স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মুচলেকায় শেষ পর্যন্ত পোলিও খাওয়ানো হল শিশুকে। —নিজস্ব চিত্র।
‘দো বুন্দ জিন্দেগি কি’— টিভিতে অমিতাভ বচ্চনের মন্দ্র স্বরে এই স্লোগান বারবার শুনেছে দেশবাসী। সংস্কারের ভুল শুধরে বহু বাবা-মা পোলিও রবিবার সন্তান কোলে গিয়ে লাইন দিয়েছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পোলিও টিকাকরণে স্বাস্থ্যকর্মীরাও বাড়ি বাড়ি পৌঁছেছেন। ভারতবর্ষকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ সবের মধ্যেই উল্টো ছবি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরে। চার ও দেড় বছরের দুই শিশুকন্যার পোলিও টিকাকরণ গিয়ে বাধা পেলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেক লড়ে শেষে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও ব্লক স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ লিখিত ভাবে জানালেন, পোলিও খাওয়ানোর পরে সমস্যা হলে দায়িত্ব তাঁদের। তারপর কাটল জট।
পোলিও দূরীকরণে বছরভর প্রচার চলে। আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বোঝান টিকার গুরুত্ব। তারপরেও রামনগর ১ ব্লকের পদিমা অঞ্চলের গদাধরপুর গ্রামের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে সচেতনতার অভাব আরও বেশি ছিল।’’ ব্লক স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত পাত্রেরও দাবি, “প্রচারে ঘাটতি নেই। ওই গ্রামের বাকি সব বাচ্চারা পোলিও খায়।’’
পেশায় রাজমিস্ত্রি নিমাই বারিক ও রিকশা চালক স্বপন বারিক সম্পর্কে ভাই। স্বপনের মেয়ে আরাধ্যার বয়স চার আর নিমাইয়ের মেয়ে টুসুর বয়স দেড় বছর। বাড়িতে জন্মানো দুই শিশুকন্যার এতদিন টিকাকরণ হয়নি। আশাকর্মীরা বারবার বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। রবিবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পূর্ণেন্দু বালা, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত পাত্র ও তিন চিকিৎসকের দল পোলিও খাওয়াতে গেলেও বেঁকে বসেন নিমাই ও স্বপন। জানান, এগরার এক হাতুড়ে বলেছেন, পোলিও না খাওয়াতে।
স্বাস্থ্যকর্তারা হাল ছাড়েননি। তাঁরা ফোনে কথা বলেন হাতুড়ে ব্রজগোপাল মাইতির সঙ্গে। বিএমওএইচ পূর্ণেন্দুর কথায়, “হাতুড়ে সবটাই অস্বীকার করেন। উল্টে অভিভাবকদের পোলিও খাওয়াতে বলেন।’’ তাতেও নিমাই ও স্বপন রাজি হননি। শেষে স্বাস্থ্যকর্তারা দিঘা থানার পুলিশকে ডাকেন, মুচলেকাও লিখে দেন। এরপরই শিশুদের পোলিও খাওয়ানো হয়।
ব্রজগোপালের অবশ্য দাবি, ‘‘চিকিৎসায় অসুবিধা হয় বলে আগে আমি পোলিও দিতে বারণ করতাম। তবে এখন আর করি না। ওঁরা হয়তো পুরনো নিষেধের কথা ভেবেই বাধা দিয়েছিলেন।’’
আবার কি বাধা দেবেন? নিমাই ও স্বপনের জবাব, ‘‘পোলিও খেয়ে মেয়েদের শরীর ঠিক থাকলে সব টিকাই দেবো।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুষার আচার্য বলেন, ‘‘আশা করছি নিবিড় প্রচারেই এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy