E-Paper

ভোটে দেদার বাজি, ক্লাস্টারের জট নিয়েই সবুজ বাজির প্রশিক্ষণ

যদিও এই প্রশাসনিক নজরদারির অভাব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে এগরা, বজবজ, মহেশতলায় পর পর বিস্ফোরণে। একাধিক জনের মৃত্যুর পরে সরকারের তরফে বাজি ক্লাস্টার তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়।

নীলোৎপল ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৭
An image of Fire Crackers

—প্রতীকী চিত্র।

উৎসবে বাজি ফাটে। আইনবিরুদ্ধ কাজ হলে পুলিশি ধরপাকড়ও চলে। কিন্তু ‘ভোট উৎসব’ ঘিরেও দেখা গেল সেই একই চিত্র। অভিযোগ, সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানোর হিড়িক দেখা গিয়েছে রাজ্য জুড়ে। কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ পদক্ষেপ করেছে, আর তাতেই গোটা রাজ্যে নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন থেকে রবিবার পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোগ্রাম বাজি! বাদ নেই পঞ্চায়েত ভোট হওয়া কলকাতা পুলিশ এলাকাও। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, বাজির ক্লাস্টার তৈরির কথা যেখানে চলছে, যেখানে বাজি ব্যবসায়ী থেকে প্রশাসন— সব পক্ষই দাবি করছে রাজ্যে এই মুহূর্তে সব বাজি কারখানা বন্ধ, সেখানে এত বাজি এল কোথা থেকে?

স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এরই মধ্যে আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার হুগলিতে সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির হতে চলেছে। তার জন্য শহরে এসেছেন ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু। তিনি জানাচ্ছেন, সরকারি উদ্যোগে হওয়া এই শিবির থেকে বিনা খরচে সবুজ বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, যেখানে ক্লাস্টার ঘিরে এখনও জট কাটেনি, সেখানে এই ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি বাজি কারখানা ফের খুলে ফেলবেন না তো? সাধনা বলছেন, ‘‘সেটা যাতে না হয়, তা দেখার দায়িত্ব প্রশাসনেরই।’’

যদিও এই প্রশাসনিক নজরদারির অভাব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে এগরা, বজবজ, মহেশতলায় পর পর বিস্ফোরণে। একাধিক জনের মৃত্যুর পরে সরকারের তরফে বাজি ক্লাস্টার তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়। জানানো হয়, তৈরি হবে বাজি রাখার ম্যাগাজ়িনও। বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ পুজোর আগেই সব ক্লাস্টার তৈরি হয়ে যাবে বলে প্রচার শুরু করলেও এখনও সেই কাজ কিছুই এগোয়নি। এই পরিস্থিতিতেই হুগলি জেলার ৩২ জন ব্যবসায়ীর নাম ঠিক হয়ে গিয়েছে সবুজ বাজির প্রশিক্ষণের জন্য। তবে এই প্রশিক্ষণ নিয়ে জটিলতাও চলেছে কিছু দিন।

এমনিতে এককালীন ১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি এবং বাজির মশলা তৈরির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয় জেলাশাসকের কাছ থেকে। ১৫ থেকে ৫০০ কেজি হলে ‘কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভস’-এর কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম। তারও বেশি ওজনের বাজির ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স দেন ‘চিফ কন্ট্রোলার’। ১৫ কেজি পর্যন্ত সবুজ বাজির কাজ করতে চেয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন বহু ব্যবসায়ী। তাঁদের বলে দেওয়া হয়, নিরি-র ছাড়পত্র ছাড়া কিছু করা যাবে না। ওই ব্যবসায়ীরা নিরি-র কাছে আবেদন করেন। সেখান থেকে পাল্টা বলা হয়, জেলাশাসকের অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়। এর পরে আরও কয়েক বার চিঠি পাঠানোর পরে নিরি জানায়, তারা প্রশিক্ষণ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু তার জন্য রাজ্যের ‘মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস অ্যান্ড টেক্সটাইলস’ (এমএসএমই) দফতর থেকে লিখিত অনুরোধ পাঠাতে হবে। তার পরে নিরি প্রশিক্ষণ দেবে এবং তার ভিত্তিতে মিলবে শিক্ষানবিশ শংসাপত্র। পরবর্তী কালে জেলাশাসকের দফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে নিরি-র কাছে আবেদন করলে সব দিক খতিয়ে দেখে মিলবে পাকা শংসাপত্র। কিন্তু এমএসএমই ওই ব্যবসায়ীদের হয়ে আদৌ আবেদন করবে কি না, সেই জটিলতা ছিল। অবশেষে তা কেটেছে।

কিন্তু ভোটে এত বাজি কোথা থেকে এল? দায় নিতে চায়নি কোনও পক্ষই। ‘প্রদেশ আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুকদেব নস্করের দাবি, ‘‘আমাদের সব কারখানা বন্ধ। পুলিশ তো আমাদের এলাকা ফাঁকা করে কিছু দিন আগেই প্রায় ৯০ হাজার কেজি বাজি উদ্ধার করেছে। এই বাজি কোথা থেকে এসেছে, বলতে পারব না।

‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্নার দাবি, ‘‘পুলিশি ধরপাকড়ের পরেও হয়তো কিছু রাখা ছিল। ভালই হয়েছে, ভোটের জন্য সব বেরিয়ে এসেছে। তা ছাড়া, শুধুমাত্র সবুজ বাজিই ভবিষ্যৎ। নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হওয়ায় আরও ভাল ভাবে শুধু সবুজ বাজি তৈরিতেই মন দেওয়া যাবে।’’ আপাতত পুলিশ ব্যস্ত হলদিয়ায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার হওয়া বিপুল বাজি নিষ্ক্রিয় করতে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fire Crackers Ecofriendly

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy