরের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, বর্ষার আগে শিয়ালদহে নিকাশি ঠিক রাখতে কাজ কতটা হয়েছে? গত সপ্তাহেই টানা বৃষ্টিতে জল জমে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। তার আগে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার-সহ পদস্থ কর্তারা শিয়ালদহ স্টেশনে নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে জানিয়েছিলেন, ভালই কাজ হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টির পরে এ দিন মাত্র সওয়া ঘণ্টার বৃষ্টিতেই যে-ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ জল জমে থাকল, তাতে সেই ‘ভাল কাজ’-এর দাবিটাই পড়েছে প্রশ্নের মুখে। রেলেরই একাংশের অভিযোগ, বর্ষার আগে নিকাশি ঠিক রাখতে ঠিকঠাক কাজ হয়নি।
অভিযোগটা মিথ্যে নয়, তারই প্রমাণ মিলেছে এ দিন। গভীর রাত পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনের দুই থেকে ছ’নম্বর পর্যন্ত পাঁচটি প্ল্যাটফর্মের ধারে জল জমে থাকে। স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ডিজেল পাম্প চালিয়ে জল বার করার চেষ্ট চলছে। কিন্তু তাতে জল বেরিয়ে যাওয়ার বদলে স্রোত ফিরে এসে দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। তার জেরে দফায় দফায় সিগন্যাল ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যায়।
পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, মেনলাইন, বনগাঁ, হাসনাবাদ ও ডানকুনি শাখায় বাতিল করতে হয় ২৯টি লোকাল ট্রেন। ঘরমুখো যাত্রীরা দিশাহারা হয়ে পড়েন। রাত ৭টা ৫০ মিনিটে বারাসত স্টেশন থেকে হাসনাবাদগামী ট্রেন বাতিল হয়। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা বনগাঁগামী ট্রেনের সামনে বসে পড়েন। অবরোধ চলে ৪০ মিনিট। যাত্রীদের দাবি, হাসনাবাদের ট্রেন যদি না-ছাড়ে, বনগাঁর ট্রেনও ছাড়া যাবে না। ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বনগাঁমুখী ট্রেনের যাত্রীরা। দু’টি ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে গোলমাল বেধে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে রেল পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। রেললাইন পাথর তুলে ছুড়তে থাকে ক্ষিপ্ত জনতা।
পুলিশ পিছু হটে তখনকার মতো চলে যেতেই ফের নিজেদের মধ্যে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন যাত্রীরা। বারাসত স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি ট্রেনে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর হয় স্টেশন ম্যানেজারের ঘর, কেবিনেও। ভয়ে নিজেদের দফতর ভিতর
থেকে চাবি দিয়ে বন্ধ করে দেন স্টেশনের আধিকারিকেরা। এলাকার কিছু লোক ও হকার তখন অবরোধকারীদের মারধর শুরু করে। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বারাসত স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকা। বারাসত থানা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী আসে। হাঙ্গামায় পুলিশ, হকার-সহ ১৪-১৫ জন জখম হন। ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে রাত ১০টা হয়ে যায়। ১০টা ২০ মিনিটে ফের ট্রেন চলতে শুরু করে। বনগাঁ ও হাসনাবাদের ট্রেন দু’টিও ছেড়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy